ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুস্থদের গম ব্যবসায়ীর গুদামে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৩০ জুন ২০১৭

দুস্থদের গম ব্যবসায়ীর গুদামে

সংবাদদাতা, বদরগঞ্জ, রংপুর, ২৯ জুন ॥ বদরগঞ্জে বৃহস্পতিবার দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের ভিজিএফে ১৪৭ বস্তা গম এক ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে জব্দ করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবসায়ী নিখিল কু-ুর গুদাম থেকে ওই গম জব্দ করে নিয়ে যায়। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আসার খবর পেয়ে আগেই অন্তত ৪০০ বস্তা গমের মুখ খুলে মেঝেতে ঢেলে রেখে গুদামে তালা মেরে পালিয়ে যান নিখিল কু-ু। কালোবাজারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হতদরিদ্রদের নামে এসব গম কেনার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জানা গেছে, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে পৌরসভাসহ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৫৮ হাজার ৪০৫ দুস্থ ব্যক্তিকে ৫৫৬ মেট্রিক টন চালের বিপরীতে ৭৭৯ মেট্রিক টন ১২৭ কেজি গম সরবরাহ করা হয়। জানা যায়, ঈদের দুইদিন আগ থেকে হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের জন্য বিনামূল্যে বিতরণ করা গম স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। কোন কোন জনপ্রতিনিধি দুস্থ ব্যক্তিদের ভুয়া নাম ব্যবহার করে সরাসরি কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দালালদের মাধ্যমে বস্তাভর্তি গম বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে দুস্থদের নামে কোন কোন চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা ভুয়া নামের তালিকা তৈরি করে পিআইও কার্যালয়ে জমা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গম বিতরণের দিনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দালালদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরাসরি গম কিনে গোডাউনজাত করেন। আর ভিজিএফের নামে উত্তোলন করা দুস্থদের এসব গম কেনেন পৌর শহরের নিখিল কু-ু ও নিতাই কু-ুসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তারা আগে থেকে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অধিকাংশ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও তাদের লোকজনের মাধ্যমে ওই গম সংগ্রহ করেন। প্রায় এক হাজার বস্তা গম পৌরশহরের নিখিল কু-ুর গুদামে মজুদ করা হয়েছে মর্মে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানতে পায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে একদল পুলিশ নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে পিআইও গোলাম কিবরিয়া সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় একটি গুদামের ভেতর থেকে খাদ্য অধিদফতরের সিলমারা ১৪৭ বস্তা গম জব্দ করা হয়। পুলিশের অভিযানের আগেই ৪০০ বস্তা গমের বস্তার মুখ খুলে মেঝেতে ঢেলে রেখে পালিয়ে যান নিখিল কু-ু। এ কারণে মেঝেতে পড়ে থাকা গম জব্দ করতে পারেনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। তবে রাজনৈতিক প্রভাবে পাশের অপর একটি গুদামে গমভর্তি থাকলেও আদালত সেখানে অভিযান পরিচালনা না করেই ফিরে যায়। এ কারণে উপস্থিত সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হন। সরেজমিনে ওই গুদামের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ‘খাদ্য অধিদফতরের সিলমারা ৫০ কেজির অন্তত পাঁচ শতাধিক বস্তা গম সেখানে মজুদ করে রাখা হয়েছে। এর পাশে অপর আরেকটি গুদামেও গম রয়েছে বলে নিশ্চিত হন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। মুঠোফোনে ব্যবসায়ী নিখিল কু-ু বলেন, ‘কারও কাছ থেকে ফ্রি গম নেইনি। নগদ টাকা দিয়ে গম কিনেছি। এতে আমার অপরাধ কি? সরকারী গম সবাই তো কেনেন। এতে আমার কিনলে দোষ কোথায়। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামনাথপুর ইউনিয়নের একজন গ্রাম পুলিশ অভিযোগ করে বলেন, ‘একজন কার্ডধারীর নামে ১৩ কেজি গম বরাদ্দ ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ কেজির বস্তা খুলে ১৩ কেজি করে গম বাটখারা দিয়ে মেপে দেয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা তা না করে ৪টি কার্ডের বিপরীতে এক বস্তা করে গম দুস্থদের দিয়েছেন। আর এ সুযোগে ভুয়া নামের তালিকাভুক্ত কার্ডগুলো কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিধি মোতাবেক আদালত গঠন করে ১৪৭ বস্তা গম জব্দ করা হয়। অপর আরেকটি গুদামে গম থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই গুদামের চাবি না থাকায় তা জব্দ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল হক বলেন, গম কেনার সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য গুদামে মজুদ থাকা গম উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভিজিএফের গম ব্যবসায়ীর ঘরে থাকা দ-নীয় অপরাধ। আর কোথায় কোথায় কার কাছে কি পরিমাণ গম আছে তা জব্দ করার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×