ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বীপটি হস্তান্তরের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে থাকছেন প্রথমবারের মতো সফরে আসা এক চীনা প্রেসিডেন্ট

হংকং সফরে শি জিনপিং

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৩০ জুন ২০১৭

হংকং সফরে শি জিনপিং

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে হংকং পৌঁছেছেন। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে হংকংকে চীনের নিকট হস্তান্তরের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারই প্রথম কোন চীনা প্রেসিডেন্ট হংকং সফর করছেন। এএফপি। প্রথম আফিম যুদ্ধের (১৮৩৯-১৮৪২) পর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে হংকং ব্রিটেনের উপনিবেশে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কোলোন উপদ্বীপ ১৮৬০ সালে ও ১৮৯৮ সালে নিউ টেরিটোরিজ ৯৯ বছর লিজে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান হংকং দখল করে। ১৯৪৫ সালে ব্রিটেন আবার হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। ১৯৮০’র দশক শুরুর দিকে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে আলোচনা হয় হংকংকে নিয়ে। এর ফলে ১৯৮৪ সালে সাইনো-ব্রিটিশ যৌথ ঘোষণা দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে হংকংয়ের সার্বভৌমত্বের স্থানান্তর ঘটে। ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল (এসএআর) হিসেবে চীনের অধীনস্ত হয় হংকং। একদেশ দুইনীতির অধীনে হংকংয়ে চীন থেকে পৃথক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বজায় রয়েছে। সামরিক, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্র ব্যতীত হংকংয়ের স্বাধীন নির্বাহী, আইন প্রণয়ন ও বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। উপরন্তু হংকং একটি বিস্তৃত পরিসরে বিদেশী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম শি তিনদিনের সফরে হংকং গেলেন। তিনি এমন এক সময় হংকং গেলেন যখন আধা-স্বায়ত্তশাসিত এলাকাটি চীনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য জনমত ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শি তার স্ত্রী চীনা লোকসঙ্গীত শিল্পী পেং লিউয়ানকে সঙ্গে নিয়ে হংকংয়ের শেক ল্যাপ কক বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে বাদ্যের তালে তালে ছোট ছোট শিশুরা পতাকা উড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হংকংয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় ইতোমধ্যে গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের পুলিশ আটক করেছে। গণতন্ত্রপন্থী নেতা জশুয়া ওয়াং ও তরুণ আইন প্রণেতা নাথান লসহ অন্যান্য কর্মীকে বুধবার রাতে পুলিশ আটক করেছে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলের সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশের পর তাদের আটক করা হয়। সমাবেশস্থল থেকে পাথর ছুড়ে মারায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট শি’র হংকংয়ে অবস্থানকালে হোটেলের বাইরে জনসাধারণের চলাচলে তারা বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাদের আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ২০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। একটি থানার বাইরে তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটক করে। থানার বাইরে বিক্ষোভে জড়ো হওয়া অন্য কর্মীদের সঙ্গে অপেক্ষারত এক কর্মী ডেরেক ল্যাম বলেন, তারা চাচ্ছেন জশুয়া ওয়াং ও নাথান ল’র মতো ব্যক্তিদের রাস্তায় যাওয়া প্রতিরোধ করতে। সম্মেলনস্থালের চারপাশে বড় ধরনের ব্যারিকেড দিয়ে লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্ট শি’র নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপের অংশ হিসেবে কাজটি করেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ॥ চীনের গ্লোবাল টাইমস বৃহস্পতিবার দাবি করে, অস্ট্রেলিয়া চীনে গুপ্তচরবৃত্তি ও প্রযুক্তি চুরি করছে। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ বেজিংয়ের প্রত্যাখ্যান করার এক সপ্তাহ পর এ অভিযোগ করা হলো। চীনা জাতীয় নিরাপত্তা দফতরের এক কর্মী জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দারা ছদ্মবেশে চীনে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এমনকি তারা চীনে নাশকতামূলক কাজ করতেও উৎসাহিত করে যাচ্ছে। গোয়েন্দারা চীনের লোকজন ও অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। যাতে চীনে গুপ্তঘাতকের হুমকি বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটির প্রথম পাতায় জানান হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তারা চীনকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে ও চীনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির হাস্যকর অভিযোগ করছে। যদিও চীনের অভিযোগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চীনা পত্রিকার নিবন্ধটি অস্ট্রেলিয়ান সংবাদ মাধ্যমে এ মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসরণ করে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চীনের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করছে। যাতে অস্ট্রেলিয়ান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হস্তক্ষেপ করে ও রাজনৈতিক অনুদানের মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করছে। গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দারা অনেক চীনা নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করছে। যাতে তারা চীনা সম্প্রদায় ও দূতাবাস সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে। অনেককে আবার চীনে পাঠানো হচ্ছে বেশি বেশি তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। এতে আরও অভিযোগ করা হয়, অস্ট্রেলিয়া চীনা প্রযুক্তি চুরি ও চাইনিজ দূতাবাসের বিভিন্ন ডিভাইস স্থাপন করছে।
×