ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ অবনতি মানবপাচার নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৯ জুন ২০১৭

বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ অবনতি মানবপাচার নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ অবনতি ঘটেছে। এর কারণ হিসেবে পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের যথেষ্ট উদ্যোগী না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ শীর্ষক বার্ষিক এই প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছর বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-টু)। এবার এক ধাপ নামিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরের ‘নজরদারিতে থাকা দেশের’ তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেনেগাল, জাম্বিয়া, সৌদি আরব, আলজিরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরাক, ঘানা, হংকংসহ ৪৫ দেশ এই নজরদারির তালিকায় রয়েছে। আর চীন, রাশিয়া ও ইরানকে এবার রাখা হয়েছে মানবপাচার পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বাজে দেশের স্তরে, অর্থাৎ টায়ার থ্রিতে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ১৮৮ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান বিশ্বে ২ কোটি মানুষ মানবপাচারের শিকার। মানবপাচারের মহামারি বন্ধে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানবপাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি স্তর বা টায়ারে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে যেসব দেশ পাচার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে অর্থাৎ, ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন এ্যাক্টস এর ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার-ওয়ান-এ রাখা হয়। দ্বিতীয় স্তর বা টায়ার-টু কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- টায়ার-টু এবং টায়ার-টু ওয়াচলিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-থ্রি। তিন বছর টায়ার-টু ওয়াচ লিস্টে থাকার পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ টায়ার-টু তে উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারে ন্যূনতম মান পূরণ না হওয়ায় এবার বাংলাদেশকে পুরনো স্তরে ফিরিয়ে নেয়া হলো। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবপাচার এখনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসব অপরাধের তদন্ত করে দোষী মানবনম্পদ কর্মকর্তা, সীমান্তরক্ষী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্টা উদ্যোগী হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, ২০১৫ সালে যৌনকর্মী হিসেবে মানবপাচারের ১৮১ এবং শ্রম ক্ষেত্রে মানবপাচারের ২৬৫ ঘটনার তদন্ত হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু গত বছর তদন্তের সংখ্যা কমে যথাক্রমে ১২২ ও ১৬৮টি হয়েছে। মানবপাচারের অপরাধে ২০১৬ সালে মাত্র তিন ক্ষেত্রে শাস্তির তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল সাত, ২০১৪ সাল ছিল ১৮। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের জন্য যথেষ্ট জনবল না দেয়ায় এবং তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করার প্রবণতার কারণে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই মানবপাচারের মামলাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকার মানবপাচার বন্ধে আইন ও একটি কর্মপরিকল্পনার খসড়া করলেও আগের বছরের তুলনায় এক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং ফি আদায় না করে তা চাকরিদাতার কাছ থেকে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। পাশাপাশি পাচারের শিকার মানুষের সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা পাচারে জড়িত, তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, লেবার ইনস্পেক্টর ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
×