ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রশ্নোত্তর

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ জুন ২০১৭

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদকে ঘৃণা করে। দেশের অগ্রগতি ও নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বড় ধরনের অন্তরায়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গী দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে জঙ্গী দমনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের লিখিত উত্তরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু সফল অভিযানে শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী নেতাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হয় এবং বিপুল অস্ত্র ও গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়। হোলি আর্টিজানে হামলার পর এ যাবত যতগুলো অপারেশন পরিচালিত হয়েছে তার সবগুলো থেকেই জঙ্গীগোষ্ঠী আঘাত হানার পূর্বে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা নস্যাত করে দিয়েছে এবং জঙ্গী আস্তাসমূহ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সংসদ নেতা আরও জানান, জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ প্রো-এ্যাকটিভ পুলিশিংয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অভিযানসমূহ পরিচালনার ফলে বর্তমানে জঙ্গী তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং জঙ্গী দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলেম-ওলামা এবং ইমামদের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনসচেনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জঙ্গী সংগঠনগুলোর অনলাইনভিত্তিক প্রচারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজর রাখছে। এ জাতীয় প্রচারণার মাধ্যমে যাতে জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদী মতাদর্শের র‌্যাডিক্যালাইজেশন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় এ পর্যন্ত সাতটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গীবাদ এবং জঙ্গীবাদের অর্থায়নে জড়িতদের কার্যকরভাবে দমনের লক্ষ্যে সরকার সন্ত্রাস বিরোধী আইন/২০০৯ (সংশোধনী/ ১৩) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন/২০১২ প্রণয়ন করেছে। সরকারের আন্তরিকতা এবং বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সচেষ্ট সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করেছে। মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণে প্রারম্ভ রেখা অতিক্রম সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ ও স্থিতিশীল হতে হলে জাতিসংঘ তিনটি সূচক বিবেচনা করে থাকে। এ সূচকসমূহ হলো- (১) মাথাপিছু জাতীয় আয়, (২) মানবসম্পদ উন্নয়ন ও (৩) অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ দুটি সূচকে প্রারম্ভ রেখা অতিক্রম করেছে। অন্য সূচকটিতে বাংলাদেশ প্রারম্ভ রেখার বেশ কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। এ সূচকসমূহের নির্ধারিত মান বজায় রাখার জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ আর্থ-সামাজিক নীতি-কৌশল বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তিনি জানান, বর্তমানে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০১৬-২০২০-এর মাধ্যমে সরকার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনার মেয়াদে গড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ অর্থ-বছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ, দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ, অতি দারিদ্র্যের হার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ এবং তা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা বিবৃত হয়েছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, গত বছরের ১৪-১৫ অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট মিঃ শি জিন পিং-এর বাংলাদেশ সফর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ সফর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি জানান, গত চার দশক ধরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ অবকাঠামো বিনির্মাণে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি জানান, ৫০-এর দশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক যে ঐতিহাসিক ভিত রচনা হয়েছিল বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০১০ ও ২০১৪ সালে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের চীন সফরের মাধ্যমে সেই সম্পর্ক একটি মৌলিক, সমন্বিত এবং দূরদর্শী রূপ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সফর দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্ব সম্প্রসারণের ক্ষেত্র তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। এ সফর বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের স্মারক এবং দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে এক ঐতিহাসিক নবযাত্রার সূচনা করেছে।
×