ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রাজধানীতে এখনও উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৯ জুন ২০১৭

রাজধানীতে এখনও উৎসবের আমেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনাবিল আনন্দেই কাটছে পুরোটা সময়। ঈদ সবে শেষ হয়েছে। কিন্তু শেষ কী আর হয়? এখনও চলছে উদ্যাপন। চারপাশে উৎসবের আমেজ। ঈদের আনন্দ গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছেড়েছিলেন অনেকেই। গত কয়েকদিন তাই রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা। যারা রাজধানীতে ছিলেন, তারা মিলিত হয়েছেন আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে। এরপর থেকে শুধুই আনন্দ উল্লাস। ঈদের আনন্দ উপভোগের অন্যতম অনুষঙ্গ বেড়ানো। পরিবহন সমস্যা উপেক্ষা করে দর্শনার্থীরা হাজির হয়েছিলেন রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। অনেকে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখে, কেউবা পরিবারের সঙ্গে বাসায় বসে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের মিলন মেলায় খুচরা ব্যবসায়ীরাও তাদের রমরমা ব্যবসায় মেতে ওঠে। ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার জাতীয় উদ্যানে ছিল দিনব্যাপী হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত। চিড়িয়াখানা কিংবা জাতীয় উদ্যানই নয়, শাহবাগের শিশু পার্ক, শ্যামলীর শিশু মেলা, বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্ক, আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম আর নন্দন পার্কসহ সব বিনোদন কেন্দ্রেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। রাজধানীর সিনেমা হলগুলোতেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের খুশির জোয়ারে ভাসতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের। বন্ধুদের নিয়ে নান্দনিক স্থাপনা হাতিরঝিল, কুড়িল ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন নান্দনিক স্থাপনাগুলোতেও ছিল হাজারো মানুষের মিলনমেলায় মুখর। রাজধানীর নাটক সরণি (বেইলি রোড), শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, আজিজ সুপার মার্কেট সংলগ্ন খোলা জায়গা, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন ফুডকোর্টেও ছিল অন্যরকম ব্যস্ততা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে শিশুপার্ক খোলা ছিল। এদিনও হাজারো মানুষের ঢল নামে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অগ্রাধিকার দেয়া হয় এদিন। এদিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে ছিল তারুণ্যের উন্মাদনা। গিটার হাতে নিয়ে গান বাজনা আর হৈ-উল্লোড়ে সময় কাটিয়েছেন অনেকে। সন্ধ্যার পর শাহবাগ প্রজš§ চত্বরে বসে তরুণদের আড্ডা। নান্দনিক স্থাপনা হাতিরঝিল প্রকল্পও এলাকা ছিল লোকারণ্য। ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে। মধ্য রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণী পেশার মানুষ হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। বাড়তি পাওনা ছিল মিউজিক্যাল ওয়াটার ড্যান্সিং। সেই সঙ্গে লাল-নীল-সবুজ রঙের আলোর খেলা। হাতিরঝিল প্রকল্পের কর্মকর্তা মেজর সাদিক শাহরিয়ার বলেন, ঈদের চাঁদ রাত থেকে তিনবার করে মিউজিক্যাল ওয়াটার ড্যান্সিং শো হচ্ছে। তবে বুধবার থেকে প্রতিদিন রাত ৮টায় একবার করে এই শো হবে। প্রকল্প এলাকায় ওয়াটারবাস ও প্যাডেল বোটে চড়ে আনন্দ উপভোগ করেছেন। ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডম, নবীরনগরে মহাসড়কের পাশে নন্দন পার্কেও ছিল প্রচ- ভিড়। উত্তরা দিয়াবাড়ি ও আশুলিয়ার বিভিন্ন বিনোদন স্পট ছিল মুখর। ঈদে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল মিরপুরের চিড়িয়াখানা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষের ভিড়। ছায়াঘেরা সুন্দর নির্মল পরিবেশে পায়ে হেঁটে কখনও বাঘের খাঁচার সামনে, কখনও বানরের বাঁদরামি আবার কখনও শ্যাওলাযুক্ত পানিতে আধ-ডুবে থাকা কুমিরের নির্বিঘœ ঘুম এমনকি শত শত পশু-পাখির কা--কীর্তি দেখে ঈদের আনন্দে ভেসেছিলেন তারা। চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন কিছুটা কম থাকলেও মঙ্গল ও বুধবার দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল গড়ে দেড় লাখ। এ ভিড় আরও কয়েকদিন বিরাজ করবেÑএমনটাই আশা প্রকাশ করছেন তিনি। ছায়েদাবাদ থেকে দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছিলেন আকবর-মিতু দম্পতি। আকবর জানালেন নিজে আগে একাধিকবার এসেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরা কখনও আসেননি। তাই তাদের জন্যেই আবারও চিড়িয়াখানায় আসা। ছেলেমেয়ে দুটো হাতি ঘোড়া-ভাল্লুক-জিরাফ আর অন্য সব জন্তু জানোয়ার দেখে খুবই খুশি। গ্রীন রোডের আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকতার কারণে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর খুব একটা অবকাশ পান না। ঈদের দিনে বায়না মেটাতেই তাই চিড়িয়াখানাতেই এলেন তিনি। শাহবাগের কেন্দ্রীয় শিশুপার্কে শিশু-কিশোরদের সংখ্যা ছিল বেশি। মাত্রাতিরিক্ত ভিড় থাকায় রাইডে চড়তে না পারলেও শিশুর মতো দৌড়াদৌড়ি করে আনন্দে সময় কাটিয়েছে। মুগদাপাড়া থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে পার্কে এসেছিলেন মোহন গাজী। তিনি জানালেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা হয়ে গেল লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাইনি। কখন পাব বলতে পারছি না। অনেক শিশু এমনই অপেক্ষায় থাকা সত্ত্বেও মুখে ক্লান্তির ছাপ নেই। কেউ কেউ রাইডে চড়তে না পেরে পার্কের ভেতর ঘুরে-ফিরে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। পার্কের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, গত তিন দিন প্রচুর দর্শনার্থী এসেছিলেন। পার্কে ১১টি রাইডের মধ্যে ১০টি সচল আছে। রোমাঞ্চ চক্র নামে রাইড অকেজো হয়ে আছে। অপর রাইডগুলোর প্রতিটিতে প্রচ- ভিড়। তিনি বলেন প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা। রাইডের মূল্য ১০ টাকা। রাজধানীর ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডের (সাবেক শিশুমেলা) চিত্রও ছিল একই অবস্থায়। এখানকার রাইডে উঠতে অনেকক্ষণ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে শিশুদের। এই পার্কে ৪০টি রাইড রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি রাইড রয়েছে পরিবারের সবার চড়ার মতো। ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম, ওয়াটার কিংডম, মোটেল আটলান্টিসের মতো বিশ্বমানের বিনোদন কেন্দ্র জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কনকর্ড এন্টারটেইমেন্ট লিমিটেডের হেড অব মিডিয়া এ্যান্ড পিআর মাহফুজুর রহমান টুটুল বলেন, ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নানা আয়োজন রয়েৃেছ তাদের পার্কে। আশুলিয়ার আরেক বিনোদন কেন্দ্র নন্দন পার্কেও ছিল বিনোদনপ্রিয় মানুষের ভিড়। পার্কের হেড অব মার্কেটিং মেজবাহউদ্দিন প্রিন্স বলেন, অন্য বছরের মতো ঈদের দিন থেকে পার্কের ওয়াটার রোলার কোস্টার, কেবল কার, টালটি কার, আইসল্যান্ড, রেকারসহ বিভিন্ন রাইডে ওঠার জন্য ছিল দর্শনার্থীদের প্রচ- ভিড়। পুরনো ঢাকার লালবাগের কেল্লায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। লালবাগের কেল্লার টিকেট মাস্টার আব্দুল আলীম জানান, এই ঈদে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের দর্শনের জন্য কেল্লা খোলা রাখা হয়েছে। তবে এই সুযোগটি নিচ্ছেন অনেকেই। সাধারণত ঈদকে ঘিরে সিনেমা হল সরগরম হয়ে উঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার রাজধানীসহ সারাদেশে সিনেমা হলগুলোতে তিনটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে দুটিরই নায়ক শাকিব খান। ঈদের দিন সোমবার সারাদেশের ২ শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব’ এবং নুসরাত ফারিয়ার ‘বস টু’ চলচ্চিত্র।
×