ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন সুধীন দাশ, আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৯ জুন ২০১৭

চলে গেলেন সুধীন দাশ, আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য প্রয়াত সঙ্গীতজ্ঞ, নজরুল গবেষক ও স্বরলিপিকার সুধীন দাশের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নজরুল ইনস্টিটিউটে নেয়া হবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে বেলা ১১টায় নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পরে রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রয়াত সুধীন দাশের মেয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতু সুপর্ণা জনকণ্ঠকে এ খবরটি নিশ্চিত করেছেন। মিতু জানান, বাবা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন ধরে তার হজমেও সমস্যা হচ্ছিল। গত সোমবার রাতে তার বেশ জ্বর আসে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে নাপা ও প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। রাতে জ্বর কমেনি, মঙ্গলবার সকালে অবস্থার আরও অবনতি হয়। এক পর্যায়ে কথা বলাই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাবাকে প্রথমে কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিলে ডাক্তাররা জানান, আইসিইউ খালি নেই। পরে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তার বডি ফাংশন একের পর এক অকার্যকর হতে শুরু করে। পরে রাত ৮টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মিতু আরও জানান, বাবার মরদেহ এ্যাপোলোর হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে মরদেহ নেয়া হবে তাঁর মিরপুর বাসভবনে। সেখান থেকে ধানম-ির নজরুল ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পোস্তগোলা শ্মশানে তাকে দাহ করা হবে। সুধীন দাশের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বাংলা সঙ্গীতে সুধীন দাশের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, তার অবদানের কথা জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী সঙ্গীতে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। নজরুল সঙ্গীতশিল্পী শাহীন সামাদ বলেন, তার সর্বশেষ জন্মদিনে পরপর দুদিন তার পাশে থেকেই জন্মদিনটি উদ্যাপন করেছি। সে সময় ভাবিনি যে তার সঙ্গে এটাই হবে শেষ দেখা। নজরুল সঙ্গীতশিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক বলেন, কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে শ্রোতার কাছে শুদ্ধরূপে পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বরলিপি তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তিনিই করেছেন। সুরগুলো হারিয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু যে সময়টাতে হারিয়ে যাচ্ছিল সেই সময়টাতে সুধীন দা একা হাতে এই কাজটি করেছেন নিবিষ্ট মনে। নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা বলেন, ওস্তাদ জি’র আশীর্বাদ পেয়েছি, এ আমার জন্য পরম পাওয়া। তার শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সব সময় গর্বিত। তার প্রয়াণে একজন সত্যিকারের সঙ্গীতপ্রেমী গুণীজন হারাল বাংলাদেশ। সুধীন দাশের একমাত্র ছেলে গিটারিস্ট প্রয়াত নিলয় দাশ ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ঘনিষ্ট বন্ধু। আইয়ুব বাচ্চু বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে জন্মদিন পালনের স্মৃতি চোখে ভাসছে। নিলয়ের করা গানের সিডি আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন এটা যেন বাজারে প্রকাশ করি। হয়ত নিলয়ের সিডি বাজারে আসবে। কিন্তু কাকু দেখে যেতে পারলেন না। সুধীন দাশের ছাত্রী মেহরীন বলেন, মনের গহীন কোনে তার জন্য সারাটা জীবন শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থাকবে। তিনি নেই, এটা সত্যি, কিন্তু তিনি থাকবেন আমার স্মরণে, কর্মে আর পথচলায়। সুধীন দাশের আরেক ছাত্রী সঙ্গীতশিল্পী ছন্দা চক্রবর্তী বলেন, শিল্পী সুবীর নন্দী ও আমার গাওয়া নজরুল সঙ্গীতের একটি ডুয়েট এ্যালবাম প্রকাশ হয় গত ২৪ মে রাজধানীর একটি রেস্তরাঁয়। স্যারের মৃত্যুর আগে এ-ই শেষ কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া। এ্যালবামটি তার নামেই উৎসর্গ করা হয়েছিল। এটা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা ও মুহূর্ত। কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়ের বাগিচাগাঁওয়ে ১৯৩০ সালে জন্মেছিলেন সুধীন দাশ। তাঁর জীবনের পুরোটা সময় গানের পেছনে ব্যয় করেছেন। সুর করেছেন, সঙ্গীত পরিচালনা ও গবেষণার কাজটিও করেছেন। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। বাবা নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশের আদর-স্নেহ ছাড়া বড় ভাইবোনদের আদরও কম পাননি। সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসার বীজ বপন করেছিলেন তারই দাদা সুরেন দাশ। তার হাতেই সুধীন দাশের হাতেখড়ি। পাকিস্তান বেতারে ১৯৪৮ সালের ৮ মার্চ দুটি গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বেতারে সুধীন দাশের গান গাওয়া শুরু। ছেলেবেলা থেকে নজরুলের গানের আদি গ্রামোফোন রেকর্ড শুনে শুনে নজরুলসঙ্গীত আত্মস্থ করেছিলেন তিনি। নানান ঘটনার পর ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে ২৫টি স্বরলিপি নিয়ে নজরুল স্বরলিপির প্রথম খ-টি প্রকাশ করে নজরুল একাডেমি। শুদ্ধ স্বরলিপি প্রকাশের পরপরই সুধীন দাশকে নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় চারপাশে। সুধীন দাশ রেখে গেছেন স্ত্রী নীলিমা দাশ, মেয়ে মিতু সুপর্ণা এবং অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীকে।
×