ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঘোরপ্যাঁচে অস্ট্রেলিয়া!

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৯ জুন ২০১৭

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঘোরপ্যাঁচে অস্ট্রেলিয়া!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে নিয়ে একসঙ্গে একাধিক ভাবনায় পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। একদিকে বাংলাদেশে খেলতে আসবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের কন্ডিশনে বাংলাদেশের বিপক্ষে কেমন করবে। সেই ভাবনা রয়েছে। আবার শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের সেরা ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ সফরে পাঠানো যাবে কিনা, সেই ভাবনাও আছে। তাতে করে আবার বাংলাদেশ সফরই নাকি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, সেই সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে ঘোর ভাবনাতেই পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসবে অস্ট্রেলিয়া। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে। আগামী ১৮ আগস্ট বাংলাদেশে সফরে আসবে অস্ট্রেলিয়া। ২২ ও ২৩ আগস্ট ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুইদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে তারা। ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। চার সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে দু’দল। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে দলের সাফল্য নিয়ে আছে ভাবনা। ওপেনার উসমান খাজাই যেমন সেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, ঘরের মাঠে নিজেদের চেনা কন্ডিশনে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তাই এই সফরকে কঠিন বলেই মানছেন এই অসি ওপেনার, ‘নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর দল। ভারত যেমন নিজেদের চেনা কন্ডিশনে ভাল খেলে, বাংলাদেশ দলও তেমন। বাংলাদেশের উইকেট অনেকটা ভারতের কাছাকাছি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হারানো বেশ কঠিন হবে।’ টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত চারবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচের চারটিতেই জয়ের দেখা পেয়েছে অসিরা। এর মধ্যে তিনটিতে জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে। দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও টেস্টে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দু’দল। পরিসংখ্যান ও শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশকে নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক অস্ট্রেলিয়া। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর করবে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে ইতিমধ্যেই ১৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের দলে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, নাথান লিওনের মতো পরীক্ষিত ক্রিকেটার। তবুও বাংলাদেশকে হাল্কাভাবে নিচ্ছে না অসিরা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ টেস্টে মাঠে নেমেছেন উসমান খাজা। এর মধ্যে পাঁচ সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন আটবার। এরপরও বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, ‘বাংলাদেশের উইকেটে আমাদের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ ভারতের উইকেট ও বাংলাদেশের উইকেট একইরকম। এটা আমার জন্য কঠিন সফর হবে। এর আগে আমি কখনও বাংলাদেশে গিয়ে খেলিনি। তাই ওদের অপরিচিত কন্ডিশনও আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ অসিদের নিয়মিত জাতীয় দলের ক্রিকেটার নিয়ে হবে কিনা সেই ভাবনাও আছে। কারণ আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটারদের মধ্যে চলছে ঝামেলা। যে ঝামেলা না মিটলেই ঝামেলা হবে। অস্ট্রেলিয়ার সেরা দল বাংলাদেশে আসবে কিনা তা নিয়েও আছে সংশয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরই নাকি আবারও ভেস্তে যায়, সেই শঙ্কাও রয়েছে। ২০০৬ সালে সেরা দলই এসেছিল টেস্ট খেলতে। কিন্তু ১১ বছর পরের এই অস্ট্রেলিয়া দলটি তারকায় খচিত থাকবে কিনা, সংশয় রয়েই যাচ্ছে। দেখা দিয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। কারণ বেকার হয়ে যেতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ক্রিকেটাররা। যদি বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের চুক্তিই না থাকে তাহলে আর সিরিজ খেলবে কিভাবে? খুব কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে। কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়ে শীর্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার যে দ্বন্দ্ব চলছে, সেটি মিটে না গেলে প্রায় ২০০ ক্রিকেটারের বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। এই সঙ্কটের সমাধান না হলে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর নিয়ে দেখা দেবে অনিশ্চয়তা। সেরা ক্রিকেটারদের অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে পারবে কি না তাও নিশ্চিত নয়। ক্রিকেটাররা বেশ কিছুদিন ধরেই বেতন বৃদ্ধি ও বোর্ডের রাজস্বের একটা অংশ দাবি করে আসছেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) অবশ্য খেলোয়াড়দের এই দাবির ব্যাপারে শুরু থেকেই নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সংগঠন (এসিএ) শুরু থেকে শক্ত অবস্থানে থেকে দর-কষাকষি করে এলেও তা পাত্তা দেয়নি সিএ। এরই মধ্যে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ৩০ জুন শেষ হবে চুক্তির মেয়াদ। এখন যা অবস্থা তাতে ১ জুলাই নতুন চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের আসার সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে তাই সব ক্রিকেটার বাদ পড়বেন। আর তাহলে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ ২০০ ক্রিকেটার বেকার হয়ে পড়বেন বলে মন্তব্য করেছেন এসিএ’র সভাপতি গ্রেগ ডায়ার, ‘১ জুলাই থেকে খেলোয়াড়দের বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কা খুব বেশি। বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে আমরা বোর্ডকে সবধরনের সহায়তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের এই অস্থিরতার কারণে আগামী আগস্টে বাংলাদেশ সফরের দল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা না হলে এই সফরে স্মিথ-ওয়ার্নাররা আসবেন কি না, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। যদিও আগস্টে বাংলাদেশ সফরের আগে এখনও বেশ সময় পাবে দুই পক্ষ। কিন্তু ঝামেলা না মিটলেই বিপদ। বাংলাদেশ দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের যেমন আছে ভাবনা, সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটাররা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে খেলতে আসবেন কিনা সেই ভাবনাও দেখা দিয়েছে। তাতে করে বাংলাদেশকে নিয়ে ঘোর ভাবনাতেই পড়েছে অস্ট্রেলিয়া।
×