ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে জমির সংস্থান করে দিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৯ জুন ২০১৭

সৌরবিদ্যুত উৎপাদনে জমির সংস্থান করে দিচ্ছে সরকার

রশিদ মামুন ॥ সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের জমির সংস্থান করে দিতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য দুই হাজার একর জমি চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। এসব জমিতে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সোলার পার্ক নির্মাণ করা হবে। জমির সঙ্গে গ্রিড লাইনও নির্মাণ করে দেয়া হবে। বেসরকারী উদ্যোক্তারা শুধু সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতায় দেশে সৌর বিদ্যুতের গ্রিড সংযুক্তির ব্যর্থতার কারণে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য উদ্যোক্তাদের জমির সংস্থান করে দিচ্ছি। শীঘ্র এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে। বেসরকারী উদ্যোক্তারা জমির সংস্থান করতে না পারায় সৌর বিদ্যুত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকার জমি এবং গ্রিড লাইন করে দিলে অর্ধেক দামে সৌর বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি। সম্প্রতি ভারতে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের একটি দরপত্রে দেখা গেছে প্রতি ইউনিটের দর পড়ছে ৩ দশমিক ৮৭ সেন্ট। বাংলাদেশে এখন যা গড়ে ১৪ থেকে ১৬ সেন্টের মধ্যে। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আকাশে দিনের খুব বেশি সময় সূর্যের উপস্থিতি থাকার কথাও নয়। তারপরও দুই দেশে সৌর বিদ্যুতের দামের পার্থক্য নিয়ে দীর্ঘ দিনই আলোচনা হচ্ছে। ভারত সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমি এবং গ্রিড লাইন সরকার করে দেয়। এরপর দরপত্র আহ্বান করে শুধু প্ল্যান্ট নির্মাতাকে নির্বাচন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দেখা যায় কেবল গ্যাস ছাড়া অন্য সব জ্বালানির চেয়ে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। যেহেতু আকাশে সূর্য থাকলেই কেবল সৌর বিদ্যুত পাওয়া যায় সেজন্য সোলার বিদ্যুতে বেজলোড পাওয়ার স্টেশন চালানো যায় না। দিনের নির্দিষ্ট সময় এই বিদ্যুত পাওয়া যায়। দেশে এক শ’ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতের জন্য তিন শ’ ৫০ একর জমি প্রয়োজন হয়। চরাঞ্চল বা অনাবাদি জমিতেই সোলার বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। দেশে এলাকাভেদে এই পরিমাণ জমির দাম সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত দরপত্রের বাইরে গিয়ে সরাসরি দরকষাকষিতে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়েনের জন্য অনেক কোম্পানি আগ্রহপত্র দিচ্ছে বিদ্যুত বিভাগে। বিদ্যুত বিভগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেলে এসব প্রকল্প যাচাই -বাছাই করার জন্য একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে একটি সেলও রয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই সেল আইপিপির ২০ প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করছে। এর বাইরে সরকারী আরও ১২টি প্রকল্প যাচাই -বাছাই করছে সেলটি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেল সূত্র জানায়, ৩২ প্রকল্পের মধ্যে ১৬ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯৭৫ মেগাওয়াট। মোট তিনটি প্রকল্পের এখন পর্যন্ত পিপিএ (বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি) সই হয়েছে যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৮২ মেগাওয়াট। এলওআই ইস্যু করা হয়েছে ৫টি প্রকল্পের এর মোট ক্ষমতা ৪৫৫ মেগাওয়াট। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে যার উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫ মেগাওয়াট। প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি দাম নির্ধারণ অনুমোদন করেছে আরও একটি ৮ মেগাওয়াট প্রকল্পের। আর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি ৬টি প্রকল্প যাচাই -বাছাই করছে। যেসব প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩৯৫ মেগাওয়াট। সূত্র জানায়, সর্বশেষ টেকনাফে ২০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্পের জন্য বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহর সুতিয়াখালি ৫০ মেগাওয়াট, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ৩২ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্রের জন্য বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়া ৪টি কোম্পানিকে চুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো রংপুর ৩০ মেগাওয়াট, কক্সবাজার ২০ মেগাওয়াট, গাইবান্ধা ২০০ মেগাওয়াট এবং সিলেটের গোয়াইনঘাট ৫ মেগাওয়াট। এই চারটি কোম্পানিই দেশী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিদেশী কোন কোম্পানি যৌথ উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে।
×