ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের রিফিউজি ক্যাশ কার্ডে উপকৃত হচ্ছে লেবাননীরা

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৯ জুন ২০১৭

জাতিসংঘের রিফিউজি ক্যাশ কার্ডে উপকৃত হচ্ছে লেবাননীরা

লেবাননী মুদি দোকানদার আলি খিয়ামি তিন বছরের মধ্যে তার দোকানে ছয় জন স্টাফ নিয়োগ দিয়েছেন, সম্পত্তি কিনেছেন এবং তার ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। সিরীয় শরণার্থীদের জন্যে জাতিসংঘের ডেবিট কার্ডের কল্যাণে তার দোকানের বিক্রি বেড়েছে, বদলে গেছে তার ভাগ্য। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় বাস্তুচ্যুত সিরীয় নাগরিকদের প্রত্যেককে মাসে ২৭ মার্কিন ডলার করে দেয়া হচ্ছে। শরণার্থীরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ইলেক্ট্র্রনিক কার্ডের মাধ্যমে এই অর্থ ব্যবহার করে। আর এর মাধ্যমে শরণার্থী যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি লেবাননের দোকান মালিকরা। খিয়ামি বলেন, ‘জাতিসংঘের এই কর্মসূচী আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমি বৈরুতে একটি এ্যাপার্টমেন্ট কিনেছি এবং আমার তিন সন্তানের কলেজের খরচ যোগাতে পারছি।’ ডব্লিউএফপিতে নিবন্ধন করার পর থেকে খিয়ামির ব্যক্তিগত আয় অনেক বেড়ে গেছে। প্রতি মাসে তার আয় ২ হাজার মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১০ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমি বছরে প্রায় ৫ লাখ লেবাননী পাউন্ড মালামাল বিক্রি করতে পারতাম। এখন প্রতি বছর আমার বিক্রির পরিমাণ ত্রিশ কোটি লেবাননী পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে।’ বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে তার দোকানের মতো ৫শ’টি দোকান জাতিসংঘের ডব্লিউএফপি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। ৪০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ লেবাননে পার্শ্ববর্তী সিরিয়ার প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১১ সাল থেকে বাড়িঘর ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে তারা লেবাননে পালিয়ে আসে। সিরীয় শরণার্থীদের ঢেউ লেবাননের পানি, বিদ্যুত ও স্কুল সংকটকে আরও তীব্র্রতর করেছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সিরীয় সংকট আনুমানিক ২ লাখ লেবানিজকে দারিদ্র্যের হুমকির মধ্যে ফেলেছে। জাতিসংঘের এই প্রোগ্রামের আওতায় সাত লাখ সিরীয় শরণার্থী উপকৃত হয়েছে। শরণার্থীদের কারণে লেবাননের অর্থনীতির ওপর যে চাপ ছিল, তা কিছুটা কমেছে। ডব্লিউএফপি প্রোগ্রামের আওতায় শরণার্থীরা লেবাননের দোকান থেকে কেনাকাটা করায় দেশটির অর্থনীতিও কিছুটা চাঙ্গা হচ্ছে। ২০১২ সালে প্রোগ্র্রামটি শুরুর পর থেকে সিরীয় শরণার্থীরা লেবাননের নিবন্ধিত অংশীদার দোকানগুলো থেকে ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য ক্রয় করেছে। উম ইমাদ নামের এক সিরীয় শরণার্থী খিয়ামির দোকানের নিয়মিত খদ্দের। এই শরণার্থী নারী জানান, এ কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার সুযোগ তাকে পূর্ববর্তী ফুড স্ট্যাম্প প্রোগ্র্রামের চেয়ে আরও ‘স্বাধীন’ করেছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমার সংসারের প্রয়োজনীয় সব পণ্য আমি কিনতে পারি।’ আলি সাদেক হামজেহ্ (২৬) কয়েকটি ডব্লিউএফপি অংশীদার দোকানের মালিক। লেবাননের বেকা ভ্যালির কাছে তার দোকানগুলো অবস্থিত। এখানকার কৃষি জমিতে কয়েকটি শরণার্থী শিবির রয়েছে। তার বিক্রি বহুগুণ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, তার খদ্দেরদের প্রায় ৬০ শতাংশই সিরীয় শরণার্থী। তবে তিনি কমমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে নতুন নতুন লেবানিজ খদ্দেরকে আকৃষ্ট করেছেন। এমনিভাবে জাতিসংঘের ডব্লিউএফপি প্রোগ্রামের আওতায় ঘুরে গেছে বহু লেবানিজ দোকানীদের ভাগ্য। Ñএএফপি
×