ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার হামলা বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৯ জুন ২০১৭

সাইবার হামলা বাড়তে পারে

ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী বহুসংখ্যক কম্পিউটার মঙ্গলবার সাইবার হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। এ হামলার সঙ্গে এপ্রিলে ঘটে যাওয়া সাইবার হামলার মিল রয়েছে। এ হামলায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কোন টুল ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দারা নিশ্চিত হতে পারেননি। নিউইয়র্ক টাইমস ও টেলিগ্রাফ। রাশিয়ার বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি রোজনেফট, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক ও শিপিং প্রতিষ্ঠান মার্স্ক এ সাইবার হামলা টের পাওয়া গেছে। সাইবার হামলার পরপরই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এটিএম বুথগুলো অচল হয়ে পড়ে। চেরনোবিল পরমাণু স্থাপনায় কর্মরত স্টাফদের তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা কম্পিউটারের সহায়তা ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য বলা হয়। কারণ সাইবার হামলার ধাক্কায় তাদের কম্পিউটারগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। ইউরোপ, আমেরিকা ও এমনকি অস্ট্রেলিয়ারও বড় কোম্পানিগুলোতে হামলার প্রভাব পড়ে। এ হামলার কারণ কি কতদূর পড়বে এর প্রভাব সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। এ হামলার প্রথম শিকার হয় ইউক্রেনের সরকারী ও বাণিজ্যিক কম্পিউটার সিস্টেম। ১৯৯৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ইউক্রেন নিজস্ব সংবিধান চালু করার দিনটি দেশটিতে জাতীয় ছুটি হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে। সেই ছুটির ঠিক একদিন আগে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে। মূল হামলা ইউক্রেনেই হয়েছে। তবে এর আনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি অনুভূত হয়েছে অনেকগুলো দেশে। ইউক্রেনের সরকার মঙ্গলবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়, কিছু স্থানীয় ব্যাংক এবং মেট্রো সিস্টেমে সাইবার হামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। পাশাপাশি কিছু ইউরোপী কোম্পানিতেও হামলার প্রভাব পড়েছে। আক্রান্ত হয়েছে কিছু রুশ কোম্পানিও। রুশ গণমাধ্যম আরবিসি জানিয়েছে, প্রায় ৮০ হাজার কর্মী কাজ করে এরকম একটি মাইন কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমও এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন বহুজাতিক ল’ ফার্ম ডিএলএ পাইপার সাইবার হামলা টের পেয়েছে। পেনসিলভেনিয়ার স্বাস্থ্যসেবা দফতরসহ কয়েকটি হাসপাতালও এ হামলার অনুভূত হয়েছে। সাইবার হামলার কথা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার চকোলেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাডবেরি ও কান্টাস এয়ারলাইন্স। মার্কিন সরকার কম্পিউটার সিকিউরিটি ব্যবস্থা আপডেট করা ও সাইবার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কম্পিউটারগুলোকে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ ধরনের হামলা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তার জবাব দেয়া হতে পারে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির অত্যাধুনিক হ্যাকিং টুল এ বছর এপ্রিল মাসে অনলাইনে চুরি যাওয়ার পর সময় সময় সিরিজ সাইবার হামলা হয়েছে। শ্যাডো ব্রোকার্স নামে হ্যাকারদের একটি গ্রুপ অনলাইন থেকে ওই টুলগুলো চুরি করার দাবি করেছিল। ওয়ানাক্রাই নামে একটি গ্রুপ ইটার্নাল ব্লু টুলটি ব্যবহার করে গত মাসে বিশ্বব্যাপী হ্যাকিং চালিয়েছিল। হ্যাকিং করার পর ডিজিটাল ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছিল। এবারের হ্যাকিংয়েও একই টুল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে কারা এটি করেছে তা জানা যায়নি। ওয়ানাক্রাই বা অন্য কোন গ্রুপ ওই টুল ব্যবহার করেই হ্যাক করেছিল কি না সেটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি এখনও স্বীকার করেনি। তবে কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, এনএসএর উচিত তারা যে অস্ত্র তৈরি করেছে তার আক্রমণ থেকে রক্ষা বাকি বিশ্বকে সহায়তা করা। কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান আইডিটির গ্লোবাল চিফ ইনফরমেশন অফিসার গোলান বেন অনি বলছেন, এনএসএর এখন উচিত নিরাপত্তা ইস্যুতে এ্যাপল বা মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করা। ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা আরও বেড়ে যাতে পারে বলে বেন অনি মার্কিন ফেডারেল কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
×