ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আউটসোর্সিংয়ে তারুণ্য

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ২৯ জুন ২০১৭

আউটসোর্সিংয়ে তারুণ্য

আউটসোর্সিং কর্মবাজারে প্রবেশ না করতে পারা লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর সামনে আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে বদলে যাচ্ছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর ভাগ্য। এ থেকে মাসে ন্যূনতম ত্রিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দু-তিন লাখ টাকা উপার্জনের পথ খুলে গেছে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত মোট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ১ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে সফলভাবে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছেন ৪৮৫ জন। ঘরে বসে স্বাধীনভাবে ঝুঁকিহীন কাজ করার সুবিধার কারণে নারীদের জন্য এই ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং ক্রমশ প্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব। এবারের জাতীয় বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। আউটসোর্র্সিংয়ে বিশেষ প্রণোদনার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। জনশক্তির তুলনায় দেশে শ্রমবাজার অপর্যাপ্ত থাকায় বেকারত্ব দূর করতে এবং আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার এ খাতে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। ২০০৯ সালে এ সেক্টরে ১৫% ভ্যাট ছিল। সরকার সেটা প্রথম দফায় কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করে। এবারের বাজেটে ডেটা এন্ট্রি, ডেটা প্রসেসিং, কল সেন্টারসহ পুরো বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি স্থাপনায় ভ্যাট মওকুফ করাসহ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষণগুলোর মান বৃদ্ধিতে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়েরই পোশাকি নাম আউটসোর্সিং। এখন স্বাধীনচেতা, কর্মঠ এবং উচ্চাভিলাষী তরুণদের মধ্যে এটি প্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে ঘরে বসে অর্থোপার্জনের এ কাজটি বর্তমান বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থানে চলে এসেছে। আর এ কাজের জন্য কেবল ইন্টারনেট সংযোগবিশিষ্ট একটি ল্যাপটপ থাকলেই হলো। কয়েক বছর হলো বাংলাদেশের তরুণরা সফলভাবে এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। দেশের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার তরুণ মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আউটসোর্সিংয়ে। অনিয়মিতভাবে যুক্ত আছেন আরও অনেকে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইসিটিতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারত, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা ব্যাপক আগ্রহের সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করছেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা এখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পথ হাঁটছেন। আগামী দিনে এই তরুণরাই দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবেন। ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সব বন্ধ দরজা। এখন বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই দেশে উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশের আউটসোর্সিং কর্মীদের দক্ষতা অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং সে অনুসারে সরকার এ খাতে প্রণোদনাও দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছর বলেছিলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের তরুণদের সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। নিজেদের উদ্যোগে তারা আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, আইটি কোম্পানি গড়ে তুলতে পারে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবীর বাইরেও যে সম্মানজনক পেশা রয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হয় না।’ বলাবাহুল্য নতুন জনশক্তির কাজের বিশাল ক্ষেত্র হচ্ছে আউটসোর্সিং। আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য তারুণ্য আজ বেছে নিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। আশা করা যায় এ খাতে অচিরেই বিপুলসংখ্যক দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে।
×