ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের ছুটি শেষেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ২৮ জুন ২০১৭

ঈদের ছুটি শেষেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ফাঁকা। অধিকাংশ বাজারে কাঁচাপণ্যের দোকানগুলো এখনো তেমন একটা চালু হয়নি। বেশির ভাগ মুদি দোকানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কাওরান বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাচারে বেশিরভাগ শাক-সবজির দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে টমেটো ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মুদি পণ্যের দামও কমছে না। প্রতি লিটার তরল দুধ ৭০-৭৫ টাকা, প্যাকেটকৃত পোলাওর চাল প্রতিকেজি ১১০ এবং চিনি ৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার, শান্তিনগর বাজার এবং মুগদা বড় বাজার ঘুরে বাজার পরিস্থিতি ও নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সবজির পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত কাওরান বাজারের দোকানগুলো ফাঁকা রয়েছে। এসব দোকানের বিক্রেতারা ঈদের ছুটি উপভোগ করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। যারা ঢাকায় আছেন তারাও পরিবারবর্গ নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জসিম পাটোয়ারি জনকণ্ঠকে বলেন, পাইকারদের ক্রেতা খুচরা বিক্রেতারা ঢাকায় নেই। বেপারীরা পণ্য আনছে না। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ছুটি উপভোগ করতে বাড়িতে চলে গেছেন। এ অবস্থায় ক্রেতাশূণ্য মার্কেটে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা বাজারগুলোতে ক্রেতা নেই। ঈদের ছুটি শেষ হলেও বাজারগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা নেই। এতে করে দু’একজন ব্যবসায়ী দোকান চালু রাখলেও তেমন বিক্রি-বাট্রা করতে পারছেন না। ফলে ক্রেতা ফাঁকা বাজারে বিক্রেতাদেরও দেখা মিলছে না। মাছ ও মাংসের বাজারেও ক্রেতা নেই। মাছ ব্যবসায়ীদের দু’একজন দোকান চালু রাখলেও ক্রেতা পাচ্ছে না। ফলে লোকসান হতে পারে এই আশঙ্কায় দোকানপাট বন্ধ করে বাসায় ঈদ উপভোগ করছেন এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কাপ্তান বাজারের সবজি বিক্রেতা খলিল বলেন, মাল যা আনছি তাই বেচা যায় না। দোকান খুইল্যা লাভ কি? তাই সবাই বাসায় ঘুমাইতেছে। এদিকে, ঈদের ছুটিতে মুদি পণ্যের দাম বাড়েনি। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি এবং অন্যান্য পণ্য আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ঈদের আগের দিন গরু, খাসি ও মুরগির মাংস বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে। ঢাকায় বিশেষ কিছু দোকানে ৫৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে গরুর মাংসের দাম। এ নিয়ে ক্রেতাদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মুগদা ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা আহমেদ তোহা জানালেন, ঈদের আগের দিন মাংস ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়েছেন। বাজার মনিটরিং না থাকায় এ নিয়ে ক্রেতাদের বেশি দাম দেয়া ছাড়া আর কোন গতন্তর ছিল না। তিনি বলেন, ঈদের পরও সেই দাম নেয়া হচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে এখনই জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছের দোকান খুলেছেন মাত্র তিন ব্যবসায়ী। মুরগি তুলেছেন মাত্র একজন। তারা জানান, ঈদের পরে ক্রেতা থাকে না বলে বেশির ভাগ দোকানদার ঢাকায় থাকলেও দোকান খোলেন না। তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ফকিরাপুল বাজারের মাছ বিক্রিতা জামাল বলেন, ঈদের কারণে মাছের যোগান কম। পাইকারি বাজারে মাছ নেই বললেই চলে। আমদানি কম হওয়ায় দাম একটু বেশিই পড়ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে সব কিছুর চাহিদাও বাড়লে বেচাবিক্রি ভাল হবে। এদিকে, ঈদে ঢাকায় থেকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিবাহিত-অবিবাহিত ব্যাচেলর, ভ্রাম্যমাণ লোকজন এবং নিম্নআয়ের ভাসমান মানুষেরা। অন্য দোকানের পাশাপাশি প্রায় ৯৯ ভাগ রেষ্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় তাদের খাওয়া-দাওয়ায় মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। আর মহল্লাবাসীর কষ্ট হচ্ছে দোকানগুলো বন্ধ থাকায়। এ প্রসঙ্গে পুরাণ ঢাকায় ম্যাচে বসবাসরত সুজন জানালেন, রেষ্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় খাওয়া-দাওয়ায় মারাত্মক কষ্ট হচ্ছে। বাধ্যহয়ে দূরের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ম্যাচের বুয়া ছুটিতে গেছেন-তিনি ফিরে আসলে খাওয়ার কষ্ট কিছুটা দূর হবে।
×