ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তারকা ক্রীড়াবিদদের ঈদ-ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৫ জুন ২০১৭

তারকা ক্রীড়াবিদদের ঈদ-ভাবনা

রুমেল খান ॥ ‘আজি সকল ধরা মাঝে বিরাট/মানবতা মূর্তি লভিয়াছে হর্ষে/আজিকে প্রাণে প্রাণে যে ভাব জাগিয়েছে/রাখিতে হবে সারা বর্ষে/এই ঈদ হোক আজি সফল ধন্য/নিখিল-মানবের মিলন জন্য/ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ’। ... বছরে দু’বার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মেতে ওঠেন ঈদের বিমলানন্দে। ক্রীড়াঙ্গনের ক্রীড়াবিদরাও এর বাইরে নন। দেশের ১১ জনপ্রিয় খেলার ১১ জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকার এবারের ঈদুল ফিতরের কর্মপন্থা, পরিকল্পনা কিÑ সেটি জানতে কি পাঠক কৌতূহলী? তাহলে চলুন মিটিয়ে নেয়া যাক সে কৌতূহল। আরিফুল ইসলাম (ফুটবল) ॥ স্টপার ব্যাক পজিশনের ফুটবলার। শীর্ষ ঘরোয়া ক্লাবগুলোর প্রায় সবকটিতেই খেলেছেন। খেলেছেন জাতীয় দলেও। ৩০ বছর বয়সী সুর্দশন এই ফুটবলার জনকণ্ঠকে তার ঈদ-ভাবনা জানান এভাবে, ‘বরাবরের মতো এবারও দেশের বাড়ি বরিশালে ঈদ করব। দুই বছর হলো বিয়ে করেছি। তাই এবারের ঈদে আমার স্ত্রীও থাকবে।’ ঈদের কেনাকাটা সেভাবে করতে পারেননি আরিফুল, ‘আমার শাশুড়ি অসুস্থ। চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এসেছেন। ফলে ঈদের শপিং সেভাবে করা হয়নি। বলতে পারেন আংশিক।’ ঈদের সালামি নিয়ে আরিফুলের স্মৃতিচারণ, ‘ছোটবেলায় ঈদে অপেক্ষায় থাকতাম বাবা কখন সালামি দেবেন। আর এখন আমি বাবা-মায়ের জন্য ঈদের কেনাকাটা করি। এখন সালামি পাই না, বরং ছোটদের দিতে হয়।’ * সারোয়ার হোসেন (হকি) ॥ জাতীয় হকি দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় সারোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি নাটোরে। প্রতিবছরের মতো এবারও সেখানেই ঈদ পালন করবেন। সেখানে আছেন তার বাবা-মা-চাচা-চাচী-দাদী। ঈদের শপিং করেছেন? ‘করেছি। তবে নিজের জন্য নয়। পরিবারের সবার জন্য।’ ঈদের দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তরুণ এই খেলোয়াড় জানান, ‘ঈদের দিন নামাজ পড়বো। তারপর ঘুরতে বের হব। বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে জম্পেশ আড্ডা মারব। বাসায় ফিরব গভীর রাতে।’ ঈদের সালামি প্রসঙ্গে সারোয়ারের হাসিমাখা আক্ষেপ, ‘আগে প্রচুর সালামি পেতাম। কিন্তু এখন সেই দিন শেষ রে ভাই।’ * জহুরা আক্তার নিশি (ভারোত্তোলন) ॥ ২০১৬ এসএ গেমসে মেয়েদের ভারোত্তোলনের ৭৫ কেজি+ ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ভারতের সুশীলা পানোয়ার। কিন্তু ডোপ টেস্টে ধরা পড়ায় তার স্বর্ণপদক কেড়ে নেয়া। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার ইশানি কালথানাত্রি স্বর্ণ ও নেপালের তারা দেবী পান রৌপ্যপদক। আর চতুর্থ হওয়া বাংলাদেশের জহুরা আক্তার নিশি পান তাম্রপদক। তখন থেকেই আলোচনার পাদপ্রদীপে চলে আসেন নিশি। সুদর্শনা এই ভারোত্তোলক এবার ঈদ করবেন কেরানীগঞ্জে, মা-ভাই-ভাবীদের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি কেরানীগঞ্জে চলে এসেছি ছেলে নিশাদ ও মেয়ে নওশীনকে নিয়ে (বিয়ে : ২০০৫, স্বামী ইতালি প্রবাসী চাকরিজীবী)। খুব মজা করে সবার জন্য ঈদের শপিং করেছি। গত ঈদে ক্যাম্পে থাকায় এই মজাটা করতে পারিনি।’ সালামি নিয়ে নিশির ভাষ্য, ‘সালামি এখন খুব কমই পাই। বেশিই দিতে হয়। ক্যাম্পে থাকলে কোচ আমাকে সালামি দেন। বেশ মজা হয় তখন। আসলে ছোটবেলার ঈদটাই বেশি আনন্দের ছিল।’ ঈদের দিন পদ্মা নদীতে ঘোরার পরিকল্পনা আছে নিশির। সবশেষে বলেন, এক বছর হয়ে গেল এসএ গেমসের ব্রোঞ্জ মেডেলটা এখনও আমার হাতে আসেনি। ফেডারেশন আশ্বাস দেয় নিয়মিত। মেডেলটা পেলে ঈদের আনন্দটা দ্বিগুণ হত।’ * আরমিন আশা (শূটিং) ॥ ‘এবার রোজা রেখেছি এবং শূটিং অনুশীলন করেছি বলে ঈদের শপিং সেভাবে করা হয়নি। আসলে সারা বছরই তো জামা-কাপড় কিনি, তাই ওভাবে শপিং না করলেও হয় আর কি।’ কথাগুলো জাতীয় পিস্তল শূটার আরমিন আশার। নারায়ণগঞ্জে নিজের বাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন আরমিন। ঈদের দিন মেহমানদারি করবেন, বাইরে ঘুরতে বের হবেন সন্ধ্যার পর। সালামি? ‘সালামি কিছু পাব, তবে তারচেয়েও বেশি দিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে।’ কয়েকমাস পরেই জাতীয় শূটিং চ্যাম্পিয়নশিপ। এ প্রসঙ্গে আরমিনের ভাষ্য, ‘ফেডারেশন আমাদের কয়েক শূটারকে আলাদাভাবে ক্যাম্পে গিয়ে অনুশীলন করার অনুমতি দিয়েছে। ১ জুলাই থেকে ক্যাম্প শুরু। ঈদের পরেই শূটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ব।’ * শাপলা আক্তার (ব্যাডমিন্টন) ॥ জাতীয় শাটলার শাপলা আক্তারের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। বরাবরই ওখানে ঈদ পালন করে থাকেন তারকা এই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। তবে এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। কদিন আগেই বিয়ে করেছেন সাবেক জাতীয় শাটলার এবং কোচ-সংগঠক অহিদুজ্জামান রাজুকে। ফলে বিয়ের পর এই প্রথম ঈদ করবেন শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জে। ‘বিয়ের পর প্রথম ঈদ এবং সেটা শ্বশুরবাড়িতে। ফলে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আগে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে পাবনায় ঈদ করতাম। এবার সেটা হচ্ছে না বলে কিছুটা বিষণœও বটে। ইতোমধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে চলে এসেছি।’ শাপলার প্রতিক্রিয়া।’ ঈদের শপিং শেষ শাপলার। নিজের ও শ্বশুরবাড়ির সবার জন্যই কেনাকাটা করেছেন। ঈদের পরেরদিন ঘুরতে বের হবেন। সালামি নিয়ে মজা করে বলেন, ‘ছোটদের তো অবশ্যই সালামি দিতে হবে। শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করব। তাদের কাছ থেকে প্রথম ঈদ-সালামি পাওয়ার ক্ষীণ আশায় আছি।’ * মাহফুজা খাতুন শিলা (সাঁতার) ॥ এসএ গেমসে জোড়া স্বর্ণজয়ী তারকা সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলার জন্য এবারের ঈদটা মোটেও আনন্দময় নয়, বরং বিষাদের ও উদ্বেগের। কেন? সেটা শুনুন শিলার মুখেই, ‘এবার বাবার বাড়ি যশোরে ঈদ করব। আমার মা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ নিয়ে অনেক টেনশনে আছি। ফলে এবারের ঈদে আমার মনে কোন আনন্দ থাকবে না। এতটাই দুশ্চিন্তায় ছিলাম যে ঈদ-শপিংও করতে পারিনি। তবে আমার দুই বোন আমাকে শপিং করে দিয়েছে। ঈদের পর মাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে ভারতে নিয়ে যাব। আপনারা সবাই আমার মায়ের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন। * আফরানা ইসলাম প্রীতি (টেনিস) ॥ প্রতি বছর ঈদটা নিজ জেলা বাগেরহাটেই করে থাকেন জাতীয় টেনিস খেলোয়াড় আফরানা ইসলাম প্রীতি। এবারও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। সুদর্শনা এই টেনিস খেলোয়াড় ঈদ প্রসঙ্গে জানান, ‘বাবা-মা ও ছোট বোনের সঙ্গে খুব মজা করে ঈদ পালন করব। ঈদের শপিং শেষ করেছি। ওয়েস্টার্ন ও দেশীয় জামা কিনেছি নিজের জন্য।’ ঈদের দিন পরিবারকে সময় দেবেন সুদর্শনা প্রীতি, ‘আসলে বেশিরভাগ সময়ই তো আমি পরিবারের সান্নিধ্য পাই না। তাই যতটা সম্ভব নিজের সময়টা তাদের দিতে চেষ্টা করব। দুপুরে বাসায় মেহমান এলে তাদের মেহমানদারি করব।’ সালামি নিয়ে প্রীতির উচ্চারণ, ‘আমি তো এখনও ছোট, তাই সালামি এবারও পাব। ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে বিকেএসপি ছেড়ে এসেছি বলে খুব খারাপও লাগছে।’ প্রীতি বিকেএসপি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এখন তার লক্ষ্য ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং জগন্নাথÑ এই তিনটির মধ্যে যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। * শারমিন সুলতানা শিরিন (দাবা) ॥ জাতীয় দাবাড়ু শিরিনের এবারের ঈদটা কাটবে নারায়ণগঞ্জে। সবার জন্য শপিং করে ফেলেছেন। ঈদের দিন বিকেলে বাইরে ঘুরতে যাবার পরিকল্পনা আছে। ছোটবেলা না বড়বেলার ঈদ বেশি মজার? ‘দুই বেলার ঈদই আমার কাছে উপভোগ্য। দুই বেলার ঈদের দুই রকম আবেদন।’ সালামি নিয়ে মজাও করলেন, ‘সালামি এখনও কিছু পাই। তবে দিতেই হয় বেশি। সবমিলিয়ে নিট লাভ হয় না।’ আগামী ৩ জুলাই ভারতের দিল্লীতে কমনওয়েলথ দাবায় খেলার প্রস্তুতি নিয়ে এখন বেশি ব্যস্ত শিরিন। * ইমদাদুল হক মিলন (আরচারি) ॥ তারকা আরচার ইমদাদুল হক মিলন এবার ঈদ পালন করবেন ঢাকার গাবতলীতে। সবসময়ই তাই করেন। ‘ঈদের শপিং করে ফেলেছি। পরিবারের সবাইকে কিছু দিতে খুব ভাল লাগে। তবে সালামি দিতে ভাল লাগে না। আগে সালামি প্রচুর পেতাম। এখন আর সেই দিন নাই। হা হা হা।’ আগামী নবেম্বরে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক আরচারি আসরের জন্য এখন থেকেই নিজেকে শাণিত করে চলেছেন মিলন। * হাসিব হলি (বডিবিল্ডিং) ॥ হাসিব হলি। বাংলাদেশের প্রথম বডিবিল্ডার হিসেবে বিদেশের মাটি থেকে জিতেছেন কোন স্বর্ণপদক। যদিও ফেডারেশনের ষড়যন্ত্রে ও রোষানলে পড়ে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবুও দমে যাননি তিনি। ফেডারেশনের অনুমোদনের বাইরের আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং আসরে ঠিকই অংশ নিচ্ছেন। এবারের ঈদ নিজ বাবা-মা ও ছোট বোনের সঙ্গে ঢাকার ইস্কাটনের দিলু রোডের বাসায় করবেন। শপিং শেষ করেছেন। মজা করে বলেন, ‘গত ৬-৭ বছর ধরেই আমাকে পাঞ্জাবি বানিয়ে পড়তে হয়। কেননা বাজারের কোন পাঞ্জাবিই আমার গায়ে ফিট হয় না। বডিবিল্ডার হয়ে ঝামেলায় পড়েছি বলতে পারেন।’ ঈদের দিন দিলু রোডে বসবাসরত চাচা-ফুফুদের বাসায় বেড়াবেন হলি। বেড়াবেন বন্ধুদের সঙ্গে। দেবেন প্রাণভরে আড্ডা। পিচ্চিদের সালামিটাও দিয়ে দিতে হবে এক ফাঁকে। ‘সালামি পেলে ছোটরা যে আনন্দ পায়, সেটা দেখতে আমার ভীষণ ভাল লাগে।’ আরও যোগ করেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে ঈদের সময় ফাঁকা ঢাকাকে। রাস্তায় ঘুরে চরম শান্তি লাগে।’ * শিল্পী আক্তার (হ্যান্ডবল) ॥ পঞ্চগড়ের মেয়ে শিল্পী আক্তার। তবে এবারের ঈদ করবেন লালনের দেশে-কুষ্টিয়ায়। জাতীয় দলের এই হ্যান্ডবল খেলোয়াড় এ প্রসঙ্গে জানান, ‘স্বামীর বাড়িতেই এবারের ঈদ পালন করব। ২০১৪ সালে বিয়ের এখানে এই নিয়ে দুই ঈদ মিলিয়ে সপ্তমবারের মতো ঈদ করতে যাচ্ছি। শপিং মোটামুটি সারা। ঈদের সালামি দিতে ও নিতে দুটোই খুব ভাল লাগে। আশাকরি এবারও তাই হবে। তবে ছোটবেলার ঈদে যেমনটা মজা পেতাম, এখন আর ততটা পাই না।’ ঈদের দিন নামাজ পড়ে টুকটাক কাজ করবেন শিল্পী। তারপর শুরু করবেন অতিথি আপ্যায়ন। ঈদের দিন ঘরেই থাকবেন। ঘুরতে যাবেন ঈদের পরদিন। ঢাকায় ফিরবেন ঈদের পরপরই। ঢাকায় কেন? বিজেএমসিতে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে না।
×