ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুল্কহার কমানোয় ২ দিনে হিলি স্থলবন্দরে ৬ হাজার টন চাল খালাস

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৫ জুন ২০১৭

 শুল্কহার কমানোয় ২ দিনে হিলি স্থলবন্দরে ৬ হাজার টন চাল খালাস

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ আমদানিকৃত চালের ওপর থেকে শুল্কহার কমিয়ে ১০ শতাংশ করায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালবোঝাই ট্রাক আসতে শুরু করেছে। আমদানির ফলে শীঘ্রই বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে যাবে। দুদিনে ছয় হাজার মেট্রিক টন আমদানিকৃত চাল খালাস করা হয়েছে। সরকার আমদানিকৃত চালের ওপর শুল্কহার ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত দুদিনে প্রায় শতাধিক ট্রাক চাল নিয়ে প্রবেশ করেছে। শুল্কহার ২৮ শতাংশ থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে চালবাহী কয়েক শ’ ট্রাক স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে অবস্থান করছিল। বৃহস্পতিবার শুল্কহার কমানোর সরকারী আদেশ হিলি কাস্টমস অফিসে আসার পর শুক্রবার থেকে অপেক্ষমাণ চালবাহী ট্রাকগুলো বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। গত দুদিনে শতাধিক ট্রাক চাল খালাস করায় বন্দরে ট্রাকের জট কমতে শুরু করেছে। হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট গেটে ভারতীয় সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট রাজিব কুমার জানান, ভারত থেকে বাংলাদেশে চালের আমদানি শুল্ক বেশি থাকার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চালের রফতানির পরিমাণ কমে গিয়েছিল। এছাড়াও সম্প্রতি চালের শুল্ক প্রত্যাহার হবে- এমন আশায় ভারত অভ্যন্তরে প্রধান সড়কে শতাধিক চালবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছিল আমদানিকারকরা। এছাড়াও অনেকে স্থানীয় গুদামে চাল মজুদ করেছিল। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ওই দিন থেকেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে থাকা চালবাহী ট্রাকগুলোর রফতানি শুরু হয়েছে। এর ফলে বন্দর দিয়ে চাল রফতানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরের সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট রাশেদুল ইসলাম ও রাজু আহম্মেদ জানান, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের আদেশের কপি হিলি কাস্টমসে আসায় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভারে তা এন্ট্রি করায় হিলি কাস্টমসে চাল আমদানিতে নতুন শুল্কহারে আমদানিকৃত চালের পরিক্ষণ ও শুল্কায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের আমদানিকারকদের আমদানিকৃত চালগুলো বন্দর থেকে খালাস করার জন্য হিলি কাস্টমসে আমদানিকৃত পণ্যের বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করেছি। শুল্ক পরিশোধ করে বন্দর থেকে চাল খালাস করে আমদানিকারকদের নিজস্ব গুদামে নেয়া হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক রাজিব দত্ত ও মামুনুর রশিদ জানান, শুল্ক প্রত্যাহারের আশায় বন্দরের অভ্যন্তরে ৮-১০ দিন ধরে আটকে থাকা আমদানিকৃত চাল নিয়ে জটিলতার অবসান হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দর থেকে এসব চাল খালাস হওয়ার কারণে দেশের বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে। ঈদের আগেই দেশের খোলা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমবে। দেশের বাজারে চালের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। তারা আরও জানান, চাল আমদানিতে যে পরিমাণ শুল্ক আরোপিত ছিল তাতে শুল্ক পরিশোধসহ সব ধরনের খরচ দিয়ে এক কেজি চাল আমদানিতে ৪২ টাকার মতো পড়ত। আর এক কেজি চাল আমদানি করতে শুল্ক পরিশোধ করতে হতো ৯ থেকে ১০ টাকার মতো। বর্তমানে ভারত থেকে দেশে চাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর ফলে চাল আমদানিতে শুল্ক যেমন কমবে তেমনি প্রতি কেজি চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা করে কমবে বলেও তারা জানান। হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মাকসুদুর রহমান জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে শুল্ক কমা ও বৃদ্ধির কারণে কয়েকদিন ধরে চাল আমদানি হলেও সেগুলো শুল্কায়ন বা খালাস করা হয়নি। আমরা ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রজ্ঞাপন পেয়েছি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভারে সেটি এন্ট্রি হয়েছে। সে অনুসারে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত চালগুলো নতুন রেট ১০ শতাংশ শুল্কে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে এবং বন্দর থেকে চালগুলো ছাড় দেয়া হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, বন্দরের ভেতর গত কয়েকদিন ধরে শুল্ক প্রত্যাহারের আশায় ৬-৭ হাজার টন চাল আটকা ছিল। শুল্ক কমানোর নতুন আদেশের কপি বন্দরে আসায় পানামা পোর্ট থেকে আটকে পড়া চালগুলো খালাস শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দরের অভ্যন্তরে চালবাহী ট্রাক আটকে যে পণ্যজটের সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও নিরসন হচ্ছে।
×