ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ স্বর্ণখনির বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৫ জুন ২০১৭

একুশ শতক ॥ স্বর্ণখনির বাংলাদেশ

॥ দুই ॥ আজমাইনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে দুই কোটি আজমাইন বাংলার ঘরে ঘরে রয়েছে তাদের জন্য এই জাতি যদি কিছু না করে তবে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। আজমাইনের সঙ্গে আমার এখন দৈনন্দিন যোগাযোগ আছে। আমি নিজে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই তাকে সর্বপ্রকারের সহায়তা করবে। আমি এটিও কামনা করি যে, আজমাইন শিশুদের উদ্ধার করার মতো কঠিন কাজ করতে পারার রোবটটি তৈরি করে এদেশে রোবোটিক্সের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ১৪ বছরের এই কিশোর কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হবার অনেক আগেই যখন অন্যদের পথ দেখানোর কাজ করে ফেলতে পারছে তখন আমাদের নিজেদের বোধোদয় হওয়া উচিত। বিশেষ করে আমরা যেটুকু পথ পার হতে পেরেছি সেটির সামনের আলোটা আমাদের দেখতে হবে। আমি স্মরণ করতে পারি তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তরে বাধ্যতামূলক করার লড়াইটা আমার জন্য যথেষ্ট কষ্টের ছিল। আমাদের শিক্ষাবিদরা কৃষি, ক্যারিয়ার শিক্ষা বা শরীরচর্চাকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তেমনটি তথ্যপ্রযুক্তিকে দেননি। তবুও অনেক বড় একটা লড়াইতে আমরা জয়ী হয়েছি যখন স্কুলে কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে এখনও তাতে প্রবল সঙ্কট রয়েছে। হিসেবে জানা গেছে যে, সকল স্কুলে কম্প্উিটার শেখানোর ল্যাবতো দূরের কথা, শতকরা ৪০ ভাগ স্কুলে এই বিষয়ের শিক্ষকই নেই। বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি গুরুত্বই পায়নি। যা হোক আমরা এরই মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছি। আজমাইন প্রমাণ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাটা প্লে গ্রুপ থেকে হলেই সঠিক হবে। করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল তাকে সেই বয়সেই কম্পিউটারে আগ্রহী করতে পেরেছে। দ্বিতীয়ত আমাদের চোখ খোলা উচিত যে, প্রোগ্রামিং অনার্স পড়ার বিষয় নয়। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র যে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে এবং সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র যে রোবট বানাতে পারে সেটি আমাদের শিক্ষাবিদগণ কি অনুভব করবেন? সবচেয়ে বড় কথাটি হচ্ছে আজমাইনের স্বপ্নটি নিয়ে। এই কিশোর ও তার ক্লাব এখন স্বপ্ন দেখে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া শিশুদের প্রোগ্রামার বানাতে। প্রসঙ্গক্রমে আজমাইনের বাবার সঙ্গেও আমার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বগুড়া জেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তা। নিজে তৃণমূলের নারীদের দক্ষ করার জন্য কাজ করছেন। তিনি আশা করেন, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তার বড় ছেলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বড় কিছু করবে। একজন আদর্শ বাবার মতো তিনি তার কন্যা ও ছোট সন্তান আজমাইনকে নিয়েও বিশাল স্বপ্ন দেখেন। মনে রাখা ভাল সন্তানদের ঘিরে বাবা-মায়ের এমন স্বপ্নটাই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ। আমার লেখার পাঠক-পাঠিকারা অবশ্যই স্মরণ করতে পারবেন যে, বহু বছর ধরে আমি শিশুশ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর এবং শিশু প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা বলে আসছি। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে আমি এই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ রাষে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব স্কুলে শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখাব এবং এরপর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। এসব বিষয় তেমন আগায়নি। আমাদের সরকারী প্রবণতা হচ্ছে চোখের সামনে যা পড়ে তার দিকেই আমরা নজর দিই। এসব প্রস্তাবনার বাইরে আমি ২০১৫ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে টেলিফোন শিল্প সংস্থার দায়িত্ব নেবার নির্দেশ পেয়ে ঐ সংস্থাটির মাধ্যমেই একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করার চেষ্টা করি। সেই প্রকল্পটি ছিল ২০টি প্রাইমারী স্কুলের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তাদের পাঠউপকরণসহ ট্যাব দেয়া হবে। তারা কম্পিউটার বিষয়টি শিখবে এবং তাদেরকে প্রোগ্রামিংও করানো হবে। সেই প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। জুলাই মাসে এর কাজ শুরু হবার কথা। এটি যদি সফল করা যায় তবে আমরা পুরো দেশের সামনে একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব। তখন মনে করা হবে না যে কেবল আজমাইনই একটি ব্যতিক্রম। আমার নিজের পরিচালিত আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলগুলোতে শিশুশ্রেণি থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে পারলেও আর কোথাও আগাতে পারিনি। গত ২৭ মার্চ ১৭ আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহি কমিটির সভায় প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, তারা কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিন্তু কেবলমাত্র কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা করা ছাড়া তেমন কোন অগ্রগতি নেই। আমি এখনও এমন কথা ভাবতেই পারছি না যে, প্রাথমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। সরকারের নীতি নির্ধারকদের মাঝে তেমন কোন ভাবনাই দেখতে পাই না। ফলে আমি এখনও মোটেই আশাবাদী নই যে, প্রাথমিক স্তরে সকলের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বাধ্যতামূলক হবে। বর্তমান শিক্ষা প্রশাসনকে আমি এতোটা দূরদর্শী হিসেবে দেখতে পাচ্ছি না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক কোন স্তরেই শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ হবার কথা তা দৃশ্যমান নয়। নয় বছর পরও আমরা জানিনা কোন পথে কতোদিনে কিভাবে আমরা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরটা করতে পারব। এমনকি সাধারণ শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০৯ সালে আমরা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটি যারা তালাবদ্ধ করে রেখেছে এবং যারা ৯ বছরে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কোন কর্মপরিকল্পনাও জাতিকে দিতে পারে না, তাদের কাছে এতটা আশা আমি করছি না। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে আমার নিজের প্রস্তাবনা এরকম: ক. প্রথমত এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আমাদের ডিজিটাল যুগের জন্য মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য জ্ঞানকর্মী তৈরির কথাও আমাদের ভাবতে হবে। এজন্য সবার আগে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেই পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার বড় পরিবর্তনের প্রথমটি হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে স্বচ্ছন্দ এমন প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং ধারাবাহিবকভাবে এমন ব্যবস্থা করা, যাতে ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। তেমন শিক্ষাই নতুন প্রজন্ম ধারাবাহিকভাবে পাবে। এজন্য অবিলম্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণী থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০ নম্বর হলেও মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে কমপক্ষে ১০০। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এর মান অন্তত ২০০ নম্বর হতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজী-বাংলা-আরবী মাধ্যম নির্বিশেষে সকলের জন্য এটি এমনভাবেই অবশ্যপাঠ্য হতে হবে। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিষয়টিকে কোন ধরনের অপশনাল নয়, বাধ্যতামূলক করতে হবে। এজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। খ. দ্বিতীয়ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একই সাথে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের স্বত্ত্বাধিকারী হতে পারে, রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। দেশজুড়ে বিনামূল্যের ওয়াইফাই জোন গড়ে তুললে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্প্রসারিত করবে। ইন্টারনেটকে শিক্ষার সম্প্রসারণের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। গ. তৃতীয়ত প্রতিটি ক্লাসরুমকে ডিজিটাল ক্লাসরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা কলম বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট ফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। প্রচলিত স্কুলের অবকাঠামোকে ডিজিটাল ক্লাশরুমের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাতে রূপান্তরের আরও তিনটি কৌশলের কথা আমরা আলোচনা করতে পারি। তার পর আরও দুটি প্রধান কৌশল নিয়ে আলোচনা করা যাবে। ঘ. চতুর্থত সকল পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেইসব কনটেন্টকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। অনুগ্রহ করে কেউ এসব কনটেন্টকে পাওয়ার পয়েন্টের উপস্থাপনা বা ভিডিও লেকচার বলে মনে করবেন না- এগুলো যেন হয় ইন্টার‌্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার। ইতোমধ্যে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির নামে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেইসব কর্মকা-ের ফলাফল মূল্যায়ন করে বিশ্বমানের ইন্টারএ্যাকটিভ ডিজিটাল কনটেন্ট পেশাদারীভাবে প্রতিযোগিতামূলকভাবে তৈরি করতে হবে। এনজিওদের ডেকে এনে কনটেন্ট তৈরি করার কাজ বিলিয়ে দেবার প্রবণতা ছাড়তে হবে। একই সাথে বেসরকারি খাতে বিপুল পরিমাণ কনটেন্ট তৈরি করার জন্য ব্যাপক সহায়তা প্রদান করতে হবে। আইসিটি ডিভিশন, এটুআই, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে এ ধরনের কনটেন্ট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। তবে বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত না করে সরকারের একার পক্ষে এই খাতে ভাল অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের তিনটি ধাপকে মনে রাখতে হবে। ১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে হবে। ২) ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ৩) ক্লাশরুম ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে হবে। তিনটির মাঝে একটি অনন্য সমন্বয় থাকতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমে কাগজের বই বা কাগজের বইয়ের পিডিএফ কপি দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। ক্লাসরুমে প্রজেক্টর আর ল্যাপটপ দেবার কাজটির সঙ্গে কনটেন্ট যুক্ত না করা হলে উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যাবে না, নীতি নির্ধারকদের তা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয়, তবে ডিজিটাল ক্লাসরুম অচল হয়ে যাবে। আমরা নিশ্চিত করেই বলতে চাই যে, এইসব কনটেন্টকে অবশ্যই মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারএ্যাকটিভ হতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল যুগের বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী বিষয়বস্তু শিক্ষা দেয়া। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যত এমন সব বিষয়ে পাঠদান করা হয়, যা কৃষি বা শিল্পযুগের উপযোগী। ডিজিটাল যুগের বিষয়গুলো আমাদের দেশে পড়ানোই হয় না। সেসব বিষয় বাছাই করে তার জন্য পাঠক্রম তৈরি করতে হবে। আমার ধারণা, বিদ্যমান বিষয়গুলোর শতকরা ৯০টি ভবিষ্যতে না পড়ালেই সঠিক কাজটি করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার মাধ্যম-ভাষা শিক্ষা ও শিক্ষার বহুবিধ ধারাকে সমন্বিত করতে হবে। ঙ. পঞ্চমত, সকল শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকল আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকগণ ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাশরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকগণ কোন অবস্থাতেই পেশাদারী কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন না। ফলে পেশাদারী কনটেন্ট তৈরির একটি চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল শিক্ষার গবেষণা ও প্রয়োগে নেতৃত্ব দেবার উপযোগী করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্রমান্বয়ে সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে। চ. ষষ্ঠত, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত তিরিশের নিচের সকল মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়ে যে কাজের বাজার আছে সেই বাজার অনুপাতে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের যেসব মানবসম্পদ বিষয়ক প্রকল্প রয়েছে, তাকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হবে। দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য সরকার স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রসমূহও ব্যবহৃত হতে পারে। আমি বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের এলআইসিটি প্রকল্প, বেসিসের প্রশিক্ষণ প্রকল্পসহ, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ও অন্যান্য মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রকল্পগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করছি। এখনও প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ধারা বাস্তবমুখী ও সঠিক নয়। আমি জানি না সরকার এসব পরিকল্পনা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করবে। তবে আশায় বুক বাধতে ক্ষতি কি! কেবলতো অন্যের কথা বললে হবে না, নিজেকেও কিছু কাজ করতে হবে। এবার তাই নিজেই শিশুদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা ভাবছি। বহু বছর আলোচনা করার পর শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর কাজটা আমরা এবার করব এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনও আমরা এই বছরেই করব। আমি মনে করি একটি বিস্তারিত ও দীর্ঘমেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করে শিশুদের জগতটাকে সামনে নিতেই হবে। এই বছরেই আমি চুয়েটে কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। সেখানেই জেনেছিলাম যে, স্কুলের ছাত্ররা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হারিয়ে দিয়েছে। তবে তাদের দুঃখ ছিল যে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, স্কুলের ছেলেমেয়েদের কেবল উৎসাহিত করা নয়, তারাই হোক আমাদের প্রেরণা। এই দেশটার সোনার টুকরোগুলো আমাদের শিশুরাই। (সমাপ্ত) ঢাকা, ২৩ জুন, ১৭ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচীর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : [email protected], ওয়েবপেজ : www.bijoyekushe.net
×