ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৫ জুন ২০১৭

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ফের ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার ১৮ দিনের শিশু মারা গেছে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসার কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের বাদানুবাদের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় হাসপাতালের এক কর্মীর হাতে আহত হন মৃত শিশুটির একজন আত্মীয়। পরে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করে। হাসপাতালটিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেই। স্বজনদের অভিযোগ, জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় গত ১১ জুন ওই শিশুকে ভর্তি করা হয়েছিল সেন্ট্রাল হাসপাতালে। দুই দিন পর তাকে নেয়া হয় নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ)। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেয়া হয়। শুক্রবার তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। পরদিন শনিবার সকালে মারা যায় শিশুটি। ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। পাশাপাশি তার হার্টের একটি এক্সরে রিপোর্টও সংযুক্ত রয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগে শিশুটির খালা শিউলি বেগম বলেন, হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর এম মনসুর আলীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম। তিনি বলেন, এনআইসিইউতে ভর্তি বেশিরভাগ বাচ্চাই মারা যায়। এই কথার পর আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কী বলার থাকতে পারে! স্বজনরা বলছেন, তার শারীরিক সমস্যা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কিছুই অবগত করেনি। পরে শনিবার শিশুটির মৃত্যু হলে এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় হাসপাতালের এক কর্মীর আঘাতে এক আত্মীয় মাথায় আঘাত পান। তাকে পাশেই অন্য একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করে। এদিকে স্বজনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের কাউকে হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের দুটি গেটও আটকানো রয়েছে। খবর পেয়ে ধানম-ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। এদিকে শিশুটি মৃত্যুর পর তার বাবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে তিনি অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে হাসপাতালের চিকিৎসক শাখাওয়াত আলম আমাদের জানান যে বাচ্চাটি মারা গেছে। কিন্তু তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক। আমাদের কাছে তাদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, তারা আমার শিশু সন্তানকে মেরে ফেলেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট্রাল হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (এনআইসিইউ) দায়িত্বে থাকা এ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ও বিএসএমএমইউয়ের শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত আলম বলেন, শিশুটি হাসপাতালে ভর্তি হয় ১১ জুন। তখন তার রক্তে বিলিরবিনের মাত্রা ছিল ১৭ থেকে ১৮। নাজুক শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে এনআইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখতে হয়েছিল তিন-চার দিন। একটা সময় সে এই ভেন্টিলেশন ছাড়াই শ্বাস নিতে শুরু করে। কিন্তু এত কম বয়সী শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। শিশুটির রক্তে ইনফেকশন ছিল, যেটা অনেক চেষ্টা করেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি। বাচ্চাটি মারা গিয়েছে। তার স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরাও শিশুটির মৃত্যুতে মর্মাহত। কিন্তু ওনারা যেটা বলছেন, সেটা সঠিক বলছেন না।’ এ বিষয়ে ড. শাখাওয়াত বলেন, আমি এই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট। আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। রাতে বারোটার দিকে ঢাকায় ফিরেছি। এরপর কেবল ওই শিশুটিকে দেখতেই আমি মধ্যরাতেও হাসপাতালে যাই। সেখানে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে শিশুটির চিকিৎসার সব ধরনের নির্দেশনাও আমি দিয়ে আসি। ফলে শিশুটির চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা বা গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয়। এটা অনাকাঙ্খিত।
×