ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিমুলিয়া ঘাটে মানুষের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কাঁঠালবাড়িতে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৫ জুন ২০১৭

শিমুলিয়া ঘাটে মানুষের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কাঁঠালবাড়িতে

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার সকাল থেকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে। ফেরি, লঞ্চ আর স্পিডবোটে করে ঘরে ফিরছে হাজার হাজার মানুষ। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। সকাল থেকে ছয় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকলেও বিকেলের দিকে তা হালকা হয়ে যায়। পরে মহাসড়কের পাশে অপেক্ষমাণ ট্রাক পার করা হয়। এরই সঙ্গে রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। এসব তথ্য দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, শনিবারও ভোর থেকেই যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপও বাড়ে। এর মধ্যে ছোট গাড়ির সংখ্যাই বেশি। তিনি আরও জানান, ঈদে যাত্রীদের নির্বিঘেœ পারাপার করার জন্য এবার চারটি রো রো ফেরিসহ ১৮টি ফেরি বহরে রয়েছে। তাছাড়া নৌপথের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার কমে যাওয়ায় ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও বেড়ে গেছে। পণ্যবাহী যান পারাপার বন্ধ থাকলেও বিকেলের দিকে যানবানের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আটকেপড়া পণ্যবাহী যানবাহনগুলো পারাপার করা হয়। লঞ্চ ও সিবোট ঘাটেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। দুপুর ১২টায় লঞ্চঘাটে দেখা যায়, অসংখ্য যাত্রীর ভিড়। দুপুরের দিকে বিআইডব্লিউটিএর ডিজি শিপিংয়ের ম্যাজিস্ট্রেট অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের দায়ে এমএল মুনমুন নামের একটি লঞ্চকে জরিমানা করলে লঞ্চ মালিকরা প্রায় আধা ঘণ্টার জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। পরে সাড়ে ১২টার দিকে বিষয়টির সুরাহা হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। অপরদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মাওয়া চৌরাস্তা থেকে শিমুলিয়া পর্যন্ত দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি পরিবহনের চাপ কমে যাওয়ায় বিকেলের দিকে পণ্যবাহী ট্রাক পার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমা আক্তার জানান, ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ছয় শ’ পুলিশসহ আনসার, র‌্যাব কাজ করছে। এদিকে তিন দিন পর শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশে যানজট ছিল না। সকাল থেকে গাড়ির চাপ থাকলেও যানজট নেই। এর আগে বুধবার সকালে মেঘনা সেতুর ওপর একটি ট্রাক বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হলে তা শুক্রবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হাসেম উদ্দিন জানান, শুক্রবার রাত থেকেই গাড়ির চাপ কমে আসে। এখন মহাসড়ক অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ১২০ পুলিশ সদস্য মহাসড়কের গজারিয়া অংশে কাজ করছে বলে তিনি জানান। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, শনিবার সকাল থেকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুটের কাঁঠালবাড়ি ঘাটের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ছোট ছোট যানবাহনে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতায় স্থবির হয়ে পড়েছে লঞ্চ ও ফেরিঘাট ঘাট এলাকা। ফলে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। এরই সঙ্গে রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। শনিবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে থেকে লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিটি লঞ্চ ও স্পিডবোটে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। একই সঙ্গে সকল নৌযানসহ সব ধরনের পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতেও বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। লোকাল ও দূরপাল্লার পরিবহনের ভেতরে জায়গা না থাকায় বাসের ছাদে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় দীর্ঘ গাড়ির সারি দেখা দেখা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নজরদারি বাড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পদ্মা পার হতে স্পিডবোটে যাত্রী প্রতি ৫০-৮০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। লঞ্চে ৩৩ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। পরিবহনের দূরত্ব অনুযায়ী ২০০-৩০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঘাটে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের মনিটরিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে খেয়াল-খুশি মতো বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সব ধরনের পরিবহনে। বাগেরহাটের মোল্লারহাট এলাকার যাত্রী সাজন হক বলেন, ‘সাধারণ সময় বাসে তিন শ’ টাকা ভাড়া নিলেও এই সময় যাত্রীদের জিম্মি করে পাঁচ শ’ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া বাসের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে।’ শিমুলিয়া ঘাট থেকে লঞ্চে আসা যাত্রী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘লঞ্চে ৩৩ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়েই এই অতিরিক্ত ভাড়া গুনছি। মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন ভুইয়া বলেন, কাঁঠালবাড়ি ঘাটের পাশাপাশি লঞ্চের জন্য আলাদাভাবে চালু রাখা হয়েছে কাওড়াকান্দি ঘাট। যাত্রীদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি তিন শ’র বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
×