ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা স্থানান্তরে থানায় থানায় মানিএস্কর্ট টিম

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৫ জুন ২০১৭

টাকা স্থানান্তরে থানায় থানায় মানিএস্কর্ট টিম

গাফফার খান চৌধুরী ॥ এক লাখের অধিক পরিমাণ টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সারাদেশের প্রতিটি থানায় মানিএস্কর্ট টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে টাকার মালিককে ব্যক্তিগত উদ্যোগে টাকাসহ পুলিশ যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশের যানবাহন সমস্যার কারণে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানিএস্কর্ট টিমের সহায়তা না নেয়ার ফলে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। অনেক সময় ছিনতাইকারীদের হাতে অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে আর্থিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার কারণে এ ধরনের অপরাধও বেশি হয়। টাকা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কমিয়ে আনতেই এবার দেশের প্রতিটি থানায় মানিএস্কর্ট টিম তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ প্রতিটি ইউনিটেই একাধিক মানিএস্কর্ট টিম প্রস্তুত রয়েছে। ঈদের সাতদিন পরও এই টিম জনগণের সেবা নিশ্চিত করবে। ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক এ সংক্রান্ত আদেশে এমন নির্দেশ জারি করা হয়েছে। জারিকৃত আদেশে রমজান ও ঈদ—উল-ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নগদ টাকা পরিবহনে মানিএস্কর্ট টিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থের লেনদেন ও স্থানান্তর বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা, ডাকাতিসহ মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এসব অপতৎপরতা রোধের পাশাপাশি টাকা স্থানান্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মানিএস্কর্ট টিম সার্বিক সহায়তা করবে। পুলিশের মানিএস্কর্ট টিমের সহায়তা পেতে সংশ্লিষ্ট থানা অথবা আবেদনের মাধ্যমে আবদুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে হবে। মানিএস্কর্ট টিমের সহায়তা পেতে ৯৫৫১১৮৮, ৯৫১৪৪০০, ৯৫৫৯৯৩৩ ও ০১৭১৩৩৯৮৩১১ নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করা যাবে। তবে টাকাসহ পুলিশ সদস্যদের যাতায়াতের জন্য টাকার মালিককে যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় থানার পাশাপাশি রমনা, মতিঝিল, ওয়ারী ও লালবাগ বিভাগ এলাকাধীন প্রত্যাশী সংস্থা বা ব্যক্তিকে মানিএস্কর্ট সহায়তা দিতে আবদুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ৫টি টিম, মিরপুর, গুলশান, উত্তরা ও তেজগাঁও বিভাগ এলাকায় এ সহায়তা দিতে মিরপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুমে (পিওএম পুলিশ লাইন্স) ৫টি টিম মানিএস্কর্ট টিম সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে, ব্যাংকে ও এটিএম বুথগুলোতে স্টিকার লাগিয়েও মোটা অঙ্কের টাকা স্থানান্তরকারীদের পুলিশের মানিএস্কর্ট টিমমুখো করা যায়নি। ঢাকায় শতকরা ৯৭ ভাগ মোটা অঙ্কের টাকা স্থানান্তরকারীই মানিএস্কর্ট টিমের সহায়তা নেন না। এর অন্যতম কারণ পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভীতি। পাশাপাশি পুলিশের যোগসাজশে বহন করা মোটা অঙ্কের টাকা ছিনতাই হওয়ার আশঙ্কা। পুলিশ সদর দফতর বলছে, মানিএস্কর্ট টিম কর্তৃক বহনকৃত টাকা ছিনতাই হওয়ার ন্যূনতম কোন সম্ভাবনা নেই। যদি কোন অসৎ পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে বা কোন কারণে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, তাহলে তদন্ত করে ওই পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। যাদের মানিএস্কর্ট টিমে রাখা হয়েছে তাদের নাম আলাদা তালিকাভুক্ত করা আছে। তারা কোথায় কারা, কত, টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, তারা সঠিক তথ্য থাকছে। মানিএস্কর্ট টিমে থাকা পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ফোন ও সদস্যদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা কোন সন্ত্রাসী বা ছিনতাইকারী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কি না, তারও তথ্য থাকছে তাদের কাছে। ফলে কোন মানিএস্কর্ট টিমের সদস্য টাকা স্থানান্তরের সঙ্গে কোন সন্ত্রাসী, ডাকাতি বা ছিনতাইকারী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছে না। যদিও কোন পুলিশ সদস্য যোগাযোগ করে, তবে তার বা তাদের চাকরি চলে যাওয়ার পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের এবং জেলহাজতে যেতে বাধ্য হতে হবে। সেই সঙ্গে খোয়া যাওয়া টাকা অভিযুক্তদের ওই টাকার মালিককে দিতে হবে।
×