ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা এখন চাঁদরাতের অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৫ জুন ২০১৭

ব্যবসায়ীরা এখন চাঁদরাতের অপেক্ষায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি এবার চাঁদরাত ঘিরে। এই রাতের জন্য অনেক ব্যবসায়ী সারা মাস অপেক্ষার প্রহর গোনেন। অনেকেই কেনাকাটা করেন ঈদের চাঁদ দেখার পর। সারারাত মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল আর ফুটপাথ ঘুরে ঈদের কেনাকাটা করেন অনেকেই। ব্যবসায়ীরাও বিশেষ ছাড় কিংবা স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করেন এ সময়ে। এদিকে রাজধানীসহ দেশবাসীর ঈদের কেনাকাটা প্রায় শেষের দিকে। এখন বাকি টুকিটাকি কিছু প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এর মধ্যে অন্যতম আতর, টুপি, জায়নামাজ। ঈদের নামাজের জন্য এসব অনুষঙ্গ যেমন প্রয়োজন, তেমনি এসব ছাড়া ঈদের নামাজের পরিপূর্ণতাও অনেকটা না হওয়ার মতো। আর সেজন্য ঈদের বাজারে এখন ভিড়টা বেশি দেখা যাচ্ছে টুপি, আতর, সুরমা, তসবিহ, মেসওয়াক ও জায়নামাজের দোকানগুলোতে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এলিফ্যান্ট রোড, গাজীভবন, মৌচাক মার্কেট, কর্ণফুলী শপিং কমপ্লেক্স, বেইলি রোড এলাকা, আনারকলি মার্কেট, ফরচুন শপিংমল ও পলওয়েল মার্কেটে বিক্রেতাদেরও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর, ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরায় সব ধরনের মার্কেটে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়। আজ চাঁদ দেখা গেলে এসব মার্কেটের দোকানপাট সারারাত খোলা থাকবে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রোজার মাঝামাঝি সময় থেকে বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে। শেষ মুুহূর্তে নারী এবং শিশুদের পোশাকের কাটতি বেশি। দুপুরের পর থেকে পুরো এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন দোকানে বেশিরভাগ ক্রেতাকে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি কেনার জন্য আর শেষ দিনে নিউমার্কেট এলাকায় ছেলেদের শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট, পরিবারের প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী এবং ব্যাগ ও ঈদ কার্ড, ঈদ গিফট কিনতে দেখা গেছে। গাউছিয়া মার্কেটে ছিল নারী ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা বলেছেন, এখন আর দরদামের সময় নেই। সামান্য লাভেই পণ্য ছেড়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা বলেছেন, পছন্দ হলেই সেই পণ্য কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। কারণ ঘুরেফিরে কেনার সময় আর হাতে নেই। দোকানীরা বলেছেন, শেষ বাজারে এখন কিছুটা সুলভ মূল্যের পণ্যের বিক্রি চলছে বেশি। ফুটপাথ থেকে শুরু করে মধ্যম শ্রেণীর মার্কেট, অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে মানুষ কেবল কিনছেন। চূড়ান্ত পর্বের কেনাকাটা করে লঞ্চ-ট্রেন-বাস ধরার তাগিদ থেকে ক্রেতারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মার্কেটে মার্কেটে। মিরপুর-১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর শাহআলী মার্কেট পর্যন্ত গড়ে ওঠা শতাধিক মৌসুমী মার্কেটে দেখা গেল ক্রেতা-বিক্রেতার বাড়তি চাপ। এছাড়া এই এলাকার বাংলার মেলা, তাঁত, গ্রামীণমেলা, অন্যমেলা, গ্রামীণ কালেকশন, গ্রামীণ বাজার, গ্রামীণ নকশা, অন্য আলো, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে প্রচুর পরিমাণে বৈচিত্র্যময় শাড়ি, থ্রি-পিস, ছোটদের পোশাক, পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড, ভাসাভি, নাবিলা শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন নামীদামী মার্কেটেও চাঁদরাত ঘিরে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এসব মার্কেটে ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, আজ চাঁদ দেখা গেলে তাঁরা রবিবার সারারাত মার্কেট খোলা রাখবেন। এদিকে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জমে উঠেছে আতর, টুপি ও জায়নামাজ বেচাকেনা। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামজের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। শনিবার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, জিপিওসংলগ্ন ফুটপাথ, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, চকবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আকর্ষণীয় নকশা আর নানা কারুকার্যে সুসজ্জিত টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। দেশী টুপির পাশাপাশি বাহারি নক্সা আর আকৃতির বিদেশী টুপিও পাওয়া যাচ্ছে দোকানে। নক্সার সঙ্গে মিল রেখে এসব টুপির চমকপ্রদ সব নাম দিয়েছেন বিক্রেতারা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা রউফ বলেন, রোজার শুরু থেকে টুপি বিক্রি ভাল হচ্ছে। এই সময়টায় ভাল লাভ হয়। মানুষ ঈদ ও রোজার মধ্যে তারাবির নামাজের জন্য টুপি বেশি কিনে থাকে। ঈদ বাজারে নিজের চাহিদা অনুসারে এসব পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারাও। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে টুপি ও জায়নামাজ কিনতে আসা এক ক্রেতা আসাদুজ্জামান আকন বলেন, গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। তাই নিজের এবং ছেলেদের জন্য টুপি কিনছি। এছাড়া গুলবাহার, গুল রেডরোজ, লায়লা, বেলি, অ্যারাবিয়ান, জুঁই, বকুল, মর্নিং কুইন, চামেলি, জেসমিন, গোলাপ বাহার, শাহি দরবারসহ দেশী-বিদেশী আতর পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানগুলোতে। অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্কে পাওয়া যাচ্ছে বিদেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের আতর ও পারফিউম। বড় বড় দোকানে মিলছে বিশ্ববিখ্যাত আজমল কোম্পানির আতর ‘দিহান-আল-উদ’। পাওয়া যাচ্ছে বুলগেরিয়ান গোলাপ আতর, হোয়াইট উদ, মরিয়াম, সুলতান, সাস, গুচি, হোয়াইট আম্বর, মুখাল্লাত এ্যারাইস, মেশ্ক আম্বর, সৌদির আবদুস সামাদ আল কোরাইশি কোম্পানির সাফারি ও আকাবি, আজমল, সুইস এ্যারাবিয়ান, উদ-আল-আনফার ইত্যাদি ব্র্যান্ডের আতর। মান ভেদে এসব আতরের দাম তোলাপ্রতি এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের দিন সকালে নামাজে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ জায়নামাজ। রোজার শেষ দিনগুলোতে জায়নামাজের বিক্রিও বেশ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে যেসব জায়নামাজ পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই বিদেশে তৈরি। এসব জায়নামাজেও যুক্ত নক্সা আর কারুকাজ। বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন বিক্রেতারা বলছেন, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কাশ্মীর, জর্ডান, ইয়েমেন, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে এখানে। জায়নামাজ বিক্রেতা মোঃ ইয়াছিন জানান, বিদেশী জায়নামাজই বেশি বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম ও চকবাজারে কয়েকটি দোকানে তসবিহ ও পাগড়ি বিক্রি হতে দেখা গেছে শনিবার। এছাড়া চাঁদরাত ঘিরে নগরীর বিউটি পার্লার ও সেলুনগুলো নতুন সাজে সেজেছে। রূপ সচেতন ও সৌন্দর্যপিপাসু তরুণী ও মহিলারা ছুটে যাচ্ছেন বিউটি পার্লারগুলোতে। স্পা, ফেসিয়াল, চুলের কাট, চুলের রং ও ভ্রুপ্লাক করতে ব্যস্ত বিউটিশিয়ানরা। বিউটিশিয়ানরা বলছেন, ঈদের চাঁদরাতেই তাঁদের কাজ সবচেয়ে বেশি হয়। বিশেষ করে ফেসিয়াল, স্পা ও ভ্রুপ্লাক করতে মহিলারা চাঁদরাতেই বিউটি পার্লারে আসেন। এ জন্য চাঁদরাতে সারারাত কাজ করার প্রস্তুতি রয়েছে তাঁদের।
×