ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফের ক্যালেন্ডার বিপর্যয়, লীগ পেছাল দেড় মাস

প্রকাশিত: ০৭:২০, ২৪ জুন ২০১৭

বাফুফের ক্যালেন্ডার বিপর্যয়, লীগ পেছাল দেড় মাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অতীতে বাফুফে নানা অজুহাতে লীগ পেছাত। এবারও লীগ পেছাল। বেশি না। মাত্র ৪৭ দিনের জন্য। ১২ জুনের পরিবর্তে এখন লীগ শুরু হবে আগামী ২৮ জুলাই থেকে। লীগ পেছানোর কারণ? সাত ক্লাবের চার আবদার। এগুলো হলোÑ প্রচ- গরম, সামনে ঈদ, চিকনগুনিয়া জ্বর এবং অনুর্ধ ২৩ দলের ক্যাম্প। বাফুফের এই ‘সুখ্যাতি (?) টা আগে থেকেই ছিল। এবার সেটা আরও পোক্ত হলো। যেকোন ফুটবল আসর শুরুর তারিখ দিয়ে সেটা বার বার পরিবর্তন করা বা পিছিয়ে দেয়া। এ বছরের শুরুতেই তারা মহাসমারোহে ফুটবলের বর্ষপঞ্জিকা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সে বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী কোন ফুটবল প্রোগ্রামই ঠিকভাবে করতে পারছে না তারা। সর্বশেষ ঝামেলাটা হলো লীগ পেছানো নিয়ে। ঘটেছে ক্যালেন্ডার বিপর্যয়। আগেই ঠিক ছিল আগামী ১২ জুন থেকে শুরু হবে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলের খেলা (ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিযামে)। কিন্তু লীগ আর যথাসময়ে শুরু হচ্ছে না। পিছিয়ে যাচ্ছে। তাও সেটা এক দিন বা এক সপ্তাহের জন্য নয়, পাক্কা ৪৭ দিনের জন্য! এমন বিস্ময়কর ঘোষণাই দেয় বাফুফের পেশাদার লীগ কমিটি। সাত ক্লাবের (মোহামেডান, শেখ জামাল ধানম-ি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ এবং ফরাশগঞ্জ) আবেদনের প্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় বাফুফে। এর ফলে তারা ক্যালেন্ডার ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ট্রেনের যেমন সিডিউল বিপর্যয় হয়, তেমনি বাফুফেরও হয়েছে ‘ক্যালেন্ডার বিপর্যয়।’ তাদের এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে ফুটবলাঙ্গনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ক্লাবের কর্মকর্তারা বলতে গেলে এক ধরনের ধুয়েই দিয়েছেন বাফুফেকে। তাদের ভাষায়Ñ ক্যালেন্ডার ঘোষণার সময় বাফুফের আগে কেন মনে পড়েনি প্রচ- গরমে খেলা হবে? তারা তো আসলে এসি রুমে বসে সিডিউল ঠিক করেন। কাজেই গরমের আঁচ তাদের গায়ে না লাগাটাই স্বাভাবিক। আর ঈদ বা চিকুনগুনিয়া ... এগুলো কোন অজুহাত হতে পারে না। একসময় ঈদের আগেরদিনও লীগের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিকুনগুনিয়া যে কারুরই হতে পারে। তার জন্য লীগের খেলা বন্ধ রাখাটা হাস্যকর। আর অনুর্ধ ২৩ দলের ক্যাম্প প্রসঙ্গে ক্লাবগুলোর ভাষ্য, অনুর্ধ ২৩ দলগঠনের জন্য ট্রায়াল চলছে। সব ক্লাব থেকে ৫৪ ফুটবলারকে প্রাথমিক ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ট্রায়ালের মাধ্যমে এখান থেকে ২৩ জনকে বেছে নেয়া হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এএফসির অ-২৩ এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। কাজেই তাদের কারণে লীগ হবে নাÑ এমন যুক্তি একেবারেই অসাড়। গত বছরের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ফল রচিত হয়। ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে অফ-২’এ ভুটানের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এর ফলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সিনিয়র ফুটবল দল ফিফা ও এএফসি স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের ফুটবলের এই অধঃপতনের দায়ভার কোনভাবেই এড়াতে পারে না বাফুফে। তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতায় দেশের ফুটবলের এই অবস্থা। ফুটবল উন্নয়নে তৃণমূলে যেতে হবে, নতুন খেলোয়াড় তুলে আনতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে জোর দিতে হবে। অথচ কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের আমলে তৃণমূল ফুটবল বলতে গেলে নির্বাসনেই চলে যায়। গত নয় বছরে সালাউদ্দিন পাত্তাই দেননি তৃণমূল এবং বয়সভিত্তিক ফুটবলকে। মজে ছিলেন জাতীয় দল এবং পেশাদার লীগ নিয়েই। পাইপলাইনে দক্ষ ফুটবলার না থাকার পরিণাম এই নয় বছরে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই বিপর্যয়ের পর গত ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হুঁশ ফিরে বাফুফের। ‘কুম্ভকুর্ণের নিদ্রাভঙ্গ’ হয়। তারা তৎপর হয় তৃণমূল ও বয়সভিত্তিক ফুটবলে জোর দিতে। মোট কথা, এত বছর চুপচাপ থাকার পর মেগাপ্ল্যান দিয়ে দেশের ফুটবলকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন সালাউদ্দিন। কিন্তু সেটা থমকে গেছে ৪৭ দিনের জন্য লীগ পেছানোতে। এ বছরের শুরুতেই বাফুফে প্রণয়ন করে একটি ৪ বছর মেয়াদী (২০১৭-২০২০) পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো বিশ্বের সব ফুটবল ফেডারেশন যেমনটা পালন করে। যেমন লীগ এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। অন্যটি হলো সার্বিক ফুটবলের উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়া। ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করলেও সে অনুযায়ী এ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই সময় মেনে চলতে পারেনি বাফুফে। পেশাদার লীগ জুনে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল অক্টোবরে। এখন সেটি ৪৭ দিন পিছিয়ে যাওয়ায় কবে শেষ হবে, সেটা বাফুফে হয় তো নিজেই জানে না। দল বদলের সেকেন্ড উইন্ডো হওয়ার কথা ছিল আগস্টে। সেটিও এখন পিছিয়ে গেল। ক্যালেন্ডার বিপর্যয়ের কারণে আগামী নবেম্বরে স্বাধীনতা কাপও সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে কি না সন্দেহ। এই আসর দিয়েই শেষ হওয়ার কথা ছিল মৌসুমের। মার্চে এএফসির আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকায় এবার আন্তর্জাতিক আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতে পরিবর্তন আনে বাফুফে। মার্চ থেকে পিছিয়ে সেটা ডিসেম্বরে নেয়া হয়। সারাদেশ থেকে কোন প্রতিভা যেন বাদ না পড়ে সে লক্ষ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ বিভাগে ৭ দিন করে খেলোয়াড়দের ট্রায়াল হবে বলে জানিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। যেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তিনি কতটা রাখতে পেরেছেন, তিনিই ভাল বলতে পারবেন। অনেকেই বলেন, সালাউদ্দিন যেকোন কাজই শুরু করেন ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহাসমারোহে। কিন্তু তার কাজের শেষটা আর দেখা যায় না। এখন দেখার বিষয়, তার নতুন এই মহাপরিকল্পনা দিয়ে দেশের ফুটবলের আদৌ কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেন কি না, নাকি এটাও হয়ে থাকবে নিছকই তার আরেকটা স্টান্টবাজি।
×