ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির বাজেট

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৪ জুন ২০১৭

ডিএনসিসির বাজেট

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১৭-’১৮ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৩৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার বাজেটের আকার শতাধিক কোটি টাকা বেড়েছে। তবে সম্প্রতি আলোচিত চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে রাজধানীতে মশা মারার জন্য বাজেট বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ কমিয়ে এই খাতে এবারের বরাদ্দ কুড়ি কোটি টাকা। এটা ঠিক এডিস মশা নির্মূলের জন্য মানুষকে সচেতন করা জরুরী। কিন্তু সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার জন্যও তো বাজেট বরাদ্দ চাই। তাই এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোই ছিল যৌক্তিক। স্মরণযোগ্য, প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণাকালে দুই মেয়র যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নগরবাসীর জন্য ছিল কৌতূহল-উদ্দীপক। দুই মেয়রই বলেছিলেন তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। দুই মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপবাদ অবশ্য শোনা যায়নি। যদিও দক্ষতা ও কর্মপ্রাধান্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের নিয়ে নগরবাসীর প্রশ্ন রয়েছে। তবু ধীরে ধীরে উভয়ের ওপর আস্থা তৈরি হচ্ছে। এটি বড় ব্যাপার। বসবাসের জন্য বিপজ্জনক ঢাকাকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। প্রপার্টি ডেভেলপার তথা বহুতল-ভবন ব্যবসায়ীরা যেভাবে ঢাকায় জমি কিনে যত্রতত্র আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছে, তা হয়ে উঠেছে ক্রমান্বয়ে আত্মঘাতী। ঢাকা শহরে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। ঢাকা দেশের রাজধানী হওয়ার কারণে অপরাপর শহর থেকে এটির নাগরিক সুবিধা ও সামগ্রিক অবস্থা উন্নততর হবে এমনটাই প্রত্যাশিত। তাই ঢাকার বাজেট তৈরির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার উত্তর অংশের বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য। এটিকে আমরা সুবিবেচনাপ্রসূতই বলব। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও অত্যন্ত ঘনবসতির কারণে ঢাকায় চলাচল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন কৌশলেই যেন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরা-গুলশান-বনানীকেন্দ্রিক উন্নয়নের পর মেয়র এবার মোহাম্মদপুর-মিরপুর-খিলগাঁও এলাকার উন্নœœয়নের দিকে নজর দেয়ার কথা বলেছেন। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা তার জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দু’কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে গা লাগার মতো দশা। ভুলে গেলে চলবে না মানুষই একমাত্র প্রাণ যার বেঁচে থাকা তথা সুস্থ থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই চলে না, মনের আহারও চাই। তার চাই নির্মল বিনোদন। ঢাকা মহানগরীতে মানুষের তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। নগরপিতা ভবিষ্যতে এদিকটিকে গুরুত্ব দেবেন, সেটাই প্রত্যাশা। তাছাড়া চলতি বর্ষামৌসুমের শুরুতেই ঢাকার নতুন নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় নগরবাসীর কাছে বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে শঙ্কার। মেয়র আনিসুল হক অবশ্য সঠিকভাবেই রোগ নির্ণয় করে খালগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের কাছে খাল ছেড়ে দেয়ার দাবি তুলবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আবাসন ভেঙ্গে ফেলে কি খাল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব? সামনের দিকে তাকিয়ে বিকল্পের কথাও ভাবতে হবে। তবে অন্যায়কারীদের কোন ছাড় নয়। তার প্রাপ্য তাকে মিটিয়ে দেয়াই সমীচীন।
×