ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেহেরপুরে চিকিৎসা ব্যাহত

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে জনবল সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৪ জুন ২০১৭

বক্ষব্যাধি হাসপাতালে জনবল সঙ্কট

সংবাদদাতা, মেহেরপুর, ২৩ জুন ॥ মেহেরপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে দিনের পর দিন। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সব কক্ষই তালাবদ্ধ অবস্থায়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে দেখা যায় সর্বক্ষণিক একজন ডাক্তার এই হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও সেই ডাক্তারের কক্ষটিও ডাক্তার না থাকায় পড়ে রয়েছে। ওষুধপত্র ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রাখার ঘরটিও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে নোংরা তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কোন রোগী না থাকায় কর্মচারীরাও অলস সময় কাটাচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছে রোগীরা। এটি মেহেরপুর জেলার একমাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিত্র। সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলী, বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঠা-া জনিত রোগে ভুগছিলেন, বুকে জমাট বেঁধেছে কফ, কফের সঙ্গে মুখ দিয়ে রক্তও উঠছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এসেছিলেন নিজের কফ পরীক্ষা করার জন্য। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় শুধু কফ পরীক্ষার ২টি কৌটা নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তার মতো জেলার সকল রোগীরই একই অবস্থা। ডাক্তার না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে হাসপাতালের কর্মচারীরাই দিচ্ছেন চিকিৎসা। জানা গেছে, এক্সরে মেশিন থাকলেও জনবলের অভাবে সেই মেশিনটিও দীর্ঘদিন বদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হতে চলেছে। কর্মচারী-কর্মকর্তা সব মিলিয়ে ১৬ টি পদের মধ্যে ১১টি পদই শূন্য। যার কোন স্থায়ী সমাধানও নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ডাক্তার না থাকায় ফার্মাসিস্ট দিয়েই দেয়া হচ্ছে রোগী চিকিৎসা সেবা। যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়ার জন্য ১৯৬৬ সালে শহরের উপকণ্ঠে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাসপাতালে ১ জন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও ১ জন মেডিক্যাল অফিসারের দুটি পদ রয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের মে মাস থেকে চিকিৎসকের দুটি পদই শূন্য রয়েছে। সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলী এসেছিলেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি জানান, দীর্ঘদিন কষ্ট করে থাকার পর যখন মুখ দিয়ে কফের সঙ্গে রক্ত উঠতে শুরু করে তখন হাসপাতালে এসেছিলাম ওষুধের জন্য। কিন্তু কোন ডাক্তার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। তার সঙ্গে আসা আরেক রোগী হাসেনা খাতুন জানান, এখানে চিকিৎসা পাওয়া গেলে কম খরচে হয়ে যেত। কিন্তু এখন জেলার বাইরের কোন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। মেহেরপুর শহরের ফারিয়া পারভীন এসেছিলেন কফ পরীক্ষা করার জন্য কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, কফ পরীক্ষা করার জন্য এসে ডাক্তার পাওয়া যায়নি। ফলে এখানে ফার্মাসিস্ট দিয়ে কফ পরীক্ষা করানো হয়েছে। দ্রুত জনবল সঙ্কট নিরসনের দাবি ভুক্তভোগীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, জনবল না থাকার কারণে এখানে কোন কাজ নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই। সকালে অফিসে আসা আর অলস সময় পার করে অফিস শেষ করে বাড়ি ফেরা। কোন ডাক্তার এখানে এসে থাকতে চান না। হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আবদুল মতিন জানান, চিকিৎসক থাকা অবস্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। সব সময় রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটতো। বিশেষ করে যক্ষ্মা নির্ণয়। বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসকের দুটি পদই শূন্য। তাই বাধ্য হয়ে রোগীদের কুষ্টিয়া ও রাজশাহীসহ কোন কোন ক্ষেত্রে ঢাকায় রেফার্ড করা হচ্ছে। মেহেরপুর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ অলক কুমার দাস জানান, জনবল সঙ্কটের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন তিনি।
×