ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে লোকজ শিল্প

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২৪ জুন ২০১৭

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে লোকজ শিল্প

গ্রাম ছাড়া এই রাঙামাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে’ ‘আমায় নহে গো ভালোবাস মোর গান’ ‘আমার দেশের মতো এমন দেশ কি কোথাও আছে, বউ কথা কও ডাকে পাখি নিত্য হিজল গাছে’ ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ‘পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া’ ‘কোনদিন যেন আসবে গেরেফতারী পরবাসীরে’ এমন শত-সহস্র কালজয়ী ও মর্মস্পর্শী গান এখনও টিকিয়ে রেখেছে এ অঞ্চলের লোকশিল্প। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নিরলস শিল্প চর্চা করে যাচ্ছে নবীন প্রবীণ শিল্পীরা। ভাটি অঞ্চলের এসব শিল্পীর লালিত স্বপ্ন আজও হারিয়ে যায়নি বাংলার প্রাণ লোকসঙ্গীত পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, জারি-সারি, বাউলসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা, দেশাত্মবোধক, ভজন-কীর্তন, গম্ভীরা, ঘেটু, পালাগান, গাজীর গান এবং কালজয়ী রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীত নিয়মিত চর্চার কারণে। বাঙালীর প্রাণের সঙ্গীত বলতে লোকসঙ্গীতকে বোঝায়। যা মানুষের আত্মার গভীর থেকে নিসৃত হয়। গান প্রিয় বাঙালীর আশা-আকাক্সক্ষা, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখের অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে। তাই তো গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী, চাষী, তাঁতী, মাঝি, রিক্সাওয়ালা, কামার-কুমার, জেলে, গারোয়ান, বাউল, সাধক, কবি স্বীয় অন্তরে সঙ্গীত প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গান রচনা করে। এদের সবাই শিল্পী আবার সবাই শ্রোতা। প্রাচীনকাল থেকেই লোকসঙ্গীতের উদ্ভব। যা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসছে আদিকাল ধরে। সমাজে নিজস্ব বলে স্বীকৃত গানগুলোই মূলত লোকসঙ্গীত। লোকসঙ্গীত লোকসাহিত্যের অন্যতম প্রধান অংশ। লোকসঙ্গীতের উৎপত্তি শহরে হয়নি। এর উৎপত্তি হয়েছে বা হয়ে আসছে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। দেশের হাটে মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য জারি-সারি, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মারফতি, মুর্শিদী, বাউল, পল্লীগীতি, ঘেটু, গম্ভীরা। এ ছাড়া পটুয়া, তরজা, পালা, মালসী, কবিগান, ভজন-কীর্তন, মেয়েলী গীত, মাজারের গান, মাইজভা-ারী, গাজীর গান, নৌকা বাইচের গান, ছাদ পিটানো গান এসবই লোকসঙ্গীত। এক সময় লোকসঙ্গীতকে যেসব শিল্পী স্বীয় সাধনা বলে সমৃদ্ধ করে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি দিয়ে গেছে তাদের মধ্যে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পাচ্চর বড় দোয়ালী গ্রামের আবদুল হালিম বয়াতি, কুতুবপুর মৃধাকান্দির দলিল উদ্দিন বয়াতি, সদর উপজেলার শাহ আবুল কাশেম বয়াতি, ছিলারচর গ্রামের নজরুল ইসলাম বয়াতি, সাগর দেওয়ান, রাকিব দেওয়ান, বাজিতপুরের কাঞ্চন মোল্লা, কলাগাছিয়ার রজনী বাড়ৈ, আমগ্রামের প্রেমাদাস ঘরামী, বাহাদুরপুর গ্রামের তুষ্টচরণ বাগচী, আমগ্রামের বীরেন বালা, লখন্ডাগ্রামের সমীর বালা, চন্দ্রা আক্তার, মৌসুমী আক্তার। এদের মধ্যে অনেকের জাতীয় পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। তারা এ শিল্পকে আঞ্চলিকতার গ-ি থেকে বের করে নিয়ে গেছেন বৃহৎ অঞ্চল ও জনপদে। ওস্তাদ সুধীর দাসের স্ত্রী মায়া রানী দাস, ওস্তাদ প্রফুল্ল পোদ্দার, অধ্যাপক প্রশান্ত ইন্দু, অধ্যাপক সান্ত¡¡না ইন্দু, অধ্যাপক সন্ধ্যা দাস সঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে এ শিল্পকে লালন করেছেন। বর্তমানে মাদারীপুরে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে যারা নিয়মিত লোকসঙ্গীতসহ স্বদেশী শিল্পচর্চা করে চলেছেন তারা হলেন- অধ্যাপক সুনীল হালদার, কাজী শহীদ ফরিদ, ওয়াজেদ আলী সরদার, আনিসুর রহমান মিন্টু, উমা রানী দাস, মিল্লাত হোসেন, সুলতান মাহমুদ, দোলা দে, নন্দিনী হালদার, হোসেন শহীদ আঁখি, হোসনা হাওলাদার, রূমা দাস, রনি মোল্লা, মুহিত খান, শারমীন আক্তার, মিলা, বাঁধন, হুমায়ুন, মোজাম্মেল হোসেন, ইয়াকুব শেখ, তুলি আক্তার, শুক্তি আহমেদ, লিয়াকত হোসেন, সীমা সাহা, ছায়া সাহা, গৌরী সাহা, শম্পা সাহা, অঙ্কিতা দাস, স্বর্ণা আক্তার ও নবীন। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×