ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনোবিজ্ঞানী জেমস পেনবেকারের আবিষ্কার

মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৪ জুন ২০১৭

মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে

সমুদ্র হক ॥ ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইলো না কেহ/সে তো এলো না যারে সঁপিলাম এই প্রাণ...সেকি মোর তরে পথ চাহে সে কি বিরহ গীত গাহে....’ ব্যক্তি জীবনের হৃদয়ের কথা, আনন্দ দুঃখ গভীর বেদনার কথা যে বলতে ও লিখতে পারে তার মনোকষ্ট অনেকটা দূর হয়। যে জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে তার হৃদয় মন ভাল থাকে। শরীর সুস্থ থাকে। দুশ্চিন্তা বা টেনশন থেকে যে রোগব্যধি শরীরে বাসা বাঁধে তাও মুক্ত হয়। ব্যাধি বালাই পালাই পালাই করে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের উৎস শুধু বংশানুক্রম নয়। মাত্রাতিরিক্ত টেনশন মানবদেহে ডায়াবেটিসের সূত্রপাত ঘটায়। তা থেকে একে একে আক্রান্ত হয় হৃদয়, কিডনি, যকৃতসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গ। বিষাদগ্রস্ত মানুষ রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো ধরতে পারে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যখন ধরা পড়ে তখন অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। অথচ সহজেই তা নিয়ন্ত্রণের উপায় আছে। বলা হয় : মন ভালো থাকলে শরীর সুস্থ থাকে। এই মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে কত কিই না করা হয়। কেউ মেডিটেশন করে। কুসংস্কারের পাল্লায় নিজেকে সঁপে দেয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই কবে লিখেছেন ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইলো না কেহ...’। হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো নিকটজন, কাছের বন্ধু, হৃদয়ের বন্ধু, স্বজনদের কাছে ব্যক্ত করে লিখতে পারলে এবং বলতে পারলে মনের ওপর চেপে বসা জগদ্দল পাথর সরে যেতে বাধ্য। যারা এ ধরনের শেয়ার করেন তাদের মন হালকা হয়ে যায়। মন হালকা হওয়া মনেই রোগ ব্যাধি পালিয়ে যাওয়া। ব্রিটেনের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর পেনবেকার বিষয়টি আবিষ্কার করেন প্রায় ৩১ বছর আগে ১৯৮৬ সালে। তখন অনেকে প্রফেসর পেনবেকারকে মানসিক বিপর্যস্ত ভাবতে শুরু করেন। পরে পেনবেকার তা প্রমাণ করে দেন। সাইকোলজির (মনোবিজ্ঞান) অধ্যাপক জেমস পেনবেকার তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারা বেশি বিষন্ন এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত যায় তাদের বেছে নেন। একদিন ক্লাসে অনুশীলন (টাস্ক) দিলেন এ রকম : ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ বেদনার কথা লিখতে হবে। দেখা গেল ৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন জনের অশ্রুজল ঠোঁটের প্রান্তে গলে পড়েছে। কান্নার মধ্যেও তারা লেখা বন্ধ করেনি। কেউ কিছুটা সময় বেশি নিয়েছে। লেখার পর তাদের বিষাদ মুখ অনেকটা উজ্জ্বল হয়ে যায়। এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর জেমস পেনবেকার সিদ্ধান্ত নিলেন শুধু লিখা নয় শিক্ষার্থীদের প্রিয়জন স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ দুঃখ বেদনার কথা শেয়ার করবেন। তারা তাদের ব্যক্তিগত কথা একে অপরের কাছে ভাগাভাগি করবে। কিছুটা সময় তারা একান্তে কথা বলবে। এভাবে নিজেদের কথা লেখা ও বলার একটা চর্চা শুরু করে দিলেন। ছয় মাস এভাবে পর্যবেক্ষণের পর প্রফেসর জেমস পেনবেকার দেখলেন মনোবেদনা ও বিষণœতায় আক্রান্ত প্রত্যেকেই সুস্থ বোধ করছে। তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। কারো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। প্রণয়ের বন্ধুদের মধ্যে এক ধরনের আলাদা উচ্ছাস লক্ষ্য করা গেল।
×