ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ কমবে, বহু শ্রমিক ফিরে আসবেন!

সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মীদের ওপর কর আরোপ করতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ জুন ২০১৭

সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মীদের ওপর কর আরোপ করতে যাচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মীদের ওপর কর আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতি কর্মীকে মাসে বাংলাদেশী টাকায় ২ হাজার ২শ’ টাকা করে কর দিতে হবে। এই পরিমাণ কর দিয়ে কর্মীরা কাজ করে দেশে খুব একটা টাকা পাঠাতে পারবেন না। যারা কম বেতনে চাকরি করেন এমন বহু কর্মীকে করের কারণে দেশে ফিরতে হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সৌদি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহও কমে যাবে। সৌদি সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ‘২০৩০ ভিশন’ বাস্তবায়ন করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা প্রবাসী কর্মীদের ওপর কর ধার্য করার খবরে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিএমইটি জানিয়েছে, প্রবাসী কর্মীদের ওপর সৌদি সরকার কর আরোপ করবে এমন একটি খবর তারা শুনেছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি কোন চিঠিপত্র পাননি। চিঠিপত্র না পাওয়া পর্যন্ত কোন আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। এই বাজারে সরকারী হিসেবেই ২৬ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করেন। বেসরকারী হিসেবে কর্মীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সৌদিতে কর্মীদের ওপর করারোপ করলে রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক কমে যাবে। ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যেই বেশির ভাগ কর্মী কাজ করেন। দেশটিতে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা বেতনে অল্প সংখ্যক কর্মী কাজ করে। ওভারটাইম মিলে একজন কর্মী মাসে আরও ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতনের ওপর ট্যাক্স আদায় করা হলে কর্মীরা দেশে খুব একটা টাকা পাঠাতে পারবেন না। তখন অনেক কর্মী সৌদি ছেড়ে দেশে আসতে বাধ্য হবেন। দিনরাত হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যদি পরিবারের সুখ শান্তি না আনতে পারেন তাহলে কেন সেখানে কর্মীরা থাকবেন। কর্মীদের ওপর ২০১৭ সাল থেকেই ২ হাজার ২ শ‘ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। ২০১৮ সালে ট্যাক্সের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তখন মাসে একজন কর্মীকে ৪ হাজার ৪ শ’ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। ২০১৯ সালে ৬ হাজার ২শ’ টাকা ও ২০২০ সালে ৮ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি থেকে কয়েক কর্মী টেলিফোনে জানিয়েছেন, সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মী কমিয়ে স্থানীয় জনশক্তিকে কর্মসংস্থান করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে প্রবাসী কর্মীদের ওপর বড় অংকের ট্যাক্স ধার্য করতে যাচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বড় অংকের কর আদায় করে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলো এমন অবস্থায় বিদেশী কর্মী নিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা এখন নিজ দেশের কর্মী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজ দেশের কর্মী নিয়োগ করলে কোন কর দিতে হবে না। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে বিদেশী কর্মী নিয়োগ দিলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রতি ৩শ’ রিয়াল করে মাসিক ফি দিতে হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এটা বেড়ে ৫শ’ রিয়াল করা হবে। আর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জনপ্রতি দিতে হবে ৭শ’ রিয়াল। এত বেশি ট্যাক্স দিয়ে কোম্পানিগুলো বিদেশী কর্মী নিয়োগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যদিও বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ কর্মী দেশটিতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন খাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। এখান থেকে যদি বড় অংকের টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, তাহলে তারা কাজ করে শুধু নিজেরাই চলতে পারবেন। বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারবেন না। জমিজমা ঘরবাড়ি ও ঋণ ধার করে একজন কর্মীকে সৌদি গিয়ে এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনগুলো বলছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরীভিত্তিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা বলা উচিত। যদি উল্লিখিত হারে কর দিতে হয় তাহলে কর্মীরা দেশে কোন টাকাই পাঠাতে পারবে না। কর্মীদের বড় অংশ দেশে ফিরে আসবে। তখন বেকার সমস্যা ও ঋণে জর্জরিত কর্মীরা না পারবে ঋণ ধার শোধ দিতে না পারবে কোন কিছু করতে। এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এমন সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই সমাধান করা প্রয়োজন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বলছে, সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।
×