ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৪ জুন ২০১৭

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের সমাপনী দিনগুলো আমরা অতিবাহিত করে চলেছি। আজ সাদাকাতুল ফিতর নিয়ে কিছু কথা। সাদাকাতুল ফিতর বলা হয় নিসাব পরিমাণ মালের মালিকের ওপর ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় যে ‘দেয়’ ওয়াজিব হয়। আল্লামা যুবায়দী (র.) বলেন, যেহেতু সাদাকাতুল ফিতর রমজান শেষে রোজা ভঙ্গের দরুন ওয়াজিব হয় তাই তাকে সাদাকাতুল ফিতর বলে। এর অপর নাম যাকাতুল ফিতর। পবিত্র মাহে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক বান্দার প্রতি যে অফুরন্ত নিয়ামত দান করেছেন তার শোকর হিসেবে এবং রোজা পালনের মূল উদ্দেশ্য সাধনে যেসব ত্রুটি- বিচ্যুতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব করা হয়েছে। ওয়াকী ইবনুল জাররাহ (র.) বলেন, সাদাকাতুল ফিতর রমজানের ক্ষতিপূরক তেমনিভাবে সিজদায়ে সাহু নামাযের ক্ষতিপূরক। ইমাম আযম আবূ হানীফা (র.)-এর মতে নিসাব পরিমাণ মালের মালিকের ওপর সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (স.) এক খুতবায় ইরশাদ করেন, আযাদ, গোলাম, ছোট-বড় প্রত্যেকের পক্ষ থেকে তোমরা আধা সা’গম বা এক সা’ যব বা এক সা’ খেজুর সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করবে। (আবু দাঊদ)। বিত্তহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়ালীর ওপর ওয়াজিব। এমনিভাবে প্রাপ্তবয়স্ক, মতিভ্রম ও পাগল সন্তানের সাদাকা আদায় করাও ওয়ালীর ওপর ওয়াজিব (আলমগীরী, ১ম খ-)। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং স্ত্রী ও পিতামাতার সাদাকা আদায় করা ওয়ালীর ওপর ওয়াজিব নয়। তবে আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে (হিদয়া, ১ম খ- এবং আলমগীরী ১ম খ-)। ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং কেউ যদি সুবহে সাদিকের পূর্বেই ইন্তেকাল করে তবে তার সাদাকা আদায় করা ওয়াজিব নয়। সুবহে সাদিকের পূর্বে যদি কোন বিত্তবান লোকের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তবে তার সাদাকাও আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, ফিতরা এবং রোজা দুটি পৃথক পৃথক ইবাদত। তাই কেউ যদি বার্ধক্যজনিত কারণে বা অসুস্থতা অথবা অন্য কোন কারণে রোজা রাখতে না পারে তবে তার থেকে সাদাকায়ে ফিতর রহিত হবে না। বরং তাদের ওপর সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব (আলমগীরী, ১ম খ-)। কোন ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহের আবশ্যকীয় উপকরণ যথা আবাস গৃহ, পরিধেয় বস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য, ঘরের সরঞ্জামাদি এবং খিদমতের গোলাম ব্যতীত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা এর সমমূল্যের কোন সম্পদের মালিক থাকলে তার ওপর সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, ১ম খ-, শামী, ২য় খ- ও হিদায়া ১ম খ-)। সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য মালে নামী অর্থাৎ বর্ধনশীল মাল হওয়া শর্ত নয়। পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়াও শর্ত নয়। বরং ঈদ-উল-ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় উপরোক্ত পরিমাণ মালের মালিক থাকলে সাদাকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী ১ম খ-)। নগরীর বড় মসজিদ অথবা প্রসিদ্ধ ওলামাদের সংগঠন প্রতিবছর ফিতরার পরিমাণ ঘোষণা করে থাকে। আমরা সেই মতে ফিতরা আদায় করব। একটি ফিতরা একজনকে কিংবা একটি ফিতরা কয়েকজনকে ভাগ করে দেয়া যায়। তবে নিকটস্থ কোন অভাবী প্রার্থীর অভাব মোচনের লক্ষ্যে একাধিক ফিতরা দেয়া যায়। আল্লাহ পাক আমাদের মধ্যে ধর্ম-কর্ম পালনে ইখলাস সৃষ্টি করুন।
×