ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জুমাতুল বিদায় দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি কামনা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৪ জুন ২০১৭

জুমাতুল বিদায় দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি কামনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র মাহে রমজানকে বিদায় জানাতে শুক্রবার শেষ জুমায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লির ভিড় ছিল উপচেপড়া। রমজানের শেষ জুমবারকে সারাবিশ্বে জুমাতুল বিদা হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এদিনকে আবার আল কুদ্স দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিশ্বের মুসলমানরা। শুক্রবার জুমাতুল বিদার দিনে ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি মুসলমান পবিত্র রমজান মাসকে বিদায় জানাতে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। ইবাদত ও মোনাজাত কবুল হওয়ার বিশেষ সুযোগ বিবেচনা করা হয় রমজানের শেষ জুমবারকে। শেষ জুমাবার মুসলমানদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই পালিত হলো দেশব্যাপী জুমাতুল বিদা। এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের মসজিদগুলোতে বিশেষ মোনাজাতে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’য়ালার দরবারে মোনাজাত করা হয়। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ রাজধানীর মসজিদগুলোতে ছিল মুসল্লিদের ভিড়। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে মসজিদের আঙিনা ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে জুমাতুল বিদার তাৎপর্য নিয়ে সব মসজিদেই আলোচনা করা হয়। শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে রমজানের শেষ জুমা; জুমাতুল বিদায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাতে সংঘাতমুক্ত দেশ ও বিশ্ব কামনা করা হয়। খুতবা ও নামাজ পরিচালনা করেন সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মওলানা মহিউদ্দীন কাশেমী। দোয়ায় তিনি বলেন, ইসলামের সঠিক পথে আমাদের চলতে হবে। রমজান আমাদের এই শিক্ষাই দিয়ে গেলো। আর কয়েকটা দিন পর ঈদ, এই উৎসবের নামে যেন কোন নোংরামি না করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের দায়িত্ব। খুতবায় মুফতি মহিউদ্দীন কাশেমী বলেন, জুমার দিনটি সর্বাধিক মর্যাদাবান। রমজানে সর্বোত্তম দিবস। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো অভাগা আর নেই। আল্লাহর করুণা, ক্ষমা লাভের জন্য সর্বোত্তম সময় রমজান। যাকাত আদায়ের বিষয়েও খুতবায় উল্লেখ করা হয়। তিনি আরও বলেন, শুধু নিজে নিজে আনন্দ করা মানে ঈদ নয়। আশপাশের প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ভালভাবে আনন্দ মানেই ঈদ। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। জুমাতুল বিদা স্মরণ করিয়ে দেয় রমজান শেষ হতে চলেছে। রোজার ইবাদতের, ক্ষমা প্রার্থনার সময় চলে যাচ্ছে। নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয় এ সময়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ছাড়াও জুমাতুল বিদায় রাজধানীর সব মসজিদে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মুসলমানদের কাছে জুমার দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রমজান মাসের কারণে এবং বিশেষ করে শেষ জুমার নামাজের দিন হওয়ায় আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেন, রমজান মাসের জুমাবার গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময়। জুমাতুল বিদাসহ মাহে রমজানের প্রত্যেক জুমাবারে ইবাদত-বন্দেগীতে অধিক সওয়াব লাভের সুযোগ থাকে। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর শেষ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে মাহে রমজানকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। একই সঙ্গে এদিনটি বিশ্বজুড়ে আল-কুদস দিবসও পালিত হয়েছে। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনী জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা। জায়নবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ইসরাইল কর্তৃক জেরুজালেম দখলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা। জেরুজালেম শহর ‘কুদস’ বা ‘আল কুদস’ হিসেবে পরিচিত হওয়ায় দিনটি এই নামে পরিচিত। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃস্থানীয় দিন। যে তিনটি বিষয় জুমাতুল বিদাকে আল্লাহর করুণা, দয়া, ক্ষমা তথা মাগফিরাত ও নাজাত লাভের দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে; তা হচ্ছে মাহে রমজান, জুমাতুল বিদা এবং শেষ শুক্রবার ‘আল কুদস’ দিবস। এ কারণে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও অধিক পুণ্যের আশায় শুক্রবার মসজিদে হাজির হন। নামাজ আদায়সহ অংশ নেন দোয়া অনুষ্ঠানে। জুমার নামাজে শরিক হয়ে মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজেদের পাপমোচনের জন্যও দোয়া করেন।
×