ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প

আউটসোর্সিংয়ে বদলে যাচ্ছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর ভাগ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৪ জুন ২০১৭

আউটসোর্সিংয়ে বদলে যাচ্ছে অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর ভাগ্য

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করছেন মাদারীপুরে প্রকল্পের শিক্ষার্থী শামসুন নাহার সাথী। তিনি বলেন, ঘরে বসে নারীদের জন্য ঝুঁকিহীন কাজ হলো ফ্রিল্যান্সিং। লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রকল্প থেকে অনেক বেকার ঘরে বসে কিভাবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করতে পারব, তা শিখছি। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একটি ল্যাপটপ দিয়ে ৪০ দিনের মাথায় প্রথম ৫ ডলার আয় করি। একজন ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে ঠিক কত টাকা আয় করতে পারেন, তা নির্ভর করে তার দক্ষতার ওপর। সাধারণত প্রতিমাসে কাজের ধরনভেদে ৩০ হাজার থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। আমি সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি, সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় তরুণরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়িয়ে নিজেদের আয় বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন। বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এ চিত্র দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগে এ পর্যন্ত মোট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ১ হাজার ৫৬০ জন। এর মধ্যে সফলভাবে আউটসোর্সিংয়ে যুক্ত হয়েছেন ৪৮৫ জন। বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন জেলায় তাদের সম্মিলিত আয় ৪১ হাজার ৫৭৯ ডলার বা টাকার অঙ্কে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৩২০ ঢাকা। ফ্রিল্যান্সারদের ব্যক্তিগত এই আয়ের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে। প্রকল্পের জরিপ অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৪০ জনের মধ্যে ১১ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেছেন ১ হাজার ১৯০ ডলার। নরসিংদীতে ১৩২ জনের মধ্য থেকে ৪০ জনের আয় ৮৩০ ডলার। টাঙ্গাইলে ১৬০ জনের মধ্য থেকে ৩৫ জনের আয় ৩৩৪০ ডলার। কিশোরগঞ্জে প্রশিক্ষণ পাওয়া ২০০ জনের মধ্য থেকে ৩২ জন আয় করেছেন ১৮৪০ ডলার। ময়মনসিংহ জেলায় প্রশিক্ষণ পাওয়া ১৪০ জনের মধ্যে সফলভাবে ২৫ জন আউটসোর্সিং করে আয় করেছেন ৩২৬০ ডলার। এছাড়া, মানিকগঞ্জে ১২০ জনের মধ্য থেকে ৯০ জন ৭৫৬০ ডলার আয় করেছেন। ফরিদপুরে ৪৫ জন ৪৩৫৫ ডলার আয় করেছেন। গাজীপুরে ১৬০ জনের মধ্য থেকে ৮০ জন ৯১০০ ডলার আয় করেছেন। রাজবাড়িতে ৮০ জনের মধ্য থেকে ২৫ জন আয় করেছেন ২২৫০ ডলার। মাদারীপুরে ১৯ জন ১১৫০ ডলার আয় করেছেন। শরিয়তপুরে ৭ জন আয় করেছেন ৪৩০ ডলার। লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উপার্জন করছেন তাসমিন নাহার নামে আরেক নারী। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমি একটি পত্রিকার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারি। জানুয়ারিতে ৫০ দিনের গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর ফ্রি কোর্স শুরু করি। কোর্সটি শুধু ক্লাসরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। আমরা সারাক্ষণ ব্যাচের সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছি। আমাদের প্রশিক্ষণ পরবর্তীতেও ছোটখাটো সমস্যায় পড়লে আমরা আমাদের ট্রেইনারকে ফোন করেছি, তিনি আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক ছিলেন। কোর্স শেষ করার পর একটি মার্কেটপ্লেসে এ্যাকাউন্ট খুলি। আমি এখন ফাইবারে কাজ করছি। আমার প্রথম কাজ ছিল ১৫ ডলারের। এখন আমি ভাল আয় করছি। নারীর পাশাপাশি পুরুষও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদল করছে। তাদের মধ্যেই একজন রাজবাড়ির কলেজ শিক্ষার্থী মোস্তফা চৌধুরী তামিম। ছোটবেলা থেকে প্রযুক্তির প্রতি ভালবাসা থেকে ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখত সে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি এখন পুরোপুরি একজন ফ্রিল্যান্সার। নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে তার আউটসোর্সিং দক্ষতা। প্রশিক্ষণ মানুষের সামর্থ্য বাড়িয়ে দেয় নিজের জীবনের এমন উপলব্ধির বর্ণনা দিয়েছেন মোস্তফা চৌধুরী তামিম। তার ভাষায়, প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর এখন আমি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং গুগল এ্যান্ডসেন্স নিয়ে কাজ করছি। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমি প্রথম ৩০ ডলার আয় করেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং থেকে। এখন পর্যন্ত ২০০ ডলার আয় করেছি। তথ্যপ্রযুক্তি খাত খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং আশা করছি সামনে অনেক বেশি সুযোগ আসবে। আমার স্বপ্ন দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে একটি কমিউনিটি গড়ে তোলা। তরুণদের হাত ধরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এ্যান্ড প্রকল্পের পরিচালক মির্জা আলী আশরাফ জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করে ভাল থাকার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভাল মাধ্যম। তরুণরা বিদেশী মুদ্রা আয় করে নিজেরা ভাল থাকার পাশাপাশি দেশকে ভাল রাখতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডিজাইন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টÑএই তিনটি বিষয়ে ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা যদি মাসে ২৫০ ডলার করে আয় করতে সক্ষম হন তাহলে তারা একটি চাকরির সমমানের আয় করবে। তিনি আরও বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছি। লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার জনকে যথাক্রমে বেসিক আইসিটি, টপ-আপ, ফিউচার লিডার এবং ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
×