ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে আওয়ামী লীগকে আবার সুযোগ দিন

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৪ জুন ২০১৭

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে আওয়ামী লীগকে আবার সুযোগ দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী নির্বাচনেও ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশ সেবার সুযোগ দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাতেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে। এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবার সরকার গঠন করতে হবে। তাই দেশবাসীকে বলব, আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ সেবার সুযোগ দিন। আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকীর দিন শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আধুনিক নিজস্ব স্থায়ী ১১ তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশকে অগ্রযাত্রার পথ দেখাচ্ছে। দেশের অগ্রগতি এনে দিয়েছে। সব দিক থেকে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেবল আওয়ামী লীগই দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি এনে দিতে পারে, এটা দেশের জনগণও মনে রাখে। আগামীতেও মনে রাখবে। বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগ একে অপরের পরিপূরক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পেয়েছে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগকে বার বার দেশ সেবার সুযোগ প্রদান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা এই মর্যাদাকে ধরে রেখে দেশকে আরও সমৃদ্ধিশালী এবং উন্নত করে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করার সক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগের রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশবাসীর খাদ্য, মাথা গোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। পাশাপাশি ধনী-গরিবের বৈষম্যও কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পুরনো কার্যালয়ের জায়গায় দলের নতুন কেন্দ্রীয় ও প্রধান এই কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। জুমাতুল বিদা এবং লাইলাতুল কদর ছাড়াও রোজার মাস ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এবার সংক্ষিপ্ত কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি। আর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানটিও ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে। এরপরও দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম ও সমমনা সংগঠনগুলোর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অনুষ্ঠানে সমবেত হন। বিশেষ করে জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজের সমন্বয়ে গড়া টুপি মাথায় দিয়ে আওয়ামী যুবলীগের বিশাল শোডাউন সবার নজর কাড়ে। এর আগে সকাল ১০টায় অনুস্থানস্থলে পৌঁছেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, মাহবুবউল আলম হানিফসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা ছাড়াও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, সংসদ সদস্যগণসহ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গড়ে উঠার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শে নিজেদের গড়ে তুলুন। দেশ ও মানুষের সেবা করুন। কী পেলাম, কী পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। দেশকে, দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটিই বড় কথা। আগামী ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী। তার আগেই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের সেবা করেই দেশকে সামনে দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছেই উদীয়মান সূর্য। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। কিন্তু আমি জানি এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের পদলেহনকারী ও দালালদের অভাব নেই। তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তারা ষড়যন্ত্র করবেই। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। যারা বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেছিলেন, তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা তখন লিখেছিল বঙ্গবন্ধু সফল বিপ্লবী, দক্ষ সংগঠক, কিন্তু ভাল শাসক নন; তারা হয় স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, না হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর হিসেবে কাজ করেছিল। অথবা স্বাধীনতাবিরোধীদের টাকা খেয়ে জাতির পিতার বিরুদ্ধে বদনাম দিয়ে তাঁকে হত্যা করার একটা গ্রাউন্ড তৈরি করেছিল বলে আমার ধারণা। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশের জন্য যা যা করা দরকার, তা করে গিয়েছিলেন। তিনি যদি আর পাঁচটি বছর বেঁচে থাকতে পারতেন, তাহলে তখনই বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হত। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-ের বর্ণনা এবং সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই নৃশংস হত্যাকা-ের আগে নানা অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়। যারা তখন বলেছিল এবং লিখেছিল যে, বঙ্গবন্ধু সফল বিপ্লবী, দক্ষ সংগঠক, কিন্তু ভাল শাসক নন; তারা হয় স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, না হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসর হিসেবে কাজ করেছিল। নয়তো দেশের স্বাধীনতা ও বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কন্যা আরও বলেন, যারা এগুলো লিখেছিলেন, এদের অনেকেই বেঁচে নেই, অনেকেই বেঁচে আছেন। যারা এগুলো লিখেছিলেন, তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার জন্য সব কিছুই করে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন দেশের জন্য যা যা করা দরকার, তা সবই করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যদি আর ৫-১০ বছর বেঁচে থাকতে পারতেন, তাহলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো। দেশের মানুষের কোন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থাকত না। বাঙালী জাতি মর্যাদাবান জাতি হতে পারত। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে তাঁর অসমাপ্ত কাজ অবশ্যই শেষ করতে হবে। আমরা তা করব। পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি ২১ আগস্টের আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস-নির্যাতন ও নেতাকর্মীদের হত্যার বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি দলের জন্য মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেন। যা পরবর্তীতে স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বাধীন সর্বভৌম বাংলাদেশের জন্য বিশ্বের ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি এবং ১১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভে সক্ষম হন। অথচ জাতির পিতাকে হত্যার পর তাঁর নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তাঁর (বঙ্গবন্ধু) নাম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সেটা করতে পারেনি। কেননা সত্য চিরজাগ্রত। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। সাময়িকভাবে এটি করা গেলেও সত্য আবারও আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও উন্নয়নের ধারক আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের জন্মই ছিল বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত যায়। ১৯৫৭ সালের ওই ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগই সেই বাঙালীকে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছে। এই সংগঠনই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার পথ দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ একে অপরের পরিপূরক। শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ শাসনাধীন ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত সময়কে স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করে বলেন, তখনই কেবল দেশের জনগণ প্রথমবারের মতো জানতে পারে যে, সরকার হচ্ছে জনগণের সেবক। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ২০০৯ থেকে বর্তমানকালে, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনায় দেশের অর্থনীতি, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব। আওয়ামী লীগের হাতেই তা হবে। আওয়ামী লীগই পারে, আওয়ামী লীগই পারবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। ২০২০ সাল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। জাতি হিসেবে আমরা বিশে^ আত্মপরিচয়ের সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ এনে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছে, দেশের শাসনতন্ত্র দিয়েছে। এদেশের যা কিছু অর্জন আওয়ামী লীগই এনে দিয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কার্যালয় আমরা ভালভাবে গড়ে তুলব। কেননা আওয়ামী লীগ একটি প্রতিষ্ঠান। এই আওয়ামী লীগই বাংলাদেশকে পথ দেখাচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠন কেবল দেশকে এগিয়ে নেবে না, বিশ^কেও পথ দেখাবে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেন, নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার কথা বলেন। নৌকা ডুবলে বাংলাদেশ ডুবে যাবে। স্বাধীনতা ডুবে যাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ডুবে যাবে। এই নৌকা কোনদিনই ডুববে না। নৌকা ডোবাতে গেলে ধানের শীষই জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে। নৌকা চিরদিনই ভেসে থাকবে। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অভিষ্ঠ লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাব।
×