ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বকচরের রাস্তা ফুলে উঠছে কেন কেউ জানে না

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৪ জুন ২০১৭

বকচরের রাস্তা ফুলে উঠছে কেন কেউ জানে না

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সংস্কারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও যশোরের বকচর-মুড়লী সড়কে কাটছে না দুর্ভোগ। রাস্তার মাঝের অংশ উঁচু ঢিবিতে পরিণত হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার মাটি পরীক্ষা করেও কোন সুফল পাননি। প্রকৌশলীরা বুঝতে পারছেন না, সমস্যাটা কী! আবারও মাটি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে এ বিভাগ। তারা সংস্কারের পর সংস্কার করে চললেও বুঝতেই পারছেন না রাস্তা ফুলে উঠছে কেন? যশোর শহরের হুসতলা থেকে বকচর মাত্র কয়েক শ’ গজ রাস্তা। সংস্কার হলেও কাজে আসছে না ব্যস্ততম এ সড়কটি। সম্প্রতি এ সড়কে আজমল হক নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যুও হয়েছে। সম্প্রতি এ রাস্তায় কিছু ইট-বালি ফেললেও সামান্য বৃষ্টিতে তা আগের রূপই নিয়েছে। প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুষ্টিয়া ছাড়াও আঞ্চলিক অনেক রুটের বাস-ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু মণিহার-মুড়লী যাওয়ার পথে হুসতলা-বকচর পর্যন্ত সড়ক চলাচলের চরম অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। কারণ রাস্তার মাঝের অংশ ফুলে-ফেঁপে উঁচু ঢিবিতে পরিণত হয়েছে, যাতে গাড়ির নিচের অংশ বেধে যাচ্ছে। আর ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। রাস্তার এ বেহাল অবস্থা নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধন, সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়াসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি এ রোডে সড়ক দুর্ঘটনায় আজমল হক নামে ওষুধ কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধি নিহত হন। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মুড়লী মোড় থেকে মোটরসাইকেলযোগে শহরের দিকে আসছিলেন। বকচর র‌্যাব অফিসের পাশে পৌঁছলে ওই স্থানে রাস্তার উঁচু ঢিবিতে বেধে পড়ে যান তিনি। এ সময় বিপরীতমুখী একটি ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আজমলের (৪০) মৃত্যু হয়। তাছাড়া যে কোন মুহূর্তে রিক্সা, ভ্যান, ইজিবাইক উল্টে যাওয়ার ভীতি নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে সর্বক্ষণ। প্রায়ই এ জাতীয় ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে চলতি পথের অসংখ্য যাত্রীকে। এ রাস্তা দিয়ে মূলত পরিবহন, ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার এ পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে। হতাহত হচ্ছে যাত্রীরা। আহত যাত্রীকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে। এলাকার জনগণসহ চলাচলকারীরা জানিয়েছেন, জনগণ যেমন সরকারকে ট্যাক্স দেয়, তেমনি পৌর করও যশোরবাসী পরিশোধ করে নিয়মিত। তবে কেন রাস্তাঘাট সংস্কার না করে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনে নাগরিক অধিকার থেকে যশোরবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? রাস্তাঘাটের এ দুর্দশা লাঘবের দায়িত্বটা কার? একই কথা বলেন স্থানীয় এ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী রাজীব হাসান। তিনি বলেন, পরিকল্পিত সংস্কারের অভাবেই এ সড়কের এমন দশা। বর্ষা হলেই পানি দাঁড়িয়ে যায় এ সড়কে। তাছাড়া ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, রিক্সা, ছোট-বড় ট্রাক, বাস চলাচলের সময় নিচের অংশ বেধে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহনগুলো। স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়ায় মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। এছাড়া রাস্তা খারাপ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সমস্যায়। তারা আরও বলেন, দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ কষ্টের মধ্যে থাকছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন নজরদারি নেই। সাধারণ মানুষ বলছেন, সরকার টাকা খরচ করে সংস্কারের নামে যা করে যাচ্ছে, তার সুফল বেশিদিন তারা ভোগ করতে পারছেন না। রাস্তা কেন ফুলে ঢিবি হয়ে যাচ্ছে তা আগে দেখে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে যা হওয়ার তাই হবে। এ ব্যাপারে যশোর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, গত সপ্তাহে এ রাস্তার মাটি টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু মাটিতে পাথর ও অন্যান্য উপাদান বেশি থাকায় সঠিকভাবে ফলাফল আসেনি। আবারও গভীর থেকে মাটি সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। রিপোর্ট হাতে পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেন রাস্তা ফুলে উঠছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, এটা জানার জন্যই ফের সয়েল টেস্ট করতে হবে। আপাতত চলাচলের জন্য কিছু ইট-বালি এ রাস্তায় ফেলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
×