ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিরিয়ার অবরুদ্ধ দুমা শহরে ধ্বংসের মধ্যেও ইফতার

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৪ জুন ২০১৭

সিরিয়ার অবরুদ্ধ দুমা শহরে ধ্বংসের মধ্যেও ইফতার

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অবরুদ্ধ দুমা শহরে বোমায় ক্ষতবিক্ষত ভবনের সামনে ইফতারির সারি সারি টেবিলের চারপাশে বসা লোকজনের দৃশ্যটি কোন অলীক বিষয় নয়। রাজধানী দামেস্কের বাইরে পূর্বাঞ্চলীয় গোওতা এলাকার শহরে উন্মুক্ত আকাশের নীচে তুলনামূলক শান্তভাবে ইফতার শুধু সহিংসতা কমাতে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের সংগঠিত ইফতার বা রোজা শেষ করে খাবার খাওয়া সবসময় ভবনের ভেতরে করা হত। যা সরকারী বাহিনীর প্রতিনিয়ত বোমা হামলার হুমকি থেকে কিছুটা নিরাপত্তা দিত। তবে এই রমজানে ইফতারের উৎসব লম্বা টেবিলের ওপর লাল কাপড়ে ঢেকে বাড়ির বাইরে করতে হচ্ছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ও আজান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে কমলার শরবত ও খেজুর দিয়ে লোকজন ইফতার করার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রধান খাবারগুলো দ্রুত অনুসরণ করা হয়। ছয়টি টেবিলের প্রতিটির চারপাশে ৪০জন করে বসে ইফতার করছে। অতিরিক্ত লোকজন রাস্তায় বসেই তাদের ইফতার করে ফেলছে। খাবারের মধ্যে শিম, টমেটো, অলিভ অয়েল ও পার্সলে দিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি পদ। পরেরটি টমেটো স্টুর মধ্যে ভাত দিয়ে রান্না আরেকটি পদ। আরও রয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি দই ও টাটকা ফল। স্থানীয় এনজিওর মুখপাত্র মুয়ায়েদ মুহিদীন বলেন, সিরিয়া যুদ্ধের ছয় বছর পর ও বিশেষ করে গোওতায় আমরা চেয়েছি আত্মীয় পরিজনদের একসঙ্গে বসিয়ে খাবার খাওয়াতে। যাতে তারা কিছুটা খুশি হয়। আমরা তাদের যুদ্ধের আগের সময়কার কথা মনে করিয়ে দিয়েছি। যখন তারা খাবার খাচ্ছিল মনে হচ্ছিল বিয়ের ভোজ খাচ্ছে। তুলনামূলক শান্ত ॥ গত মে মাসে সরকারী বাহিনীর সহায়তায় রাশিয়া, ইরান ও তুর্কী সমর্থিত বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যাতে সিরিয়ার বেশকিছু এলাকাকে সংঘাতমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই এলাকাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চিত্রিত ও বাস্তবায়িত করা হয়নি তারপরও পরিকল্পনা নেয়ার পর থেকে অধিকাংশ এলাকায় সংঘর্ষ কমেছে। যার মধ্যে দুমা অন্যতম। শহরটি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলীয় গোওতা অঞ্চলে অবস্থিত। সরকারী বাহিনী সেখানে লক্ষ্য করে প্রতিনিয়ত বোমা হামলা চালাচ্ছে। গত ২০১৩ সাল থেকে শহরটি দখল করে রেখেছে বিদ্রোহী বাহিনী। স্থানীয় লোকজন সেখানে ফসল ফলায় ও অন্যান্য পণ্যগুলো টানেল ও চেকপয়েন্ট দিয়ে পাচার করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শহরটি অবরুদ্ধ থাকা ও বোমা হামলার মধ্যেই আদালাহ ইফতারের আয়োজন করে আসছে। যা এখন পর্যন্ত মসজিদ অথবা মাটির নীচে হচ্ছে। যদিও ওই এলাকাগুলো সবসময় নিরাপদ থাকে না। মুহিদীন জানান, গত বছর আমরা একটি মসজিদে নয় শ’ লোকের ইফতারির আয়োজন করেছিলাম। দু’টি শেল কাছেই আঘাত হানে। এ বছর তুলনামূলক শান্তভাবে খোলা আকাশের নীচে ইফতার করার জন্য এনজিও উৎসাহিত করা হয়। এজন্য ছয়টি ইফতারের আয়োজন করা হয়। খাবারগুলো তৈরি করা হয় রাস্তার ওপর একটি অস্থায়ী রান্নাঘরে। যাতে লাল ও সবুজ রংয়ের কাপড় দিয়ে পর্দা টানা হয়। রান্নার জন্য একটি ধাতব কাঠামো তৈরি করা হয়। প্রধান রাঁধুনি খাবার প্লাস্টিকের প্লেটে খাবার দেয় ও স্বেচ্ছাসেবকরা খাবারগুলো অপেক্ষারতদের পরিবেশন করে। পুরনো দিনের কথা ॥ আবু হাশিস মিনেসা নামে এক অপেক্ষারত রোজাদার বলেন, এই খাবারগুলো পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া কেউ কেউ আমাদের জিজ্ঞাসা করছিল কি হচ্ছে। তারা ভেবেছে আমরা বিয়ের ভোজ খাচ্ছি। এ খাবারগুলো এক অথবা দুটি পরিবারের জন্য নয়। তারা আমাদের প্রতিবেশী সবার জন্য একটেবিলে বসে একসঙ্গে খাওয়ার জন্য খাবার এনেছে। এই খাবার সব বয়সী লোকদের জন্য। যাদের মধ্যে কিছু ছোট মেয়েও ছিল। আদালাহ বলেন, আমরা নারীদের জন্যও খাবার প্রস্তুত করেছি। তবে তা তাদের বাড়িতে সরবরাহ করা হয়েছে।
×