ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুভ সূচনা ॥ এ্যাঞ্জেলা মেরকেল

ইউরোপীয়রা ব্রিটেনে থাকতে পারবে

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৪ জুন ২০১৭

ইউরোপীয়রা ব্রিটেনে থাকতে পারবে

ত্রিশ লাখেরও বেশি ইউরোপীয় নাগরিক সমনাগরিক অধিকার নিয়ে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। খবর ডেইলি টেলিগ্রাফের। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই ন্যায়সঙ্গত ও আন্তরিক প্রস্তাবের প্রতি জোটভুক্ত নেতৃবৃন্দ সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছেন। ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ বৈঠকে টেরেসা মে বলেন, তিনি কোন পরিবার ভাঙ্গতে চান না- আর তাই ইইউভুক্ত যেসব সন্তান বা দম্পতি বাইরে আছে তারা চাইলে ব্রিটেনে গিয়ে নিটকজনের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পারবেন। এছাড়াও গত ২৯ মার্চ তিনি লিসবন চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণা দেয়ার আগেই যারা ব্রিটেনে পৌঁছে তারাও দেশটিতে নাগরিক হিসেবে থাকার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে এ ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এই মর্মে আপত্তি জানিয়েছেন যে, গত ২৯ মার্চ টেরেসা মে চুক্তির ৫০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার যে ঘোষণা দেন তা একতরফা সিদ্ধান্ত ছিল ইইউ জোট তা অনুমোদন করেনি তাই ব্রিটেন যখন চূড়ান্তভাবে জোট ত্যাগ করবে (সম্ভাব্য তারিখ মার্চ, ২০১৯) তার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ইউরোপীয়রা সে দেশের নাগরিক হতে পারবে। তবে টেরেসা মে, ইইউ জোটভুক্ত নেতাদের এই যুক্তি মানতে রাজি হননি। তা সত্ত্বেও তিনি বলেন, ইইউ জোট থেকে সম্পর্ক ছিন্ন (কাট অফ ডেট)-এর পরও যারা ব্রিটেনে প্রবেশ করবে তাদের দুই বছরের ‘আনুকূল্য সময়’ (গ্রেস পিরিয়ড) বরাদ্দ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে তারা ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হবে। এই কাট অব ডেট মার্চ-২০১৭, না মার্চ ২০১৯ হবে এই বিতর্কের বাইরে আরেকটি বিষয়ে টেরেসা মে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন এবং সেটি হচ্ছে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের ক্ষমতার পরিধি নিয়ে। ইইউ নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন যে, ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর ব্রিটেনে অবস্থানরত অভিবাসীদের অধিকার পুরোপুরি সুরক্ষিত হচ্ছে কি না, তার ওপর নজরদারি করার অধিকার ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের থাকবে। কিন্তু জোট নেতাদের এ দাবির বিরোধিতা করে টেরেসা বলেন, ইউরোপীয় নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বা অধিকারের বিষয়টি ইইউ আইনে সন্নিবেশিত আছেÑকিন্তু তা বাস্তবায়নের বিষয়টি ব্রিটেনের উচ্চ প্রশংসিত আদালতগুলোর এখতিয়ারভুক্ত থাকবে। তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে ব্রিটেনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা যেমন স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা সুযোগ পায়, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করে তেমনি ইউরোপীয় নাগরিকেরা এ দেশে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় বা ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তা তদারকি করবে ব্রিটেনের আদালতগুলো। এ ব্যাপারে এই কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে যে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনে ইউরোপিয়ান বিচারালয়গুলোর আর কোন ভূমিকা থাকবে না। ব্রিটেনে তারা তাদের নিজস্ব আইন প্রয়োগ করবে। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে দেয়া এসব বক্তব্যে ইইউ নেতারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আলোচনায় টেরেসা মের অবস্থানকে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল ‘শুভ সূচনা’ বলে অভিহিত করেছেন তবে সেই সঙ্গে তিনি এ কথাটি যোগ করেন যে, সবকিছুই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, ইইউ জোট থেকে চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আরও অনেক বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। অমীমাংসিত এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে উভয় পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন এবং আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়। এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট মীমাংসায় পৌঁছতে হলে ব্রেক্সিট আলোচনা আগামী অক্টোবর পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে বলে এ্যাঞ্জেলা মেরকেল মনে করেন। মেরকেল বলেন, ‘ব্রিটেন ইইউ জোট থেকে বেরিয়ে যাবে এটি এই শীর্ষ বৈঠকের মুখ্য আলোচ্য বিষয় নয়Ñ বরং এ বিষয়ের চেয়ে জোটভুক্ত বাকি ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যত গঠন কী হবে সেটিই আমার কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ বৈঠকের শেষ দিনে অভিবাসন ও অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়াও নিরাপত্তা বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসের একটি রেলস্টেশনে বোমা হামলার ঘটনার পর সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ ব্রাসেলসে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সদর দফতর রয়েছে। ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতর এখানেই অবস্থিত। এই এলাকার নিরাপত্তা বিঘিœত হলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের কর্মদক্ষতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। অতি সম্প্রতি ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সুইডেনসহ বেশ কয়েকটি ইইউ জোটভুক্ত দেশে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালিত হয়েছে। টেরেসা মে তার বক্তব্যে বলেন, যে কোন সদস্য দেশের বিরুদ্ধে হামলা জোটভুক্ত সকল দেশের প্রতি হামলা বলে গণ্য করতে হবে। টেরেসা তার দেশে ইউরোপীয় নাগরিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত করার পাশাপাশি যেসব ব্রিটিশ নাগরিক (প্রায় ১২ লাখ) ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছে তাদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানান। তবে টেরেসা তার বক্তব্যে এটি স্পষ্ট করেননি যে, যেসব অভিবাসী দম্পতি ব্রিটেনে আছেন তারা তাদের উপার্জিত অর্থ ইউরোপে অবস্থানরত তাদের সন্তান বা পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠাতে পারবেন কি না। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রাটা বলেন, টেরেসা মের কথায় অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সম্মেলনে উপস্থিত অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর খৃশ্চিয়ান কার্ন বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে যা থেকে সেখানের অভিবাসী ইউরোপীয় নাগরিকদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়নি।
×