ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৩ জুন ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত হচ্ছে

কাওসার রহমান ॥ শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনের আগে প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর আগামী দুই বছরের জন্য প্রস্তাবিত ভ্যাট আইন স্থগিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ১৯৯১ সালের চলতি ভ্যাট আইনটিই বলবত থাকবে। তবে এর সঙ্গে নতুন ভ্যাট আইনের অনলাইন ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। অবশ্য নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করার কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভ্যাট আইনের বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সম্মুখে নতুন ভ্যাট আইনের বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বিকল্প এই প্রস্তাবের খসড়াটি সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। এই খসড়ার ওপর কোন সংশোধনী আনতে হবে কিনা তা তিনি খতিয়ে দেখবেন; যেন নতুন করে কোন বিতর্কের সৃষ্টি না হয়। জানা যায়, আগামী শনিবার এই বিকল্প খসড়া প্রস্তাবনা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২৮ জুন এ সংক্রান্ত বিস্তারিত কথা বলবেন সংসদে তার বাজেট বক্তৃতায়। এনবিআর সূত্র জানায়, চলমান আইন বহাল থাকলে তার সঙ্গে নতুন করে যোগ হবে ভ্যাট অনলাইন। এর মানে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন প্রদানসহ বেশিরভাগ কার্যক্রম অনলাইনে করতে হবে। তবে নতুন আইন বাস্তবায়ন না হলে রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি দেখা দেবে সেটা ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ব্যাংকিং খাত থেকে কোন ঋণ গ্রহণ করেনি। আগামীতে প্রয়োজন হলে এ খাত থেকে ঋণ নিতে পারবে সরকার। তাছাড়া পুরনো আইনের সঙ্গে অনলাইনে ভ্যাট প্রদানের ব্যবস্থা কার্যকর হলে আরও রাজস্ব আদায় বাড়বে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জনঅসন্তোষ, ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদের কারণে সরকার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে গেল। কেননা, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটই শেষ বাজেট, যেটি এই সরকার পুরো মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে পারবে। ফলে এই বাজেটের প্রভাব ২০১৮ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট এই সরকার দেবে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সময় পাবে মাত্র তিন থেকে চার মাস। এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে জানুয়ারির প্রথম দিকে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির তিন মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। গত ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন। ওই বাজেটে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। এর আগে ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে নতুন ভ্যাট আইন পাস করা হয়েছে। এই আইনে কিছু সেবা ও পণ্য ছাড়া প্রায় সব সেবা ও পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সর্বস্তরে এই হারে ভ্যাট দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন। তারা বলেছেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হওয়ার মতো আর্থ-সামাজিক অবস্থা দেশে বর্তমানে নেই। এই আইন বাস্তবায়ন করা একেবারেই অসম্ভব। এটি বাস্তবায়ন হলে সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে। যার প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। বর্তমান চালসহ নিত্যপণ্যের দাম এমনিতেই উর্ধমুখী। এই অবস্থায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে এগুলোর দাম আরও উস্কে যাবে। এছাড়া ব্যবসায়ীরাও ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামার হুমকি দিয়েছেন। সূত্র জানায়, আগামী ২৯ জুলাই বাজেট পাস হবে। তার আগেই ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের ব্যাপারে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা পেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর এসব বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের কাঠামো চূড়ান্ত করবেন বলে জানা গেছে।
×