ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

এবার নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনছেন তরুণীরা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ জুন ২০১৭

এবার নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনছেন তরুণীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজান প্রায় শেষের পথে। হাতেগোনা কদিন পরই ঈদ-উল-ফিতর। সর্বত্রই বইছে ঈদের আনন্দের বার্তা। ঈদ আনন্দকে যোগান দিতে কেনাকাটার যুদ্ধে ক্লান্তিহীন ছুটছেন রাজধানীবাসী। এখন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনতে সবাই ছুটছেন গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে। কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ উপহার দেয়ার জন্য গহনা কিনছেন। নতুন ডিজাইনের পুঁতি, কড়ি, শেল, সুতা, কাঠ ও পিতলের তৈরি গহনার প্রতিই তরুণীরা বেশি আগ্রহী। তবে এবার স্টোনের গহনাও বেশ চলছে। তবে উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ ডায়মন্ডের গহনায়। এছাড়া রুপার ওপর স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া গহনা ও ইমিটেশনের গহনায়ও চাহিদা মেটাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। রাজধানীর চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি ও বাইতুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গহনার দোকানগুলোতে এখন বেশ ভিড়। শপিংমলগুলোতে গহনার দাম নির্ধারিত থাকলেও ছোট দোকানগুলোতে তা থাকে না এবং এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। বাজার ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন গহনার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে হ্যান্ডমেইড কাঠের, মেটাল, পিওর সিলভার, অক্সি-সিলভার, গোল্ড পলিশ, গোল্ড প্লেটেড ইত্যাদির গহনা। এসব গহনার মধ্যে নেকলেস, মাদুলি, ঝুমকা, কানের দুল, ফিঙ্গার রিং, খোঁপার কাঁটা, বাজু, পায়েল, ব্রেসলেট, পায়েল ইত্যাদি। ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ফোরাল, জিওমেট্রিক ইত্যাদি মোটিফ। অভিজাত পোশাক প্রতিষ্ঠান আড়ং, কে ক্রাফট, অঞ্জস, ওজি, রঙ, দেশাল, নগরদোলা প্রভৃতি দোকানেও গহনার বিক্রি বেশ ভাল। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেটেই রয়েছে গহনার দোকান। তবে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে রাস্তার ওপর বসা ইমিটেশন গহনার দোকানগুলোতে কমদামে গহনা কেনার সবচেয়ে ভাল জায়গা। ফুটপাথের এসব দোকানে এখন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এসব দোকানে কানের দুল, মালা, চুলের ক্লিপ হিজাবের ব্রুজ প্রভৃতির বিক্রি বেশি। মৌচাক মার্কেটের পাশ ঘেঁষেও বসেছে এসব ইমিটেশনের গহনার দোকান। সেখানেও ক্রেতাদের লক্ষণীয় ভিড় দেখা গেছে। সেট চুড়ির দাম ১০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। কানের টপ ৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাল স্টোনের দুল কিংবা মালার দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন ধরনের লকেটসহ চিকন চেইন পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ক্লিপ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়ির বিক্রিও বেশ ভাল। রাজধানী অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণের গহনার দাম মধ্যবিত্তের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে রুপার ওপর স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া গহনা বেশি কিনছেন মধ্যবিত্ত নারীরা। এসব দোকানে তাই ভিড়ও বেশি। মৌচাক মার্কেটে রুপার ওপর স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া গহনা বানাতে এসেছেন শামীমা দোলা। তিনি বলেন, স্বর্ণের গহনা তো আছেই কিন্তু সেটা থাকা আর না থাকা সমান। কেননা এসব গহনা পরে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। তাই এবার একসেট রুপার গহনা বানাতে এসেছি। নিউমার্কেট গাউছিয়া ও চাঁদনী চক মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পাথরের সেটগুলো ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, কুন্দন সেট ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা, এডি (পাথর) সেট ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইমিটেশনের মালার সেট সাড়ে ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, কানের দুল ১৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চুড়ি ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, হাতের ব্রেসলেট ১০০ টাকা থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা, আংটি ১০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটির বৃষ্টি ইমিটেশন জুয়েলারি এ্যান্ড জেমসের বিক্রেতা জুয়েল রানা জানালেন, বড়দের কানের দুল ছোট-বড় সাইজের ইমিটেশন ও পাথরের পাওয়া যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। হাতের ব্রেসলেট ৩০০ থেকে ৫০০, চুড়ি গোল্ডেন এ্যান্টিক, সুতার কাজ করা সেটসহ ৩০০-৫৫০, পায়েল ২৫০-৩৫০, থাই কাঁকড়া নর্মাল ৫০, স্টোন বসানো ২৫০, স্টোন বসানো সাইড ক্লিপ ২০০-২৫০, রিং ১০০-৩০০, লকেট ৩০০ ও স্টোন বসানো গলার সেট ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ঈদের কেনাকাটায় স্বর্ণ কিংবা রুপার মধ্যে সন্তুষ্ট থাকলেও উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ ডায়মন্ডের গহনায়। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, আল হাসান ডায়মন্ড গ্যালারি, অলংকার নিকেতন, ভেনাস ডায়মন্ড কালেকশন, আফতাব জুয়েলার্স, ডায়মন্ড গার্ডেন, ডায়মন্ড হ্যাভেন, সঙ্গীনী ডায়মন্ডসহ প্রতিটি শোরুমে শোভা পাচ্ছে হিরার গহনা। ঈদ উপলক্ষে এসব শোরুমে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উচ্চবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তদের মধ্যেও কেউ কেউ হিরার গহনা কিনছেন। বসুন্ধরার ডায়মন্ড গার্ডেন, গুলশানের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, বেইলি রোডের ডায়মন্ড গ্যালারি ঘুরে দেখা গেল, মানভেদে এক ক্যারেট মানের বোম্বে কাট হিরার দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর একই মানের বেলজিয়াম কাট হিরার দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ডায়মন্ডের কানের দুলের দাম পড়বে ১৬ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা, নাকফুল ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৮ হাজার ২০০ টাকা, আংটির দাম পড়বে সাড়ে ১২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, লকেট ৭ হাজার থেকে ৫০ হাজার, ব্রেসলেটের দাম ৮৪ হাজার থেকে লাখ টাকা। এছাড়া হিরার সেটের দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের গহনার পাশাপাশি ঈদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েরা কিনছেন লিপস্টিক, নেইলপলিশ, আইশ্যাডো, আইলাইনার, মেকআপ বক্স ইত্যাদি। এর পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে ফাউন্ডেশন, প্যান কেক, বডি স্প্রে, পারফিউম, প্যানস্টিক ইত্যাদি। দেশী-বিদেশী সব ধরনের কোম্পানির পণ্যই বাজারে রয়েছে। লিপস্টিক ও নেইলপলিশ বেশি বিক্রি হচ্ছে জর্ডানা, লরিয়াল, জ্যাকলিন, র‌্যাভলন, মেবেলিন ইত্যাদি কোম্পানির। পারফিউম পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিভেদে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়, বডি স্প্রে ৩০০ থেকে ৯০০, মেকআপ ও ফেস মেকআপ ৪০০ থেকে ৩ হাজার, আইলাইনার ১০০ থেকে ৪০০, আইশ্যাডো ৫০ থেকে ২০০, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ২৫০ থেকে ৪০০, কাজল ১০০ থেকে ৩০০, আলতা ৮০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। বিক্রেতারা জানালেন, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন উজ্জ্বল শেড যেমনÑ লাল, গোলাপী ইত্যাদি রঙের লিপস্টিক চলছে বাজারে বেশ। নেইলপলিশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না, তবে অন্যবারের মতো এবারও বিভিন্ন রঙের কন্ট্রাস্টেও নেইলপলিশ পরতে পছন্দ করছেন তরুণীরা। তবে ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে কম মূল্যের বিভিন্ন প্রসাধনী।
×