ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চিনি সেমাই দুধ পোলাওয়ের চাল কেনার ধুম

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৩ জুন ২০১৭

চিনি সেমাই দুধ পোলাওয়ের চাল কেনার ধুম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদ সামনে রেখে এবার চিনি, সেমাই, দুধ, মাংস ও পোলাওর চাল কেনার ধুম পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারগুলোতে। চাহিদা বাড়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এবারের ঈদে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাসমতি চালও বেশ ভাল বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা ছুটছেন মাছের বাজারেও। ঈদে অতিথিদের আপ্যায়নে ইলিশ, চিংড়িসহ বিভিন্ন জাতের মাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। রমজানের মাঝে চিনির দাম কিছুটা কমলেও ঈদ সামনে রেখে কেজিতে তিন টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ টাকায়। মিল্ক ভিটা, আড়ং ও প্রাণ তরল দুধের দাম লিটারে বেড়েছে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। বর্তমান প্রতি লিটার তরল দুধ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি, পাকিস্তানী মুরগি এবং গরুর মাংসের দামও চড়া। বাজারভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের আগ মুহূর্তে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরেজমিন রাজধানীর কাওরানবাজার, কাপ্তানবাজার, ফকিরাপুল বাজার, মালিবাগ বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপার শপ ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের চাহিদামতো পণ্য বিক্রি করতে দোকানের সামনেই বিভিন্ন মানের সেমাই আর মসলার পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা চাহিদামতো যে পণ্য চাচ্ছেন বিক্রেতারাও সেভাবেই বিক্রি করছেন। এসব স্থানে ক্রেতাদের পণ্য কিনতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সব মিলিয়ে বিক্রেতারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেমাই, চিনি ও মসলা ছাড়াও গুঁড়া দুধ, ঘি, সয়াবিন তেল, নারিকেল, সুগন্ধি চাল, কিশমিশ, বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদামসহ বিভিন্ন আইটেমের পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এদিকে, ঈদের আয়োজনে যেন সেমাই ছাড়া চলে না। তাই প্রতি বছরই ঈদ এলে সেমাইয়ের কদর বেড়ে যায়। রাজধানীর ফকিরাপুল বাজারে সেমাই কিনতে আসা কামরুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদে বাসাবাড়িতে সেমাই না হলে চলে না। ঈদের দিন সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজনরা আসতে থাকে। তাদের আপ্যায়নে সেমাই না হলেই নয়। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা চিকন সেমাই কেজিপ্রতি মান ও দোকানভেদে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা মুদি দোকানে বনফুল, কুলসুন, প্রাণ, প্রিন্স, কিশোয়ান, ডেনিশ, প্রিন্স ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। আর ৫০০ গ্রামের স্পেশাল লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। কাওরানবাজারের সেমাইয়ের একাধিক পাইকারি বিক্রেতা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার একটু বেশি দামেই সেমাই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে সেমাইয়ের দাম সেভাবে বাড়েনি। তারা বলেন, সেমাইয়ের দাম ও সরবরাহ দুটো সঠিকভাবে চলছে। তবে ঈদসংশ্লিষ্ট কিছু মসলা আর চিনির দাম ওঠানামা করছে। বিশেষ করে রমজানের মাঝামাঝি সময়ে চিনির দাম কিছুটা কমলেও এখন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, সেমাই বিক্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ফিরনি রান্নার অপরিহার্য অনুষঙ্গ গুঁড়া দুধের বিক্রি বেড়ে গেছে। গুঁড়া দুধ ডানো প্রতি কেজি ৫৭০-৫৮০, ডিপ্লোমা ৫৪৫-৫৫৫, ফ্রেশ ৪২০-৪৫০ এবং মার্কস ৪২০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কাপ্তানবাজারের জামশেদ স্টোরে গুঁড়া দুধ কিনতে আসা নাহিদা সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, সেমাইসহ বিভিন্ন মিষ্টান্ন বানাতে দুধের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া রাজধানীতে খাঁটি তরল দুধ সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই গুঁড়া দুধের ওপরই ভরসা করতে হয়। এছাড়া ঈদকে ঘিরে পোলাওর চালের কদরও বেড়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা চাল মানভেদে ৯৫-১০৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়াও প্যাকেট প্রাণ ও চাষী ব্র্যান্ডের চিনিগুঁড়া ১১০-১১৫ টাকা ও রাঁধুনী চিনিগুঁড়া ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঈদবাজারে এবার চাহিদা বেড়েছে বাসমতি চালের। বিক্রেতারা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাসমতি চাল আমদানি হচ্ছে। দিন দিন এসব চালের ক্রেতা ও চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি প্যাকেটজাত বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। ব্রয়লার ও দেশী মুরগির দাম বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬৫ এবং দেশী মুরগি ৩৭০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়ে গেছে খাসির মাংসের দামও। মানভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি খাসির মাংস। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে গরম মসলার বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাওরানবাজারের মসলা বিক্রেতারা জানান, দু’-একটি বাদে মসলার বাজার এখনও স্বাভাবিক। বাজারে কিশমিশ ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ২৬০ টাকা মূল্যের এক প্রকার কিশমিশের দাম ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া ১৩শ’ টাকা, ১৩শ’ ৫০ টাকা, ১৩শ’ ৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি এলাচ। ১৭শ‘ টাকা কেজিতেও ভালমানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে। আলু বোখারার দাম কিছুটা বেড়েছে। ৪২০ টাকার আলু বোখারা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকায়। কালো কাঠ বাদাম ৬৩০ টাকায়, সাদা কাঠ বাদাম ৭৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাজু বাদাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৮৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ঘি, প্রসাধনী, সাবান বিক্রিও বেড়েছে।
×