ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মসুলের গ্র্যান্ড আল নূরি মসজিদ ধ্বংস করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

পরাজয়ের মুখে আইএস

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৩ জুন ২০১৭

পরাজয়ের মুখে আইএস

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি বলেছেন, মসুলের একটি প্রাচীন মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে আইএস কার্যত তাদের পরাজয় স্বীকার করে নিযেছে। তদের মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধবিমান ও সামরিক উপদেষ্টারা সহায়তা করছে। গত বছর ১৭ অক্টোবর মসুল পুনরুদ্ধার অভিযান শুরু হয়। তিন বছর আগে যেখানে দাঁড়িয়ে খিলাফতের ঘোষণা দিয়েছিলেন আবু বকর আল বাগদাদি, তার দল ইসলামিক স্টেট মসুল শহরের সেই গ্র্যান্ড আল নূরি মসজিদই গুঁড়িয়ে দিয়েছে, ইরাকি বাহিনী এ খবর জানিয়েছে। বিবিসি। আইএস দাবি করেছে, মার্কিন যুদ্ধবিমানের হামলায় মসজিদ ভবনটি ধ্বংস হয়েছে। ইরাকি নিরাপত্তাবাহিনী, কুর্দি পেশমার্গা যোদ্ধা, সুন্নি আরব উপজাতি এবং শিয়া মিলিশিয়ারা সম্মিলিতভাবে ইরাকের এ গুরুত্বপূর্ণ শহর পুনরুদ্ধারে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বাদশ শতকে নির্মিত মসজিদটি তার দেড়শ ফুট উঁচু হেলানো মিনারের জন্য বিখ্যাত ছিল। এলিট কাউন্টার টেররিজম সার্ভিসের সদস্যরা মসুলের পুরনো অংশে মসজিদের ৫০ মিটারের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার পর বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ইরাকি কমান্ডার একে আইএসের আরেকটি ঐতিহাসিক অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য আইএস তাদের মুখপাত্র আমাকে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, মসজিদটি ধ্বংস হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায়। প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি এ মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে আইএসের পরাজয় স্বীকার করে নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসেবে দেখছেন। ২০১৪ সালে এ মসজিদের মেহরাব থেকেই খিলাফতের ঘোষণা দেন আইএসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি। আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, আল-নূরি মসজিদ ও এর বিখ্যাত মিনার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জোসেফ মার্টিন বলেছেন, ইরাক আর মসুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আইএস ধ্বংস করল। এর আগেও ইরাক ও সিরিয়ার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন ধ্বংস করেছে আইএস। জাতিসংঘ এর আগে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল জঙ্গী গ্রুপটি মসুলের এক লাখ মানুষকে জিম্মি করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ইরাকি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে পূর্ব মসুল পুরোপুরি আইএসমুক্ত করা হয়। তবে পশ্চিম মসুলের সরু ও আঁকাবাঁকা রাস্তার কারণে সেখানে অভিযান চালাতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মসুলের আল নুরি মসজিদটি ১১৭২ সালে তৈরি করা হয়েছিল। বিখ্যাত একজন ব্যক্তির নামে এটির নামকরণ করা হয়েছিল যিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খ্যাতি আর্জন করেন। রবিবার কমান্ডাররা অভিযানের চূড়ান্তপর্ব শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। ইরাকের সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও পুলিশ শহরের পুরনো অংশকে লক্ষ্য করে চতুর্দিক থেকে হামলা শুরু করেছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের বিশ্বাস বর্তমানে মসুলে ৩শ’র বেশি আইএস জঙ্গী নেই। অক্টোবরে অভিযান শুরুর সময় সেখানে প্রায় ৬ হাজার জঙ্গী ছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বিমান থেকে লিফলেট ফেলা হয়। এতে তাদের খোলা জায়গা পরিহার করার আহ্বান জানানো হয় সম্ভব হলে পালাতে উৎসাহ দেয়া হয়। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, আইএস জঙ্গীরা আত্মরক্ষার্থে মসুলের ১ লাখের ওপরে সাধারণ নাগরিককে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকতে পারে। নূরি আল মসজিদটি মসুলের সবচেয়ে বিখ্যাত সুন্নি মসজিদ। খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ত্ব দেয়া মুসলিম নেতা নূর আলদিন মাহমুদ জানগির নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়। এটাই সেই জায়গা যেখানে আইএসের নেতা আবু বকর আল বাগদাদি এক এবং মাত্র একবারই জনসম্মুখে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর আইএস ইরাক এবং সিরিয়ায় একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। কিন্তু আইএস জঙ্গীরা উত্তর ইরকে বিদ্যুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি খুব কমই শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। ৯ মাস আগে ইরাকি সরকার শহরটি ফিরে পেতে অভিযান শুরু করার পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে এমন সব তথ্যই দেয়া হয়েছে।
×