ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন ভ্যাট আইনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসছে

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ২৩ জুন ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেট পাসের দিন নতুন ভ্যাট আইনটির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসছে। ভ্যাট আইন-২০১২ পুরোপুরি না আংশিক বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা চলছে। সংসদ ও সংসদের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে আইনটি স্থগিতও করা হতে পারে। আগামী ২৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হচ্ছে। ওইদিন ভ্যাট আইনের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু চারদিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এ আইনটির বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন সংশয় তৈরি হয়েছে। এ বাস্তবতায় ঘোষণা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না করে বরং তা পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। পুরোনো আইনটিই আরও এক-দুই বছর বহাল রাখা হতে পারে এ রকমও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কিংবা নতুন আইনটি বহাল রাখা হলেও যেসব ক্ষেত্রে দাম বাড়তে পারে, সেসব পণ্য ও সেবাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত ভ্যাট ও আবগারি শুল্কের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন ও আবগারি শুল্কের বিষয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বাজেট পাসের আগে এগুলোর সমাধান করতে হবে। বাজেটের প্রভাবে যাতে জনমনে কোন ধরনের অসন্তোষ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে বাজেট পাসের আগেই এ বিষয়গুলো ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার বাজেট দিয়েছে জনগণের উন্নয়নের জন্য। বাজেটের কারণে যদি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয় এমন বাজেট সংসদে পাস করা হবে না। বাজেটকে অবশ্যই জনবান্ধব করতে হবে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর প্রস্তাবিত বাজেট পাসের আগে ভ্যাট আইনে বড় ধরনের ছাড় ও পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাটের হার কমানো, ভ্যাটমুক্ত পণ্য ও সেবার তালিকা বাড়ানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা খাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত করা, খাতভিত্তিক ভ্যাটের হার কমানো। নতুন আইনে গ্যাস, বিদ্যুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর ওপরও এ হার কমানো হচ্ছে। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জনঅসন্তোষ, ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদ এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার নতুন ভ্যাট আইনে বড় ধরনের ছাড় দিতে যাচ্ছে। কেননা, প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটই শেষ বাজেট যেটি এ সরকার পুরো মেয়াদে বাস্তবায়ন করতে পারবে। ফলে এ বাজেটের প্রভাব ২০১৮ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট এ সরকার দেবে সেটি বাস্তবায়নের জন্য সময় পাবে মাত্র ৩ থেকে ৪ মাস। এদিকে, গত ১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন। ওই বাজেটে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। এর আগে ২০১২ সালে জাতীয় সংসদে নতুন ভ্যাট আইন পাস করা হয়েছে। এ আইনে কিছু সেবা ও পণ্য ছাড়া প্রায় সব সেবা ও পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়। একইসঙ্গে সর্বস্তরে এ হারে ভ্যাট দেয়ার নিয়ম করা হয়। এ আইন বাস্তবায়ন হলে পণ্য আমদানি, উৎপাদন, বিপণন ও বড় বড় দোকানে খুচরা পর্যায়েও ভ্যাট দিতে হবে। এতে ভ্যাটের হার বেশি পড়বে। যে কারণে ভ্যাট রিবেট দেয়ার নিয়ম করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে হিসাব রাখলে ১৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাটের অর্থ ফেরত দেয়া হবে। নতুন আইনে গ্যাস, বিদ্যুত, চিকিৎসাসেবাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। ভ্যাট আইনের কঠোর বিরোধিতা করে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এ ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন। তারা বলেছেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হওয়ার মতো কাঠামো বর্তমানে নেই। এ আইন বাস্তবায়ন করা একেবারেই অসম্ভব। এটি বাস্তবায়ন হলে সব পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে। যার প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। বর্তমান চালসহ নিত্যপণ্যের দাম এমনিতেই উর্ধমুখী। এ অবস্থায় ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে এগুলোর দাম আরও উস্কে যাবে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামার হুমকি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যেভাবে হিসাব রাখতে হবে এ কাঠামো হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীর রয়েছে, বাকি কারও নেই। ফলে তারা ভ্যাট রিবেট সুবিধা পাবেন না। এছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতা কমে যাবে। তখন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে। দেশের উদীয়মান অনেক শিল্প খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্য ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ও জুতো গরিব মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট এসব পণ্যের ওপরও বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে করে পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। জানা গেছে, ভ্যাট আইনটি চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকেই বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তুতি না থাকায় ওই অর্থবছর থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়নি। ওই সময়ে সিদ্ধান্ত ছিল আগামী অর্থবছর থেকে এ আইনটি কার্যকর করা হবে। এ সময়ের মধ্যে আইনটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হবে। কিন্তু ওই সময়ে ব্যবসায়ীদের কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। নতুন আইন চালু করতে হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কমপক্ষে আড়াই লাখ ইসিআর মেশিন দিতে হবে।
×