ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁদাবাজি-বকশিশ

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৩ জুন ২০১৭

চাঁদাবাজি-বকশিশ

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব। এই চাঁদাবাজি যে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। বরং কমবেশি সারাদেশেই তা পরিব্যাপ্ত। তবে এ কথাও সত্যি যে, এবারের রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের তুলনায় ভাল। অন্তত বড় কোন ডাকাতি, চুরি-ছিনতাই-রাহাজানির ঘটনা ঘটেনি। খুচরা ছিনতাইও কমেছে অনেক। বাস্তবতা হলো, সাধারণভাবে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। প্রায় সব সুপার মার্কেট, সুপারশপে বসেছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশ-র‌্যাব-গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সর্বোপরি এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, অনলাইনে পেমেন্ট ইত্যাদি তো আছেই। সচেতন মানুষ এখন বেশি পরিমাণে নগদ টাকা সঙ্গে বহন করে না। এর পাশাপাশি দেশব্যাপী অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা তো আছেই। তাই বলে যে চাঁদাবাজির পরিমাণ বা ব্যাপকতা কমেছে, এমন কথা বলা যাবে না। বরং চাঁদাবাজির একটা গালভরা নাম হয়েছে বকশিশ। বকশিশ অবশ্য আগে থেকেই ছিল। আরও ছিল উপরি। এক শ্রেণীর বাঙালীর কাছে শব্দ দুটি খুবই শ্রুতিমধুর। প্রতিষ্ঠানের মালিক বা বসের কাছে হাত কচলাতে কচলাতে বকশিশ কিংবা উপরি চাইতে আদৌ দ্বিধাবোধ করে না অধস্তন। আর ঈদের মতো বড় পালাপার্বণ এলে তো কথাই নেই। তখন এর পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রকারান্তরে এই বকশিশ বা উপরিই যে পরোক্ষভাবে রূপ নেয় চাঁদাবাজিতে। আর এই বকশিশ আদায়ের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া শুধু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা নয়। বরং সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও তা পরিব্যাপ্ত। এই যেমন, বকশিশ বা উপরির তালিকায় সর্বপ্রথমেই চলে আসে পুলিশের নাম, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। এখনও তার ব্যতিক্রম হবে এমনটি আশা করা যেন বাতুলতা। ঈদে কাপড় চোপড়ের চাহিদা ব্যাপক এবং সর্বস্তরে। পুলিশ অথবা সাদা পোশাকের লোকজন দোকানে কিংবা মালামাল আনা-নেয়ার পথে চ্যালেঞ্জ করলেই হলো, চোরাই মাল আছে, প্রতিবেশী দেশের! ব্যস্ কেল্লা ফতে। সে অবস্থায় ব্যবসায়ী তথা দোকানি কি করবে, ক্রেতাদের সামলাবেন, নাকি পুলিশ! অতঃপর দোকানির অবস্থা হয়, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি আর কি! অবশ্য, ইনকামট্যাক্স, কাস্টমস, ভ্যাট, গ্যাস, বিদ্যুত, টেলিফোন, ওয়াসার মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও কম যায় না। সারা বছর ধরে সেবা দেয়ার একটা মাশুল আছে না! এর পাশাপাশি আছে সন্ত্রাসী, মাস্তান, রাজনৈতিক কর্মী তথা ক্যাডার, নেতা, পাতি নেতা ইত্যাদি। সেলফোনে অজ্ঞাত নম্বর থেকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে বলে দেয়, আমি বিকাশ বলছি, কিংবা সুব্রতÑ পাঁচ লাখ টাকা রেডি রাখবেন, আমার লোক যাবে ...। এর পাশাপাশি আছে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল, ফেরিতে পারাপার, টোল আদায়, লঞ্চ-স্টিমারে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ইত্যাদির চাঁদাবাজি। সারকথা হলো, চাঁদাবাজি, বকশিশ কিংবা উপরি যে নামেই যেভাবেই চলুক না কেন, একেবারে কমানো বা বন্ধ করা যাবে না কিছুতেই। তবে দেশ যত ডিজিটাল হবে, উন্নতির পথে যাবে, মানুষের আয়-উন্নতি যত বাড়বে, ততই এর পরিমাণ ও আধিক্য কমে আসবে।
×