ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চালের দাম

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৩ জুন ২০১৭

চালের দাম

পাঁয়তারা চলছিল দীর্ঘদিন থেকেই। অবশেষে আমদানিকারক, ব্যবসায়ীদের দাবি ও চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত হটেছে সরকার। চাল আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। চালের বাজারে স্বস্তি আনার জন্য সরকার এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে আমদানি বেড়ে কমে যায় চালের দাম। তবে কতটা কমবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কারণ, সেখানেও যে চালের দাম নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকবে না, তা হলফ করে বলা যায় না। সত্যি বলতে কি, গত কয়েক বছর ধরেই দেশে ধান-চালের বাজারে একটা স্বস্তি ও স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছিল। দেশ খাদ্য উৎপাদন বিশেষ করে ধান-চাল উৎপাদনে হয়ে উঠেছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি উদ্বৃত্ত কিছু পরিমাণ চাল বিদেশে রফতানিও হয়েছে। চালের দাম কম থাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এমনকি দিনমজুররা বেশ স্বস্তিতেই ছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে বরং ধানের দাম কম থাকায় বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে কৃষককে। এ অবস্থায় সরকার কৃষককে স্বস্তি দিতে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্যও বাড়িয়েছে সময় সময়। অবশ্য মধ্যস্বত্বভোগী, আড়তদার ও চাতাল মালিকদের দৌরাত্ম্য ও দাপটে মূল্যবৃদ্ধির এই সুফল শেষ পর্যন্ত কৃষকের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। যা হোক, কৃষকরা যাতে দুটো পয়সা পায় তা নিশ্চিত করতে সরকার চাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এতে যেসব ব্যবসায়ী নিয়মিত চাল আমদানি করতেন তারা হাত গুটিয়ে বসে পড়েন এবং অপেক্ষায় থাকেন সুযোগের। জানুয়ারি থেকে দেশে বাড়তে থাকে চালের দাম, বিশেষ করে মোটা চালের। ইত্যবসরে অসময়ে ভারি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল, অকালবন্যা, হাওড় অধ্যুষিত ৭টি জেলায় ফসলহানি, ১৬টি জেলায় ধানে পোকার আক্রমণ ও জলাবদ্ধতা এতে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে মোটা চালের দাম, যা এখন প্রায় গরিবের নাগালের বাইরে। বাস্তবে বাজারে কিন্তু চালের অভাব নেই। মধ্যস্বত্বভোগী চাতালের মালিক, মজুদদার, আড়তদারসহ বাজারের ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চালের মজুদ যথেষ্ট ও সন্তোষজনক। তবে সরকারী গুদামে এই মুহূর্তে চালের মজুদ কিছু কম। জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাল আমদানির ওপর থেকে শুল্কও হ্রাস করা হয়েছে। অচিরেই বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়। তবে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মনে রাখতে হবে যে, ধান-চালের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে নয়; বরং যুক্তিসঙ্গত মূল্যবৃদ্ধির দিকে নজর দেয়া বাঞ্ছনীয়। সরকারকেও বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। প্রতি বছর সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়েও। জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে এই তথ্য প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী। দেশে ২০১৫-’১৬ অর্থবছরে প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ কোটি ৯১ লাখ। বিআইডিএসের সমীক্ষা-২০১২ অনুযায়ী চালের দৈনিক জনপ্রতি চাহিদা প্রায় ৪৬২ গ্রাম। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এও সত্য যে, কিছু মানুষ বিশেষ করে নিম্ন আয়ভুক্ত দরিদ্র শ্রেণীর জন্য সরকার ১০ এবং ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। তবে তা না করে এখন বরং নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদেরও উচিত হবে, জনসাধারণ ও সরকারকে জিম্মি কিংবা কারসাজি করে নয়, বরং আস্থায় নিয়েই ব্যবসা করা।
×