ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জের আনন্দবাজার সড়কের বেহাল অবস্থা

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২২ জুন ২০১৭

সুনামগঞ্জের আনন্দবাজার সড়কের বেহাল অবস্থা

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভারপুর উপজেলায় কার্যাদেশর সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার ৩মাস পরও ধনপুর-তরঙ্গিয়া আনন্দবাজার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু-ই হয়নি। এতে সড়কে চলাচলরত জনসাধারণ ও গাড়িচালকরা পড়েছেন সীমাহীন দূর্ভোগে। অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্ধনুযায়ী ফান্ডে টাকা থাকালেও বৃষ্টির অজুহাতে ঠিকাদারের দায়িত্ব অবহেলা এবং গাফিলতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে (১জানুয়ারী-৩০ মার্চ) কাজ শুরু করলে বৃষ্টি বাদলের অজুহাত দেখাতে পারতো না। এতে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যাক্তিরাও গাফিলতির জন্য দায়ী বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা। এলজিডির সুত্রে জানা গেছে, ধনপুর, তরঙ্গিয়া, আনন্দবাজার লাউরেরগড় সড়কের ২কি.মি থেকে বিশ্বম্ভরপুর ৪কি.মি. ও ০০ কি.মি. থেকে বিশ্বম্ভরপুর ২ কি.মি. সড়কের সংস্কার কাজের জন্য ১কোটি ৪২ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেযা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরা এন্টারপ্রাইজ ও আবুল কাশেম জাকির এন্টারপ্রাইজ এ কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবুল কাশেম জাকির গত ১ জানুয়ারী থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে ১৬ মার্চ শেষ করার কথা ছিল। তিনি কাজ শুরু করলে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কাজ বুঝিয়ে দেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর অপরদিকে মেসার্স নুরা এন্টারপ্রাইজ গত ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ মার্চের মধ্যে সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করারও কথা ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই করেনি। এবিষয়ে এলজিইডির কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সতর্কীকরণ পত্র দিয়ে নিজেদের দায় এড়াতে চাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী ইব্রাহিম মিয়া জানান কাজে গাফিলতি থাকলে দরপত্রের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরজমিনে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, সুনামগঞ্জ-বরছড়া শুল্ক স্টেশন যাওয়ার এই সড়ক বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর থেকে তরঙ্গিয়া আনন্দবাজার পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটি কৃষিতে সমৃদ্ধ এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক ব্যবসায়ী, শ্রমজীবি মানুষের চলাচল ও মালামাল পরিবহনে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। এই আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজারো ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। ব্যাপক যানবাহন চলাচল এবং বৃষ্টির কারণে আরসিসি ডালাই উঠে গিয়ে রডগুলো বিপদজনক অবস্থায় থাকায় পায়ে হেটে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে গেছে। পাথর, ইট, বালু, খোয়া ও বিটুমিন উঠে সড়ক খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী পথচারী ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করে সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ চলছে। সিএনজি অটোরিকশা চালক সাগর মিয়া বলেন, এই রাস্তাটি গত ১বছর ধরে বন্ধ থাকায় আমাদের আয় রোজগার অর্ধেকের চেয়েও বেশি কমে গেছে। লেগুনা চালক আব্দুর রশীদ জানান, ধনপুর থেকে তরঙ্গিয়া আনন্দবাজার হয়ে লাউরেরগড় সীমান্তে যেতে যেখানে ৩৫-৪০ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে সড়কটির বেহাল অবস্থার বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সবজি চাষী তরঙ্গিয়া গ্রামের গোলঅপ মিয়া জানান, এই রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পন্য পরিবহন বন্ধ থাকায় কৃষি পন্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বেশির ভাগ সবজি ক্ষেতের মধ্যে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও বরছড়া শুল্ক স্টেশনের শতশত ব্যবসায়ীরাও এই সড়ক দিয়ে চলাচলে নানা মুখি বিপদের আশঙ্কা করছেন। এলজিইডি সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ভারি যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় সড়কটির এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের সুনামগঞ্জে অতিবৃষ্টির কারনে সড়কের সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি। গুণগতমান ঠিক রাখতেই কাজ শুরু ও শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে তিনি জানান।
×