ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলি চাননি, বাধ্য হয়ে ইস্তফা কুম্বলের

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২২ জুন ২০১৭

কোহলি চাননি, বাধ্য হয়ে ইস্তফা কুম্বলের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনিল কুম্বলের মতো মানুষের সঙ্গে কারও এতটা লেগে যেতে পারে বিষয়টা যেন সুনীল গাভাস্কারের বিশ্বাসই হচ্ছে না। যে কারণে ভারতের প্রধান কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন এই লেগস্পিন গ্রেট। সরে দাঁড়ানোর একদিন পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিষয়টা অকপটে স্বীকারও করেছেন কুম্বলে। ডানকান ফ্লেচার থেকে রবি শাস্ত্রীÑ মিশ্র ব্যর্থতায় মোড়ল দেশটির কোচ নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। সেখানে কুম্বলে আসেন জিয়ন কাঠি হয়ে। ওয়ানডে-টেস্ট, দেশ কিংবা বিদেশে, তার অধীনে ভারত কোন সিরিজ হারেনি। সাফল্যের বরমাল্য নিয়ে হাজির হওয়া এমন একজনকে কেবল অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে সরে যেতে হলো, বিষয়টা মেনে নেয়া কঠিন। বোর্ডের (বিসিসিআই) বরাবর দেয়া পদত্যাগ পত্রে কুম্বলে স্পষ্ট করে লিখেছেন, ‘ক্যাপ্টেন আমাকে দলে চাচ্ছে না বলেই সরে গেলাম।’ এমনিতে ৩০ জুন এক বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হতো। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গেই থাকার কথা ছিল। এই সফরে অন্তর্বর্তী দায়িত্বে থাকার কথা তারই। কিন্তু সব ওলটপালট হয়ে গেছে। দায়িত্বের শুরু থেকেই খেলোয়াড় পছন্দ, কোচিং স্টাইলসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধিনায়কের সঙ্গে মতভেদ তৈরি হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দু’দিন আগে সেটি বিস্ফোরণে রূপ নেয়। টিম মিটিংয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে তর্ক বেধে যায়। এ সময় কোহলি বলেন, ‘দলের কেউই আপনাকে কোচ হিসেবে চায় না।’ উত্তরে কুম্বলে বলেন, ‘অনেক হয়েছে, আর না।’ কঠিন ব্যক্তিত্ব সম্পন্নের অধিকারী কুম্বলে বোর্ডকে লেখা পদত্যাগ পত্রেও সেটি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভিভি এস লক্ষণের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ উপদেষ্টা কামিটি গত বছর কোচ হিসেবে কুম্বলেকে নিয়োগ দিয়েছিল। আত্মসম্মানের কথা ভেবেই তাদের অনুরোধ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেননি তিনি। কুম্বলে তার ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, ‘আমার ওপর উপদেষ্টা কমিটির যে আস্থা দেখিয়েছিল তারজন্য আমি সম্মানিত। গত এক বছর যাবতীয় সাফল্যের কৃতিত্ব ভারত অধিনায়ক, গোটা দল এবং সাপোর্ট স্টাফদের। তবু সরে যেতে হচ্ছে, কারণ ক্যাপ্টেন আমাকে চাচ্ছে না।’ পরে সংবাদ মাধ্যমকে কুম্বলে আরও বলেন, ‘বোর্ড আমাকে জানায় যে, আমার কোচিং স্টাইল ক্যাপ্টেনের পছন্দ নয়। যা শুনে আমি খুব অবাক হই। কারণ কোচ-ক্যাপ্টেন সম্পর্কের সীমা আমি বরাবরই মেনে এসেছি। বোর্ড চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটি যে আর ঠিক হওয়ার নয় বুঝতে পেরে নিজেকে সরিয়ে নেয়াটাকেই ভাল মনে হয়েছে।’ কুম্বলের ইস্তফা নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। গ্রেট সুনীল গাভাস্কার, বিষেন সিং বেদীর মতো সাবেকরা মনে করেন, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এটা একটা খারাপ দিন, বাজে উদাহরণ। গাভাস্কার বলেন, ‘অনিল কোচ হয়ে আসার পর থেকে ভারত প্রায় সবকিছুই জিতেছে। আমার মনে হয় না এই সময়ে সে ভুল কিছু করেছে। এই পর্যায়ে কখনও মতের অমিল হতেই পারে, তাই বলে তার অর্জনটাকেও হিসেবে ধরতে হবে। আমি তাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে জানি। এভাবে সরে যাওয়া উচিত হয়নি। ক্রিকেট জীবনে সে কোনদিনই লড়াইয়ে ক্ষান্ত দেয়নি। এই প্রথম তাকে হেরে যেতে দেখলাম। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যই একটা কলঙ্কিত উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ক্রিকেটাররা নরম স্বভাবের কাউকে কোচ চাইছেন, যিনি অনুশীলনের জন্য জোর করবেন না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে পরবর্তী কোচ হবেন তাকে ক্রিকেটারদের প্রতিটি কথা মেনে নিতে হবে, না হলে কুম্বলের মতো সরে যেতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক।’ বেদী টুইট করেছেন, ‘কুম্বলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কারণ এই পরিস্থিতিতে তার মতো একজন ভাল মানুষের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’ ভারতের নতুন কোচ হতে যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে বিরেন্দর শেবাগ, লালচাঁদ রাজপুত, রিচার্ড পাইবাস, টম মুডি অন্যতম।
×