ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২২ জুন ২০১৭

দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রে সুদের হার আগামী মাস থেকে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই দফায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হতে পারে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে একবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখনও সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হয়। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়কালে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ৪০ দশমিক ৫৭ ভাগ বেশি। ওদিকে জুলাই-মার্চ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ গ্রহণ করেছে ৩৭ হাজার ৬৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিল ২৩ হাজার ১৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এই বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করে ৪৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদ্য ঘোষিত আগামী অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে ‘সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই গতিধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে এ খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। এর ফলে সুদ বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যা স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সরকারের বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে সরকারের সম্পদ উদ্বৃত্তের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার রিভিউ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী গত মাসে বলেছেন, আমাদের এখানে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আসলেই বেশি। সাধারণত ব্যাংক আমানতের সুদের হারের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১-২ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে এই ব্যবধান ৪ শতাংশের বেশি। এটা চলতে থাকলে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বেড়ে যাবে। সরকারের ভবিষ্যত ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সে কারণেই আমরা এটাকে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে এই হার দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর বিষয় বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। কারণ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে অবসরভোগী ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ বেশি বিনিয়োগ করে থাকে। তাই এর পেছনে রাজনীতির বিষয়টি আমাদের ভাবতে হচ্ছে। ২০১৫ সালে ১০ মে বাজারে চালু সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে প্রায় দুই ভাগ কমিয়ে করা হয় ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও দেড় শতাংশ কমানো হয়েছে। আগে পাঁচ বছর মেয়াদি এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে মাসে এক হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পাওয়া যেত। ২০১৫ সালে সুদ হার কমানোর পর এখন পাওয়া যাচ্ছে ৯১২ টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র থেকে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত মার্চে সঞ্চয়পত্রে ৬ হাজার ৫৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ আসে। ওই মাসে মূল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ১৯০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। সেই হিসেবে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকায়।
×