ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২২ জুন ২০১৭

মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

ঈদের সময়টাতে যাত্রীদের চাপ বাড়ে। বাড়ে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু সড়কের প্রশস্ততা তো আর বাড়ে না। ছোট সড়ক, অসংখ্য গাড়ির চাপ সামলানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এরপরে হঠাৎ কোন গাড়ি সড়কে বিকল হলো। ব্্িরজের উপর পড়ে রইল। দুটো গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে সড়ক বন্ধ হয়ে গেল। এই সময় গাড়ি উদ্ধারের তৎপরতার প্রকট অভাব চোখে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয় না। উদ্ধার কাজে দেরি হয়। ওদিকে হাজার হাজার গাড়ির লাইন পড়ে যায়। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা, পাশের গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগীতা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ট্র্যাফিক আইন মান্য না করা, রং সাইড দিয়ে ওভার টেকিং করা, জেব্রা ক্রসিং না থাকা, রাস্তা নির্মাণে ক্রটি, মোটা দাগে এগুলো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। চালকদের উপরে চাপ থাকে। বার বার ট্রিপ দিতে হবে। সে কারণে তার গাড়ির গতি হয় বেপরোয়া। একই সঙ্গে চালকরা বিরামহীনভাবে কর্মরত থাকেন। এক ট্র্রিপ দিয়ে একটুখানিও বিশ্র্রাম পান না। নির্ঘুম চালকের গাড়ি চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ। গাড়ি চালক তো মানুষ, তাই নয় কি? তার কি বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। নির্ঘুম চালকের গাড়ি কখনও না কখনও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ওভার টেকিং করা যায় না। তারপরেও ওভার টেকিং করতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এআরআই-এর রিপোর্ট মতে, ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ঘটে এক বা একাধিক গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষজনিত কারণে। এর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। ঈদে যাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি না চলতে পরে সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে অভিযান চালাতে পারে। ঢাকার লোকালবাস, যেগুলোর অবস্থা শোচনীয়। দুঃখের বিষয় ঈদের সময় সেগুলোকেও লং রুটে দেখা যায়। হেলপার হয় ঈদের সময় ড্্রাইভার। লাইন্সেস নেই এমন ড্্রাইভার যারা, ঈদের সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সারা বছরই দেখা যায়, মহাসড়কে হাট বাজার। এইসব হাট বাজার উচ্ছেদ করা খুব দরকার। ট্র্যাফিক কিংবা হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবেই না পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হোক। পাশাপশি সচেতন বলে আমরা যারা নিজেদের দাবি করি। তাদেরকে সত্যিকার অর্থে সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে ওঠা বন্ধ করতে হবে। যেখানে সেখানে প্রাইভেড গাড়ি পার্কিং নিশ্চয়ই সচেতনতার প্রমাণ নয়। প্রতিটা প্রাণ মূল্যবান। আর কোন প্রাণ যেন মহাসড়কে ঝরে না পড়ে। কোন মা, বোন, ভাই যেন স্বজনহারা না হন। ঈদ কারও জন্য যেন না হয় দুঃখময়। এটাই মনে প্রাণে প্রত্যাশা করি। আর এ জন্যই দরকার সরকারী কার্যকর পদক্ষেপ। বেসরকারী বাস মালিকদের সহযোগিতা থাকতে হবে। তারা যেন অতিরিক্ত মুনফার নামে কারও জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দেন। এরই সঙ্গে দরকার যাত্রীদের সচেতনতা। ঈদ এলে পরে নয়। আগেই থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মহাসড়কে আর একটা প্রাণ ও অকালে না হারায়। বনানী, ঢাকা থেকে
×