ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শতাব্দী জুবায়ের

যেন শেষ ফেরা না হয়

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২২ জুন ২০১৭

যেন শেষ ফেরা না হয়

আকাশছোঁয়া আনন্দ নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। আর এই অনাবিল আনন্দ প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করতে শহর থেকে নগরবাসী ছুটছেন দেশের বাড়িতে। ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামের মিষ্টি মধুর শ্বাস নিতে কার না ভালো লাগে। তাইতো ঈদ উদযাপনের জন্য শেকড়ের টানে বাড়ি ফিরছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। ইট-পাথরের তৈরি ঢাকা শহরে বসবাসরত লোকজন দীর্ঘদিন পর মিলিত হবেন গ্রামে থাকা পরিবারের সাথে। আর তাই নারীর টানে বাড়ির পানে ফেরার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সড়ক, নৌ, রেল এই তিন পথেই মানুষের যাতায়াত বেশী। লঞ্চ-স্টীমার, বাস, ট্রেনে ভোগান্তি হওয়া সত্ত্বেও সবাই চান প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। ঈদের সময় প্রতিদিন রাজধানী থেকে ঢাকার বাইরে যান প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। আর এই বাড়তি যাত্রীর জন্য অতিরিক্ত চাপ নিতে হয় পরিবহন সেক্টরকে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে অনেকেই যাতায়াত করেন। যার কারণে রাস্তায় যানজটের পরিমান আরও বেড়ে যায়। বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তির একটি কারণ রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো। যে কোন একটি গাড়ি রাস্তায় অকেজো বা বিকল হলেই ঘটবে সর্বনাশ। পাঁচ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকলে মাইলের পর মাইল যানজট সৃষ্টি হয়ে যাবে অল্পতেই। তাই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নাস্তায় নামানো যাবে না। তাছাড়া রাস্তার যা বেহালদশা। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে যাতে লাখ লাখ মানুষের বাড়ি ফেরার ভোগান্তি লাঘব হয়। বাড়ি ফেরার জন্য বাস অথবা ট্রেনের টিকেট পাওয়াÑ এ যেন রীতিমতো সোনার হরিণ। তবে চার পাঁচগুণ বেশী টাকা দিলে ঠিকই টিকেট পাওয়া যায়। যাত্রী সাধারণের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ, টিকেট কালোবাজারী চক্রের অযৌক্তিক বাড়তি টাকা আদায় কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হতে হবে আরও সোচ্চার। মাঝে মাঝে এই বাহিনী কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে আসে। টিকেট কালোবাজারির ক্ষেত্রে বলতে পারি, ট্রেনে যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের সহযোগিতা ছাড়া কোন ভাবেই কালোবাজারী করা সম্ভব না। কারণ টিকেট বিক্রি প্রক্রিয়া অনলাইন ভিত্তিক। অন্যদের হাত দেয়ার সুযোগ নেই। তাই ট্রেনের কর্মকতাদের বলবো আপনাদের কর্তব্যনিষ্ঠা, একটু সততা, একটু ছাড় সাধারণ মানুষের ঈদ ভ্রমণটা করতে পারে আনন্দময় ও সুখের। নৌ, সড়ক ও রেল সংস্থা, সকল মালিক সমিতি, সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকলের সর্তক পদক্ষেপ এবং জনকল্যাণমুখী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত ও দিক নির্দেশনার মাধমে সকল সমস্যা থেকে উত্তোরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। দায়িত্ববোধ, আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলেই ভোগান্তির সমাধান পাওয়া সম্ভব। আর যাতায়াত শতভাগ নির্বিঘেœ করার জন্য সরকার, পরিবহণ সেক্টর ও সাধারণ জনগণকে আরও সর্তক হতে হবে। যাত্রীদের চাপ নিতে গিয়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় পরিবহণ মালিকেরা অতিরিক্ত যাত্রি বহন করেন। যার ফলে পরিবহণ ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘটে দুর্ঘটনা। আপনার একটু সচেতনতাই পারে এই দুর্ঘটনা এড়াতে। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের চাপ অনেক বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে এ ফেরা যেন শেষ ফেরা না হয়। জমাট বাঁধা রক্ত আর স্বজনের চোখের নোনাজলে যেন ভিজে না যায় রাজপথ। আরও মনে রাখতে হবে একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না বয়ে যেন না আনে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×