যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। সন্ত্রাসের বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তাতে জনজীবন আতঙ্কিত ও সংশয়ের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে বাধ্য। দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র বা বৃহত্তর যে পর্যায়েই সন্ত্রাস পরিচালিত হোক না কেন, তার চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকেই। মানুষ জীবন পায় একবারের জন্যই, সেই জীবন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে অকালে ঝরে যাওয়ার মতো নির্মমতা সহ্যাতীত। সন্ত্রাসবাদ মূলত মানবতার প্রধান শত্রু। সন্ত্রাসী হামলায় বার বার রক্তাক্ত হচ্ছে যুক্তরাজ্য। এতে স্পষ্ট হয় যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসীদের এক বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যই নয়, তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ মহাদেশ বলে পরিচিত ইউরোপ এখন সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে অনেক এশীয় দেশও। সন্ত্রাসী হামলা যারাই সংঘটিত করে থাকুক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারা সবার অভিন্ন শত্রু। কিন্তু এই সন্ত্রাসবাদের স্রষ্টারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, যে ফ্রাঙ্কেস্টাইন তারা তৈরি করেছেন তাই আজ বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা পদক্ষেপও জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব যেসব অভিযান চালিয়েছে তারই পরিণতি বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের উত্থান। অনেক পশ্চিমা নেতাও আজ তাদের এ ভুল স্বীকার করছেন। জঙ্গী বা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যতই শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, তাদের হীন কর্মকা- তথাপি থেমে থাকছে না। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও সন্ত্রাসীরা অবলীলায় হামলা চালিয়ে, এমনকি আত্মঘাতী হয়ে মানুষ হত্যা করছে। সন্ত্রাসবাদ ব্রিটেনের জন্যও বড় হুমকি হয়ে আসে। ফ্রান্সের মতো ব্রিটেনেও গাড়ি হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করছে অবলীলায়। এদের রুখবে তেমন সাধ্য বুঝি কারও নেই বলে প্রতীয়মান হয়। গত রবিবার ব্রিটেনের স্থানীয় সময় মধ্যরাতে একটি প্রসিদ্ধ মসজিদের সামনে মুসল্লি ও পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে ব্রিটেনে চারটি সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে গত চার জুন লন্ডন ব্রিজ এলাকায় ভিড়ের মধ্যে ভ্যান চালিয়ে এবং ছুরি নিয়ে হামলা চালালে ৮ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়। এর আগে গত ২২ মে ম্যানচেস্টারে একটি ইনডোর স্টেডিয়ামে কনসার্টে বিস্ফোরণে শিশুসহ ২২ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হয়। বিস্ফোরণ পরবর্তী দৃশ্য ছিল বিভীষিকাময়। এর পূর্বে গত ২২ মার্চ সংসদ ভবনের সামনের ব্রিজে পথচারীদের ভিড়ে গাড়ি উঠিয়ে দিলে পাঁচজন নিহত হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সন্ত্রাসী এক পুলিশকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। গত বছর ব্রিটেনে পাতাল রেলে বোমা হামলা হয়েছে। এবারের হামলার সঙ্গে আগের তিন হামলার বড় বৈপরীত্য হচ্ছে। আগেরগুলোর সন্দেহভাজন হামলাকারীরা ছিল মুসলিম। আর এবারের ঘটনায় মুসলিমরাই আক্রান্ত এবং আক্রমণকারী শ্বেতাঙ্গ। এ কারণে এই ঘটনাকে ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’ বা ‘হেইট ক্রাইম’ বলে মনে করছেন অনেকে। নানা ধর্ম ও জাতের বসবাস ব্রিটেনে ধর্মীয় বিদ্বেষ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলও বলেছে, ইসলাম ফোবিয়া তথা ভীতির একটি হিংসাত্মক প্রকাশ এই ঘটনা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, ঘৃণা ও ত্রাস ছড়িয়ে ব্রিটিশদের আলাদা করতে চায়, বিভক্তি আনতে চায় যারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে ব্রিটেন নিরাপত্তাহীন অবস্থায় পৌঁছেছে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হলে জনসচেনতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলেই জঙ্গী রোধ সম্ভব হচ্ছে। ব্রিটেনকেও ভাবতে হবে। কিভাবে সন্ত্রাসী নিরোধ করা যায়। নতুবা এর মাত্রা বাড়বে।