ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

শুধু রাজধানীর ফুটপাথ নয়, ফুটওভার ব্রিজেও বসেছে দোকান

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২২ জুন ২০১৭

শুধু রাজধানীর ফুটপাথ নয়, ফুটওভার ব্রিজেও বসেছে দোকান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাঁকজমক আলোকসজ্জা নেই। নেই বাহারি পুরস্কার কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। তারপরও ক্রেতার অভাব নেই ফুটপাথে। কখনও বৃষ্টি, কখনও বা প্রখর রোদ থেমে নেই বেচাকেনা। রকমারি পোশাক, জুতা, টুপি, আতর থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যার পসরা সাজিয়ে বসেনি ফুটপাথের দোকানিরা। বাদ পড়েনি ঘর সাজানোর পণ্য, বাচ্চাদের খেলনা, পারফিউম, রূপসজ্জার সামগ্রী। পণ্য বিক্রিতে হকারদের হাঁকডাকে ক্রেতার ভিড় এখন চোখে পড়ার মতো। শুধু সড়কের দুই পাশই নয়, রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজের ওপরেও বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। পথচারীদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব হাটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষ। তবে মধ্যম আয়ের ক্রেতারাও তাদের পছন্দসই পোশাকটি কিনতে ভিড় করেন ফুটপাথে। রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুর-১০, গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার ফুটপাথ, নগরভবন এলাকার ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটার সবই পাওয়া যাচ্ছে এসব ফুটপাথে। হকারদের কেউ কেউ ১শ’, ২শ’, ৪শ’, আবার কেউ ‘দেইখ্যা লন দুইশ’, ‘বাইছ্যা লন দুইশ’, ‘এক দাম দুইশ’, ‘যেইটা নেবেন দুইশ’ টাকা এমন সুর তুলে খরিদ্দার ডাকছেন। হাল ফ্যাশনের থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট থেকে আধুনিক ডিজাইনের জুতা, বিদেশী ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ও সুগন্ধি সামগ্রী সবই পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথ মার্কেটে। হাতের নাগালে সবকিছু থাকায় বিকিকিনিও হচ্ছে দেদার। দামও নাগালের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছোটদের পোশাক। বড়দের রেডিমেড শার্ট পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩শ’ থেকে করে ৫শ’ টাকায়। বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের শার্টগুলো ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফার্মগেটের ফুটপাথ দোকানের বিক্রয়কর্মী রবিউল। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বাস করেন শফিকুল ইসলাম। কাজ করেন মতিঝিলের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। বুধবার সকালে বেরিয়ে পড়েন সন্তানদের নিয়ে ঈদের পোশাক কিনতে। তিনি জানান, একদিনেই অন্তত পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটার ইচ্ছে তার। মা-বাবার জন্য আর একদিন মার্কেটে আসবেন। যাদের আয় একটু কম তারাই আসছেন নগরীর ফুটপাথে কেনাকাটা করতে। রাজধানীর বিলাসবহুল শপিংমলগুলো যখন উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের ভিড়ে সরগরম, তখন ফুটপাথের দোকানগুলো নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠছে। বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরতে তেমন বেচাকেনা না হলেও এখন ভাল হচ্ছে ব্যবসা। তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসা। রাজধানী মতিঝিলের ফুটপাথে মেয়েদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন সেলিম হোসেন। তিনি জানান, তার দোকানে অনেক ধরনের দেশী-বিদেশী থ্রি-পিস রয়েছে। এসব থ্রি-পিসের দাম ৯০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের টপস ও ফ্রক। এ বছর ঘেরওয়ালা লম্বা পোশাকের চাহিদা বেশি। পোশাক ছাড়াও ফুটপাথের এসব দোকানে নিত্য ব্যবহার্য প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, লুঙ্গি, টুপি, সুগন্ধি থেকে শুরু করে মেয়েদের শাড়ি, ঘড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, রেডিমেড কামিজ, টপস, টাইটস, গজ কাপড়, বিভিন্ন ধরনের অর্নামেন্টস, কসমেটিকস, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, বড়-ছোট সকলের জুতা, স্যান্ডেল, চশমাসহ সংসারের বাসন- কোসনও থাকে এখানে। ফলে অনেকে ঈদ উপলক্ষে সংসারের জন্য নতুন গ্লাস সেট, প্লেট, টিফিন বক্স, শো-পিসও কিনে নেন এসব দোকান থেকে। নিউমার্কেটের সামনে ফুটপাথের একটি দোকানে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছিলেন এ বি এম হানিফ। তিনি জানালেন, বড় শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই এখান থেকেই ঈদের কেনাকাটা করি। এছাড়া এখানে কম দামে পছন্দের জিনিসও পাওয়া যায়। আর এসব জিনিসের মানও ভাল। আমি দেখেছি অনেক সময় একই জিনিস নামীদামী দোকানে কয়েকগুণ মূল্য দিয়ে বিক্রি করে। তবে ফুটপাথের পণ্যের দাম নিয়ে ভিন্নমতও আছে কারও কারও। পেশায় গাড়িচালক আবু আলী বলেন, কিছুদিন আগেও যেসব টি-শার্ট ২শ’ টাকায় কিনেছি, এখন তার দাম রাখা হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ টাকা। চাঁদনী চক মার্কেটের সামনে গজ কাপড় কিনতে আসা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হনুফা আক্তার জানান, ভেতরের দোকানগুলোতে দাম বেশি। তাই বাইরের দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা করছি। তবে এখানেও দাম বেড়ে চলেছে। ফুটপাথের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদ উপলক্ষে গার্মেন্টসে তৈরি নানা রঙের কাপড়ও বিক্রয় হচ্ছে ভাল। প্রতিটি প্যান্ট পিসের দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। তবে খুব ভাল মানের কাপড় নিতে চাইলে দাম কিছুটা বেশি পড়বে। সে ক্ষেত্রে ৪৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে একেকটি প্যান্ট পিস। বিক্রেতারা জানান, মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, জিন্স প্যান্ট ৫৫০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকায়, টি-শার্ট ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৫৫০ টাকা থেকে হাজার/১২০০ টাকা, শাড়ি ৫৫০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকা, বাচ্চাদের থ্রি-কোয়াটার জিন্স প্যান্ট ৩৫০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছেলেমেয়ে ও শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। জামা-কাপড়ের সঙ্গে ফুটপাথে পাওয়া যাচ্ছে ছোট-বড় সবার জন্য জুতাও। ছেলেদের প্রতি জোড়া জুতার দাম পড়বে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। দামী ব্র্যান্ডের আদলে ডিজাইন করা সু পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে। দেখতে সুন্দর জুতাগুলো তৈরি করা হয় রেক্সিন ও চামড়ার মিশ্রণে। পাওয়া যায় মেয়েদের জুতাও। মাত্র ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যেই মিলবে জুতা-সিøপার। এগুলোও তৈরি করা হয় রেক্সিন ও চামড়ার মিশ্রণে।
×