ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে আরও বেশি বিনিয়োগের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২২ জুন ২০১৭

বিদ্যুতের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে আরও বেশি বিনিয়োগের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বুধবার রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের সরকারী-বেসরকারী সকল ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন বিদেশী ব্যাংকের নির্বাহীরাও উপস্থিত ছিলেন। যাদিও ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে বিভিন্ন আইনী বাধ্যবাধতা শিথিল করার দাবি জানানো হয়েছে এ অনুষ্ঠানে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে আইনের মধ্যে থেকেই যতদূর সম্ভব বিনিয়োগ করতে হবে, আইন শিথিল করে বিশেষ সুবিধা দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। এখন পর্যন্ত বিদ্যুত খাতে বড় বিনিয়োগ দেশের বাইরের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানই করে আসছে। সুদের হার কম হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগের প্রতি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশী। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর তরফ থেকে অনেকদিন থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছে দেশে বিনিয়োগের ভাল জায়গা নেই। যেহেতু বিদ্যুতের ক্রেতা এবং বিক্রেতা সরকার তাই এখানে বিনিয়োগ তুলনামূলক বিচারে ঝুকিমুক্ত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ বলেই দেশীয় ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিনিয়োগ করে উঠতে পারে না। এমন নানামুখী বাস্তবতার মধ্যেই বুধবার বিদ্যুত বিভাগ এ আয়োজন করল। এতে দেশের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ২০০ প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ব্যাংক ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে আরও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ সৃজন করেছে। আপনাদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, বড় ধরনের স্কোপ তৈরি হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সরকার বিদ্যুত উৎপাদনে ফাস্ট ট্র্যাক কিছু প্রকল্প সূচনা করতে যাচ্ছে। এসব প্রকল্পে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ করা উচিত। প্রতিমন্ত্রী এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ইনোভেশন ল্যাব স্থাপনের গুরুত্বারোপ করে বলেন আমরা ছাত্রছাত্রীদের ইনটার্নশিপ করাচ্ছি যা খুবই ফলপ্রসূ। আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। সিএসআর প্রকল্পের আওতায় অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিয়োগ করতে পারে। বৈঠকে জানানো হয় বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি বার্ষিক ১০ দশমিক ২০ ভাগ। গত ০৭ (সাত) বছরে আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। বর্তমানে চলমান ১১৬টি প্রকল্পে ২৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাছাড়াও অননুমোদিত ১৪টি প্রকল্পে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এছাড়া ৫৬টি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পিডিপিপি প্রেরণ করা হয়েছে; যার জন্য ৩২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন এবং প্রকল্প সাহায্য লাগবে ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিনিয়োগের জন্য ২০৪১ সাল নাগাদ ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এ বিশাল অর্থ সরকারের পাশাপাশি জি টু জি, ইসিএ, ডেফার্ড পেমেন্ট ও স্থানীয় ব্যাংক হতে নিতে হবে। স্থানীয় ব্যাংকগুলো বিদ্যুত খাতে বিশাল ব্যবসা পাবে। আমরা তাদের বিনিয়োগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করব। এসডিজি মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রি-পেমেন্ট মিটার এ ৫টি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সিএসআরের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে দেশ লাভবান হবে। তিনি ব্যাংকসমূহকে নিজস্ব অর্থ আরও সুষমভাবে ব্যবহারের অনুরোধ জানান। ব্যাংকিং বিভাগের সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন সরকারের স্কিমগুলো আকর্ষণীয় কিন্তু বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে হয় দীর্ঘমেয়াদী এবং বিপুল পরিমাণ যা ব্যাংকগুলো করতে অনীহা প্রকাশ করে। তবে ব্যাংকিং বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দ্রুততার সঙ্গে করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপুটি গবর্নর এস কে সুর বলেন ইসলামিক বিনিয়োগ বন্ড বা কর্পোরেট বন্ড ইস্যু করে বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত আইনের ভেতরে থেকে দ্রুত সহযোগিতা করবে। এ সময় দেশের প্রায় সকল ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানগণ ইআরডির প্রতিনিধি, অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় বিদ্যুত খাতে দ্রুত বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সভায় সকল বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জালাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়।
×