ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিটিসিএলের আড়াই শ’ কিমি কেবল তছনছ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ জুন ২০১৭

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিটিসিএলের আড়াই শ’ কিমি কেবল তছনছ

ফিরোজ মান্না ॥ ভারিবর্ষণ ও পাহাড় ধসে তিন পাবর্ত্য জেলায় বিটিসিএলের ‘ইউনিয়ন পরিষদ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক প্রকল্পের’ আড়াই শ’ কিলোমিটার কেবল তছনছ হয়ে গেছে। রাঙ্গামাটিতে এক শ’ কিলোমিটারের বেশি কেবল ছিন্নভিন্ন হয়েছে। বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে দেড় শ’ কিলোমিটার কেবল ধ্বংস হয়েছে। এতে বিটিসিএল দেড় শ’ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এছাড়া জেলা উপজেলার সঙ্গে এখনও টেলিযোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ৭০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে নিয়ে এসেছিল বিটিসিএল। কিন্তু তিন পাবর্ত্য জেলায় কেবল ক্ষতির কারণে প্রকল্প ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। বিটিসিএলের মেম্বার (প্রশাসন) ও প্রকল্পের পিডি মাঈন উদ্দিন বলেছেন, জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। জেলা উপজেলার সংযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সংযোগ স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে হাতে নেয়া ১০০৫ ইউনিয়ন অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ দেয়ার প্রকল্প হাতে নেয় বিটিসিএল। দেশের গ্রাম পর্যায়ে নির্ভরযোগ্য ও সহজভাবে তথ্য যোগাযোগের জন্য সাশ্রয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী নেটওয়ার্ক স্থাপন করা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহক ইন্টারনেট খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। দুর্গম এলাকায় ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্যও বিটিসিএল আরও একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। একটি বিটিএস টাওয়ারের (বেইজ স্টেশন) মাধ্যমে ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে বসবাসরত জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে। এ ক্ষেত্রে বসতি অথবা বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাসরত মানুষের নেটওয়ার্ক কভারেজের আওতায় আনতে টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যান্ডন্ডউইথ একটি স্থায়ী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা সহজ। এটি অনেকটা মোবাইল নেটওয়ার্কের মতোই। ওয়ারলেজ ইন্টারনেট সহজে বিচ্ছিন্ন হয় না। ১২টি উপজেলায় এ মুহূর্তে ভৌগোলিক কারণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে না। এ উপজেলাগুলো হচ্ছেÑ ভোলা সদর, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বরিশালের মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ এবং হিজলা এলাকা। এ জন্য দুর্গম এলাকায় ওয়ারলেজ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য বিটিসিএল এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। মাটির নিচ দিয়ে কেবল প্রকল্পের কাজ তিন পাবর্ত্য জেলায় শেষ হয়েছে। সম্প্রতি অতিবর্ষণ ও পাহাড় ধসের কারণে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় কেবল ছিঁড়ে গেছে। কোথাও আবার কেবলের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, বিটিসিএল এক হাজার ৫টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বেশকিছু ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জানিয়েছে, ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে এ প্রকল্পটি ভূমিকা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নকেই অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১৩০টি উপজেলার এক হাজার ইউনিয়নে সংযোগ স্থাপন করতে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে শক্তিশালী ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ই-তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিটিসিএল জানিয়েছে, দেশের ‘উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের কাছে তথ্যপ্রযুক্তিকে সহজলভ্য হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০২১ সালের আগেই প্রকল্পের সুবিধা গ্রামের মানুষ পাবেন। দেশের সব ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব নাও হলে বেশিরভাগ ইউনিয়ন এ সুবিধার মধ্যে চলে আসবে। মানসম্মত তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা হবে। ওয়ার্লেস নেটওয়ার্ক ব্যয় বহুল। দেশের আর্থসামাজিক কারণে গ্রামীণ জনগণ ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। আর এ অবস্থার উত্তরণে ফাইবার কেবল স্থাপনের পর ইউনিয়ন পরিষদ তথ্যকেন্দ্রগুলো এ সেবার পরিচালনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
×