ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ জুন ২০১৭

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শব-ই-কদর আজ। মহিমান্বিত রজনী। এ রাতকে পবিত্র কোরান শরীফে হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। পুণ্যময় এ রাতেই নাজিল হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ কোরান শরীফ। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে এই রাত অধিক পুণ্যময়, মহাসম্মানিত এবং বরকতময় হিসেবে পরিগণিত। পবিত্র কোরানে এই একটি রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। প্রতিবছর মাহে রমজানের এই মহিমান্বিত্ব রজনি ‘লাইলাতুল ক্বদর’ মুসলমানদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে বিশ্বের মুসলমানরা রাতব্যাপী ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। প্রতিবছরের ন্যায় মুসলমানদের দ্বারে আবার এসেছে শব-ই-ক্বদর। আজ বৃহস্পতিবার সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে মহিমান্বিত এই রাত তার মর্যাদা নিয়ে বান্দার কাছে হাজির হবে। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে পবিত্র এ রজনির ফজিলত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে সারারাত অতিবাহিত করবেন। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশের সকল মসজিদে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে পবিত্র এই রাত উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বাণীতে তারা পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উপলক্ষে বিশ্বের মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। ইসলামী প-িতদের মতে, মুসলমানদের কাছে শব-ই-ক্বদর এমন মহিমান্বিত বরকতময় এবং বৈশিষ্ট্যম-িত এ জন্য যে, এ রজনিতে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ ‘আল-কোরান’ অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র গ্রন্থ কোরানে আল্লাহ্ ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরান) অবতীর্ণ করেছি ক্বদরের রাতে। আর ক্বদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জান? ক্বদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তি বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত (সূরা আল-ক্বদর, আয়াত ১-৫)। ক্বদরের রাতের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এ রাতের অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহতা’আলা পবিত্র কোরানের অন্যত্র ঘোষণা করেছেন, “হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরান) এক মুবারকময় রজনিতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয় (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪)।” ইসলাম ধর্ম মতে শব-ই-ক্বদরের রাতে ফেরেশতারা ও তাদের নেতা জিব্রাইল (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণ করে উপাসনারত মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, শব-ই-ক্বদরে হজরত জিব্রাইল (আঃ) ফেরেশতাদের বিরাট একটি দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন (মাযহারি)। লাইলাতুল ক্বদরে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইসলামী প-িতদের মতে, এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, সব কিছুর পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাদেরকে লিখে দেয়া হয়। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে শব-ই-ক্বদরের রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরানের সূরা ক্বদরে উল্লেখ আছে, হাজার মাস ইবাদতে যে পুণ্যলাভ হয়, ক্বদরের এক রাতের উপাসনা তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল ক্বদরের রাতে সৎ এবং ধার্মিক মুসলমানদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, লাইলাতুল ক্বদরে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন (বুখারি)। তবে সাধারণভাবে ২৬ রমজান দিবাগত রাতে শব-ই-ক্বদর পালন করা হয়ে থাকলেও ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোন বিজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই লাইলাতুল ক্বদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, মুহম্মদ (সাঃ) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শব-ই-ক্বদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)। আরেকটি হাদিসে তিনি উল্লেখ করেছেন মাহে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে তোমরা শব-ই-ক্বদর সন্ধান করো (সহীহ বুখারি)। কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী মহিমান্বিত এ রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ইসলামী প-িতদের মতে, লাইলাতুল ক্বদর শেষ নবী হযরত মুহম্মদের (সাঃ) উম্মতদের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও নেয়ামত। আর কোন নবীর উম্মতকে এ ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগের যুগের উম্মতরা অনেক আয়ু পেতেন। সে জন্য তারা অনেকদিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় শেষ নবীর উম্মতদের আয়ু নিতান্তই কম। এজন্য আল্লাহতা’য়ালা তাঁর বিশেষ দয়ায় মহানবী (সাঃ)-এর উম্মতকে মহিমান্বিত এ রাত দান করেছেন। যারা এ রাতে ইবাদত করে কাটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। মহাপুণ্যময় এ রাতে বিশ্বের মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন। তবে এ রাতে কেউ নির্দিষ্ট কোন ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, পবিত্র কোরান তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যে কোন ইবাদত করলে আল্লাহ্র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আজ রাতে লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। তারাবিহ নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শব-ই-ক্বদরের ফজিলত ও করণীয় শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ মাহফিলের পর লাইলাতুল ক্বদর উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ মাহফিল ও মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য মসজিদসহ সারাদেশের সব মসজিদেই লাইলাতুল ক্বদর উপলক্ষে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
×