ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা খুন, লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২২ জুন ২০১৭

রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা খুন, লাশ উদ্ধার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের (৫০) গলায় কাপড় পেঁচানো লাশ উদ্ধার করেছে রাজধানীর রূপনগর থানা পুলিশ। বুধবার রাজধানীর রূপনগর থানার মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার লাশ। ওই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হাইওয়ে পুলিশের সাভার সার্কেলে কর্মরত ছিলেন। বুধবার বেলা প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধের বোটক্লাব এলাকার রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় তার লাশ। তার লাশ উদ্ধারের ঘটনার খবর পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাব, পিবিআইসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে রূপনগর থানা পুলিশ। রূপনগর পুলিশ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম বলেছেন, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে (মিজানুর রহমান তালুকদারকে)। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যার পর বেড়িবাঁধ এলাকায় তার লাশ ফেলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার গলায় কাপড় দিয়ে পেঁচানো ছিল। মৃতদেহে একটি চেক শার্ট ছিল। প্যান্টটি ছিল পুলিশের ইউনিফর্ম। সঙ্গে ব্যাগে তার ব্যক্তিগত গাড়ির চাবিও পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা এখানে কিভাবে আসলেন বা কারা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সব বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রূপনগর পুলিশ জানান, বুধবার সকালে বেড়িবাঁধের বোটক্লাব এলাকায় রাস্তার পাশে বিরুলিয়া ব্রিজের পাশ থেকে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ তার লাশের সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তার পরিচয় উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। নিহত মিজানুর রহমান ভোর পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। তার নামে অফিসিয়াল কোন গাড়ি ইস্যু করা ছিল না। এ কারণে তিনি ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার নিয়ে অফিসে যেতেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাইভেট কারটি তার বাড়ির গ্যারেজেই রয়েছে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে পুলিশের ইউনিফর্মেও শার্ট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি অফিসে গিয়ে ইউনিফর্মের শার্ট পরেন। কিন্তু গাড়ি ছাড়া তিনি কেন বের হলেন তার কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার গাজীপুরের টঙ্গিতে হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি বৈঠক ছিল। সেই সভা শেষ করে রাতে উত্তরার বাসায় ফেরেন মিজানুর রহমান তালুকদার। বুধবার ভোরে সেহেরি খাওয়ার পর ৫টার দিকে সাধারণ পোশাকেই বাসা থেকে কর্মস্থল সাভারের উদ্দেশে রওনা হন সহকারী সুপার। সে সময় তার সঙ্গে কোন দেহরক্ষী বা সরকারী গাড়ি ছিল না। ঈদ উপলক্ষে সড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করতে আশুলিয়ায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সেখানে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা। সেসব তদারকি করতেই ভোরবেলায় বাসা থেকে বের হন মিজানুর রহমান। সকালের দিকে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। রূপনগর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেন, এএসপি মিজানুর রহমানের বাসা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব পায়ে হেঁটে প্রায় ৪০ মিনিটের পথ। আর মোটরসাইকেলে গেলে ১৫-২০ মিনিট লাগে। তিনি যে বাসা থেকে গাড়ি ছাড়াই বের হয়েছিলেন, সে বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোর ৬টার আগেই ঘটনা ঘটেছে। তবে তাকে সেখানেই হত্যা করা হয়েছে, না কি অন্য কোথাও হত্যার পর লাশ ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন কি না, নাকি এই হত্যাকা-ের পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কি না- সেসব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত মিজানের পরিবারের সদস্যরা জানান, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল এলাকার আলিভুখা গ্রামে। ঢাকার উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন তিনি। ১৯৮৯ সালে উপ-পরিদর্শক হিসেবে পুলিশে যোগদান করা মিজানুর রহমান বছর তিনেক আগে এএসপি হিসেবে পদোন্নতি পান। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিজানুর রহমানের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার বড় মেয়ে সুমাইয়া উত্তরার একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। আর ছোট ছেলে মুশফিক প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। নিহত মিজানুর রহমানের ভাগ্নে শামীম শেখ গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা বুঝতে পারছেন না কে বা কারা তার খালুকে হত্যা করেছে। তার খালুর সঙ্গে কারও কোন শত্রুতা ছিল কিনা তা তারা বলতে পারছেন না। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মিজানুর রহমানের লাশ পাওয়ার পর তার স্ত্রী বা সন্তানসহ তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে। মিজানুর রহমান হাইওয়ে পুলিশ সাভার এলাকার দায়িত্বে ছিলেন। তার বাসা উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে। বুধবার সকাল ৬টায় ডিউটিতে বের হন তিনি। এরপর আর যোগাযোগ ছিল না বাসার সঙ্গে। হাইওয়ে দিয়ে একটা বাস যাওয়ার সময় মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। এরপর রূপনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল গিয়ে আলামত সংগ্রহ করেছে।
×